নিজস্ব সংবাদদাতা, দুর্গাপুরঃ- গতকাল সকালে দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানায় ঘটে গিয়েছে এক মর্মান্তিক দুর্ঘটনা। এই দুর্ঘটনার ফলে প্রাণ গিয়েছে এক ঠিকা শ্রমিকের ও অন্য তিন ঠিকা শ্রমিক এখনো আশঙ্কাজনক অবস্থায় দুর্গাপুরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। সূত্র মারফত জানা গেছে তাদের অবস্থা এখনও সংকটজনক। দুর্ঘটনায় মৃত পল্টু বাউরির জ্বলন্ত দেহশেষ দেখে ক্ষিপ্ত হয়ে পড়েন উপস্থিত ইস্পাতকর্মীরা। ইস্পাত কর্মীদের একাংশের অভিযোগ গলিত লোহা পরিবহনকারী হট ল্যাডেলে লক না লাগানোর ফলেই এই দুর্ঘটনা ঘটেছে। একটি সূত্র মারফত কারখানার ভেতরে যে হট ল্যাডেল গুলিতে করে গলিত লোহা নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল এবং যে হট ল্যাডেলটি দুর্ঘটনাগ্রস্ত হয়েছিল সেই হট ল্যাডেলটির একটি ভিডিও ইতিমধ্যেই ভাইরাল হয়েছে সামাজিক মাধ্যমে। সেই ভিডিও দেখে পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে যে অন্য হট ল্যাডেল গুলিতে লক লাগানো থাকলেও দুর্ঘটনাগ্রস্ত ল্যাডেলটির লক ছিল না।
এখন প্রশ্ন কার দায়িত্বে ছিল এই লক লাগানোর? কেনইবা তিনি বা তারা তার সেই কাজ থেকে বিরত থাকলেন? মর্মান্তিক মৃত্যুর স্বীকার হতে হল এক ঠিকা শ্রমিককে কার দোষে? এমনই হাজারও প্রশ্ন নিয়ে আজ সকাল থেকে দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানার শ্রমিক সংগঠন হিন্দুস্তান স্টিল এমপ্লয়েজ ইউনিয়নের কর্মীবৃন্দরা দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানার অর্জুন স্ট্যাচুর সামনে ও দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানার ব্লাস্ট ফার্নেস সিজিএম অফিসের সামনে বিক্ষোভ জমায়েত করেন। এদিন হিন্দুস্তান স্টিল এমপ্লয়েজ ইউনিয়নের কর্মীরা হাতে ফ্লেক্স নিয়ে “বন্ধ করো কারখানায় এই মৃত্যুর মিছিল” ও শ্লোগান-সাউটিং করে বিক্ষোভ দেখান।
গতকাল দুর্গাপুর ইস্পাত কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে একটি বিবৃতি জারি করে বলা হয়েছে, “এই দুর্ঘটনার কারণ সন্ধানে একটি হাই লেভেল ইনকয়ারি কমিটি তৈরি করা হয়েছে। দুর্গাপুর ইস্পাত কর্তৃপক্ষ এই দুর্ঘটনায় নিহত ও আহত ব্যক্তির পরিবারবর্গের কাছে সমবেদনা জানাচ্ছে। এই দুঃখের সময়ে দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানা কর্তৃপক্ষ তাদের পাশে আছে ও তাদেরকে সব রকম সহায়তা করবে।”
কিন্তু প্রশ্ন হল বারবারই দুর্ঘটনার সম্মুখীন হতে হচ্ছে ঠিকা শ্রমিকদের কেন? এদিন দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানার একাধিক শ্রমিক সংগঠনের নেতা কর্মীরা অভিযোগ তোলেন দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানায় সেফটি ম্যানেজমেন্ট তলানিতে ঠেকেছে, ফলে প্রায় দিনই ঘটছে দুর্ঘটনা, প্রাণ যাচ্ছে সাধারণ ঠিকা শ্রমিকদের। অবিলম্বে ইস্পাত কারখানার ভেতরে সেফটি ম্যানেজমেন্ট ঢেলে সাজাতে হবে অন্যথায় বৃহত্তর আন্দোলনের পথে হাঁটবেন তারা বলে জানিয়েছেন।