নিজস্ব সংবাদদাতা, দুর্গাপুরঃ- দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানার দু’নম্বর ব্লাস্ট ফার্নেস দুর্ঘটনায় গুরুতর জখম দুই ঠিকা শ্রমিক এখন দুর্গাপুরের একটি বেসরকারি হাসপাতালের ভেন্টিলেশনে চিকিৎসাধীন। তাদের অবস্থা সংকটজনক বলে জানা গিয়েছে। একটি সূত্র মাধ্যমে জানা গেছে আজ সকালের দিকে দুর্গাপুরের বেসরকারি হাসপাতালে মৃত্যু হয়েছে ভেন্টিলেশনে থাকা আরেক অস্থায়ী ঠিকা শ্রমিকের। দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানার উদ্যোগে ইতিমধ্যেই স্টিল অথরিটি অফ ইন্ডিয়া লিমিটেডের রাচি শাখা থেকে এক উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন সেফটি ম্যানেজমেন্ট দল দুর্ঘটনা স্থল পরিদর্শনে এসেছেন। গতকাল দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানার পক্ষ থেকে এম আর ডি স্ল্যগ ব্যাংক অপারেশন এবং ট্রাফিক বিভাগের দুই ‘হেড অফ দা ডিপার্টমেন্ট’ পদমর্যাদার আধিকারিককে ইতিমধ্যেই সাসপেন্ড করা হয়েছে বলে সূত্র মারফত জানা গেছে। দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানার সবকটি ট্রেড ইউনিয়ন গুলির উদ্যোগে দুর্ঘটনাগ্রস্থ ঠিকা শ্রমিকদের পাশে থাকার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। গতকাল বেসরকারি হাসপাতলে চিকিৎসাধীন আহত ঠিকা শ্রমিকদের দেখতে যান বি এম এস এর একটি প্রতিনিধি দল।
এরই মধ্যে শিল্পাঞ্চল দুর্গাপুর জুড়ে একটি গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে সবার মুখে। কেন শুধু বারবারই দুর্ঘটনাগ্রস্থ হচ্ছে ঠিকা শ্রমিকরা ? দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানায় শুধু কি ঠিকা শ্রমিক দিয়েই চলে, নাকি সেখানে স্থায়ী কর্মীরাও কাজ করেন। তাহলে কি দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানার সমস্ত ঝুঁকিপূর্ণ কাজই কি টিকা শ্রমিকদের দিয়ে করানো হয়? উঠেছে প্রশ্ন। দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানার শ্রমিক সংগঠনের এক নেতা জানান, “কথাটা শুনতে খারাপ লাগলেও এটাই সত্যি। দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানার স্থায়ী শ্রমিকদের দিয়ে ঝুঁকিপূর্ণ কাজ না করানোর এক প্রবণতা দেখা দিয়েছে ইদানিং। ঝুঁকিপূর্ণ কাজের সমস্ত টেন্ডারি দেওয়া হচ্ছে বেসরকারি কন্টাকটারদের। আর তার ফলেই ঠিকা শ্রমিকদের নিয়োগ করে ওইসব ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করানো হচ্ছে তাদের দিয়ে।” ওই রাজনৈতিক শ্রমিক সংগঠনের নেতার আরো অভিযোগ, “কম বেতন দিয়ে ঠিকা শ্রমিকদের অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করতে একপ্রকার বাধ্য করা হয়। কাজ করার সময় সেফটি ম্যানেজমেন্টের কোন ধার ধরে না কর্তৃপক্ষ। শেষ কয়েক বছরের পরিসংখ্যান দেখলে পরিষ্কার হয়ে যাবে যে দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানার মধ্যে যে কটি দুর্ঘটনা ঘটেছে তাতে বেশির ভাগই মৃত্যু বা গুরুতর ভাবে জখম হয়েছেন ঠিকা শ্রমিকরাই।” এখন প্রশ্ন হল তাহলে কি দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানার স্থায়ী কর্মীরা কোন কাজই করেন না ? দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানা কি শুধুমাত্র ঠিকা শ্রমিক দিয়ে চলে, গুঞ্জন রোটেছে শিল্পাঞ্চলে।
এ বিষয়ে দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানার সিআইটিইউ যুগ্ন সম্পাদক সৌরভ দত্ত বলেন, “দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানায় রেগুলার এমপ্লয়ীর তুলনায় ঠিকা শ্রমিকদের বেশি করে ঝুঁকিপূর্ণ ও পরিশ্রমের কাজ করতে হয় এটা অস্বীকার করলে চলবে না , তবে একথাও ঠিক দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানায় এখনো বহু রেগুলার এমপ্লয়ি আছেন যারা দৈনন্দিন ঝুঁকিপূর্ণ ও পরিশ্রমের কাজ করছেন।”
দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানার তৃণমূল কংগ্রেস শ্রমিক নেতা জয়ন্ত রক্ষিত জানান, “দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানায় এখন স্থায়ী শ্রমিকের সংখ্যা সাড়ে সাত হাজারের কিছু কম বেশি ও ঠিকা শ্রমিকের সংখ্যাও প্রায় তাই। এক কথায় বলতে গেলে প্রায় সমান সমান রয়েছে ঠিকা শ্রমিক ও স্থায়ী শ্রমিকের সংখ্যা দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানায়। তবে একথা পুরোপুরি ঠিক নয় যে সমস্ত রকম ঝুঁকিপূর্ণ ও ভারী পরিশ্রমের কাজ ঠিকা শ্রমিককে দিয়ে করানো হয় ইস্পাত কারখানার ভেতরে। দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানার স্থায়ী শ্রমিকেরা এখনও প্রায় ৩০ শতাংশ ঝুঁকিপূর্ণ ও ভারী পরিশ্রমের কাজ করছেন, বাকি ৭০ শতাংশ ঝুঁকিপূর্ণ ও ভারী পরিশ্রমের কাজ ঠিকা শ্রমিককে দিয়ে করানো হচ্ছে। তবে এখনও পর্যন্ত দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানার অপারেশনাল সিস্টেমটি পুরোটাই স্থায়ী কর্মীরাই নিয়ন্ত্রণ করেন।”
দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানার বিএমএস এর স্টিল ফেডারেশন অফ ইন্ডিয়ার সহ-সভাপতি অরূপ রায় বলেন, “আমাদের কাছে স্থায়ী শ্রমিক ও ঠিকা শ্রমিক বলে কিছু হয় না। আমরা মনে করি সকল রকমের মানুষজন যারা ইস্পাত কারখানার ভেতরে কাজ করছেন তারা সবাই শ্রমিক। এই মর্মে কিছুদিন আগে আমরা নতুন দিল্লিতে একটি কনভেনশনে এ দাবি রেখেছি যে অবিলম্বে ঠিকা শ্রমিকদের রেগুলার এমপ্লয়ির মর্যাদা দিতে হবে। কারণ দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানায় ঠিকা শ্রমিকরা এখন প্রোডাকশনের সঙ্গে সরাসরি জড়িয়ে রয়েছে। অবিলম্বে তাদেরকে রেগুলার এমপ্লয়ি করার পদ্ধতি শুরু করার জন্য আমরা ইস্পাত মন্ত্রকে দাবি জানিয়েছি। যেকোনো ইস্পাত কারখানায় কাজ করা ঝুঁকিপূর্ণ, তাই একথা ঠিক নয় যে শুধুমাত্র ঠিকা শ্রমিকরাই ভারী পরিশ্রমের কাজ ও ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করেন। দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানার সকল অস্থায়ী কর্মী ও স্থায়ী কর্মীরা ভারী পরিশ্রম ও ঝুঁকিপূর্ণ কাজের সাথে যুক্ত।”