সংবাদদাতা, বর্ধমানঃ– শনিবার ওয়েস্ট বেঙ্গল স্টেট ইলেক্ট্রিসিটি ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স অ্যাসোসিয়েশনের সপ্তম বার্ষিক সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত হল বর্ধমান সংস্কৃতি লোক মঞ্চে। অনুষ্ঠানের শুভ সূচনা করেন শহরের রামকৃষ্ণ মিশন আশ্রমের সম্পাদক, স্বামী অজ্ঞেয়ানন্দজী মহারাজ। সুরক্ষার প্রশ্নে বাড়তি গুরুত্ব দিয়ে সম্মেলনের মঞ্চেই গোটা রাজ্যের ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের নিয়ে সেমিনার আয়োজন করে অ্যাসোসিয়েশন। সেফটি সেমিনারে বক্তব্য রাখেন রাজ্য বিদ্যুৎ বন্টন সংস্থার পদস্থ আধিকারিক অ্যাডিশনাল চিফ্ ইঞ্জিনিয়ার পার্থপ্রতিম দত্ত।
এদিনের সভা থেকে বিদ্যুৎ বিভাগের বেসরকারিকরণের বিরোধীতা করা হয়। জনস্বার্থ উপেক্ষা করে বিদ্যুৎ বিভাগের বেসরকারিকরণ কখনোই বিকল্প সমাধানের পথ হতে পারে না বলেই এদিনের সভার আলোচনায় উঠে আসে। পরিষেবা ব্যবস্থার বানিজ্যিকীকরণ বিপজ্জনক হবে এবং বাড়তি মুনাফার জন্য বিদ্যুৎ মহার্ঘ তো হবেই পাশাপাশি সুষ্ঠু পরিষেবা ব্যবস্থাটি ধীরে ধীরে নষ্ট হবে বলেও দাবি করে অ্যাসোসিয়েশন । বেসরকারিকরণের ফলে শুধু কর্মচারীদের ক্ষতি হবে না,সম্পূর্ণ পরিষেবা ব্যবস্থাটি নিরাপত্তা নিশ্চিত করা আরো অসম্ভব হয়ে পড়েবে বলেই মত ইলেক্ট্রিসিটি ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স অ্যাসোসিয়েশনের। সেই সঙ্গে পরিষেবা প্রদানের ক্ষেত্রে দুর্ঘটনার দায় ইঞ্জিনিয়ারদের উপর না চাপিয়ে সচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে বিদ্যুৎ কর্মী ও জনসাধারণের জন্য এই পরিষেবা ব্যবস্থাকে আরও উন্নত করার আহ্বান জানানো হয় এদিনের সভা থেকে। পাশাপাশি সরকারি পরিষেবা ব্যবস্থায় বাড়তি সুরক্ষার প্রশ্নে সংশ্লিষ্ট দফতরের সঙ্গে কর্মীদের দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে বলেও সভায় উপস্থিত সংগঠনের পদাধিকারীরা জানান।
অন্যদিকে এদিনের সভা থেকে সরকারি কর্মী ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের দাবি আদায়ে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন গড়ে তোলারও আহ্বান জানানো হয়। ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের বিভিন্ন দাবি নিয়ে আলোচনা হয় সভায়। ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের ডিগ্রি ইঞ্জিনিয়ারদের ঠিক একধাপ নিচে নিয়োগ করা, শূন্যপদ পূরণে নিয়মিত পরীক্ষা ব্যবস্থার মাধ্যমে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের এস.ই, বা সিনিয়র ম্যানেজার পদে প্রমোশন নিশ্চিত করা ইত্যাদি দাবি গুলি সভায় তোলা হয়। অভিযোগ নিয়োগের সরকারি নির্দেশিকায় বিএসসি অনার্স ইক্যুইভালেন্ট ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার, এই নির্দেশিকা থাকা সত্ত্বেও অন্য সাধারণ কর্মচারীদের সঙ্গে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের তুলনা করে কাজের পরিবেশ নষ্ট ও ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের অমর্যাদা করা হচ্ছে। এছাড়া প্রমোশন না দেওয়ার মতো অন্যায় চুক্তিতে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের স্বাক্ষর করিয়ে তাঁদের দীর্ঘ চাকরি জীবনকে নষ্ট করা হচ্ছে। যার ফলে ব্যক্তিগত ভাবে কর্মচারীদের সুবিচারের আশায় আদালতের দ্বারস্থ হতে হচ্ছে। ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের নেতৃত্ব জাহাঙ্গীর মল্লিক, নিখিলেন্দু মুখার্জি ছাড়াও সর্বভারতীয় সংগঠন, অল ইন্ডিয়া ফেডারেশন অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স -এর রাজ্য শাখা সংগঠনের নেতা মনন সেনশর্মা ও রামকৃষ্ণ দাশও সভামঞ্চে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের উপর গুরুত্ব আরোপ করেন।
সভায় প্রশ্ন ওঠে বিদ্যুৎ উৎপাদন, সংবহন, বন্টন ও ডিপিএল – এই চারটি সংস্থা পশ্চিমবঙ্গ সরকারের একই বিভাগ বিদ্যুৎ দফতরের অধীনে থাকা সত্ত্বেও আজও কেন এদের এক নিয়মের সুত্রে বাঁধা যায়নি। অভিযোগ ডিপিএলের ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়াররা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন। দাবি আদায়ের আন্দোলনে তাদের পাশে দাঁড়ানোর ঘোষণা করা করে অ্যাসোসিয়েশন। অ্যাসোসিয়েশনের সহসভাপতি বিশ্বনাথ চট্টোপাধ্যায় এদিন স্পষ্ট ভাষায় বলেন, “রাজ্যের বিদ্যুৎ উৎপাদন, সংবহন ও বন্টনের নিরবচ্ছিন্ন সরকারি পরিষেবার কাজে অন্যান্য সহকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার বন্ধুদের যেমন দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে। তেমনি দাবি আদায়ের আন্দোলনে সারা দেশের ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের সমর্থন নিয়ে এরাজ্যের ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।”
শংকর হালদার, সুদীপ্ত দাশগুপ্ত, সৌরভ হালদার, উৎপল বিশ্বাস, সুদীপ পাল, প্রিয়ব্রত মন্ডল, অমিয় নন্দী ছাড়াও এদিনের সন্মেলনে সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতাদের মধ্যে সৌরেন দাশগুপ্ত, সুনীল চক্রবর্তি, সৌমিত্র ঘোষ প্রভৃতি নেতৃবৃন্দের উজ্জ্বল উপস্থিতি ছিল উল্লেখযোগ্য। উত্তর ও দক্ষিণ বঙ্গের বিভিন্ন জেলা থেকে অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য প্রতিনিধিরা সভা সম্মেলনে উপস্থিত হয়েছিলেন।
প্রসঙ্গত এই মুহূর্তে পশ্চিমবঙ্গে দুয়ারে সরকার কর্মসূচি চলছে। বিদ্যুৎ বিভাগের ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়াররা নিজেদের কর্মস্থলে উৎপাদন, সংবহন ও বন্টনের কাজ বজায় রেখে এই কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করছেন বলেও সংগঠনের তরফে জানানো হয়।