সঙ্গীতা চ্যাটার্জী (চৌধুরী)ঃ- আমরা অনেক সময় বুঝতে পারি না কে প্রকৃতপক্ষে সাধু আর কে ভন্ড? কে ত্যাগী আর কে ত্যাগী হওয়ার নাটক করছেন? আসলে যার প্রকৃতপক্ষে ঈশ্বর লাভ হয় তাঁর মধ্যে কতগুলি চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য ফুটে ওঠে সেগুলি না জানলে বিভ্রান্ত হওয়া স্বাভাবিক। ঈশ্বর লাভ হলে মানুষের স্বভাবে কী পরিবর্তন আসে বা মানুষের চাল-চলন কেমন পরিবর্তন হয়- এই নিয়ে প্রশ্ন করলে ঠাকুর পরমহংস দেব একখানি উত্তর দিয়েছিলেন, যা তাঁর রামকৃষ্ণ কথামৃততে আছে। সেটি আজকে বলবো।
ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ পরমহংস দেব বলছেন,“ঈশ্বর লাভ হলে পাঁচ বছরের বালকের স্বভাব হয়। ‘বালকের আমি ‘। বালক কোন গুনের বশ নয়। সত্ত্ব রজঃ তমঃ কোনগুণের বশ নয়। দেখ, ছেলে এইমাত্র ঝগড়া মারামারি করলে, আবার তৎক্ষণাৎ তারই গলা ধরে কত ভাব, কত খেলা! রজ গুনের বশ নয়। এই খেলাঘর পাততে কত বন্দোবস্ত, কিছুক্ষন পরেই সব পড়ে রইল, মার কাছে ছুটেছে। হয় তো একখানি সুন্দর কাপড় পরে বেড়াচ্ছে। খানিকক্ষণ পরে কাপড় খুলে পড়ে গেছে। হয় কাপড়ের কথা একেবারে ভুলে গেল নয় বগলদাবা করে বেড়াচ্ছে। “যদি ছেলেটিকে বল, ‘বেশ কাপড়খানি, কার কাপড় রে? ‘সে বলে, ‘আমার কাপড়, আমার বাবা দিয়েছে। ‘যদি বল ‘লক্ষ্মী ছেলে, আমায় কাপড়খানি দাও না। ‘সে বলে, ‘না, আমার কাপড়, আমার বাবা দিয়েছে, না আমি দেবো না। ‘তারপর ভুলিয়ে একটি পুতুল কি একটি বাঁশী যদি হাতে দাও তা হলে পাঁচ টাকা দামের কাপড়খানা তোমায় দিয়ে চলে যাবে। আবার পাঁচ বছরের ছেলের সত্ত্বগুণের আঁট নাই। এই পাড়ার খেলুড়েদের সঙ্গে কত ভালবাসা, একদণ্ড না দেখলে থাকতে পারে না। কিন্তু বাপ -মার সঙ্গে যখন অন্য জায়গায় চলে গেল, তখন নূতন খেলুড়ে হল। তাদের উপর তখন সব ভালবাসা পড়ল, পুরানো খেলুড়েদের একেবারে ভুলে গেল। তারপর জাত অভিমান নাই। মা বলে দিয়েছে, ও তোর দাদা হয়, তা ষোল আনা জানে যে, এ আমার ঠিক দাদা। তা একজন যদি বামুনের ছেলে হয় আর একজন যদি কামারের ছেলে হয়, তো একপাতে বসে ভাত খাবে। আর শুচি -অশুচি নাই, হেগোপোঁদে খাবে! আবার লোকলজ্জা নাই, ছোঁচাবার পর যাকে -তাকে পেছন ফিরে বলে-দেখ, আমার ছোঁচান হয়েছে কি না? ”