জ্যোতি প্রকাশ মুখার্জ্জী, গুসকরাঃ- বিদ্যালয় স্তর থেকে মহাবিদ্যালয় – যেন গলি থেকে রাজপথে উত্তরণ। অথবা বলা যায় ডোবা থেকে সমুদ্রে আগমন। প্রাথমিক পর্যায়ে কিছুটা নার্ভাসনেস তো থাকবেই। দীর্ঘদিন ধরে পাশাপাশি বড় হওয়া বন্ধু বান্ধবদের সঙ্গে বিদ্যালয় জীবন কেটেছে। এবার তো বিভিন্ন বিদ্যালয় ও ভিন্ন পরিবেশ থেকে আগত বন্ধু বান্ধবদের সঙ্গে পরিচয় হবে। বিদ্যালয়ের কিশোর-কিশোরী সুলভ আচরণের পরিবর্তে আসবে কিছুটা পরিণতি। এখানে আবার সবাই নতুন। আবার নতুন করে সবকিছু শুরু করতে হবে। মহাবিদ্যালয়ের এই নতুন পরিবেশে নবাগত ছেলেমেয়েরা যাতে সমস্যায় না পড়ে তার জন্য তাদের পাশে এসে দাঁড়ায় সিনিয়র দাদা-দিদিরা। তাদের নিয়ে আয়োজিত হয় নবীন বরণ উৎসব। লক্ষ্য প্রাথমিক জড়তা দূর করে তাদের পাশে থাকার বার্তা দেওয়া। রাজ্যের অন্যান্য মহাবিদ্যালয়ের সঙ্গে গুসকরা মহাবিদ্যালয়েও পালিত হলো নবীন বরণ উৎসব। সঙ্গে চিরাচরিত আকর্ষণ হিসাবে ছিল সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ‘সোশ্যাল’। যেখানে বহিরাগত শিল্পীর সঙ্গীত পরিবেশন উপস্থিত ছাত্র-ছাত্রীদের মনে বাড়তি আনন্দের সৃষ্টি করে।
পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী বিভিন্ন সেমিস্টারের ছাত্র-ছাত্রীদের উপস্থিতিতে ২ রা ডিসেম্বর মহাবিদ্যালয় প্রাঙ্গনে এক আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে কার্যত সমস্ত নবাগত ছাত্র-ছাত্রীদের বরণ করে নেওয়া হয়। ছাত্র সংসদের পক্ষ থেকে তাদের কপালে পড়িয়ে দেওয়া হয় চন্দনের টিপ। হাতে তুলে দেওয়া হয় ফুলের তোড়া। একইসঙ্গে কলেজের বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের পুরস্কৃত করা হয়। অনুষ্ঠানের শেষে ছিল শিল্পীর সঙ্গীত পরিবেশন। পরদিন অর্থাৎ ৩ রা ডিসেম্বর অন্য তিন জন শিল্পী সঙ্গীত পরিবেশন করেন।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষা ড.সাবিনা বেগম, সদ্য প্রাক্তন অধ্যক্ষ ড. স্বপন পান সহ অন্যান্য অধ্যাপক ও অধ্যািপকারা, স্হানীয় বিধায়ক অভেদানন্দ থাণ্ডার, পুরসভার চেয়ারম্যান কুশল মুখার্জ্জী সহ অন্যান্য কাউন্সিলাররা । ছিল আউসগ্রাম তৃণমূল ছাত্রপরিষদের সভাপতি তন্ময় গোস্বামী, গুসকরা শহর তৃণমূল ছাত্রপরিষদের সভাপতি সৌম্যদীপ চ্যাটার্জ্জী সহ একঝাঁক তৃণমূল নেতা। যদিও কলেজের অনুষ্ঠানে এদের উপস্থিতির জন্য কিছুটা বিতর্কের সৃষ্টি হয়। তৃণমূল নেতৃত্ব অবশ্য সেগুলো গুরুত্ব দিচ্ছেনা।
সাবিনা দেবী বললেন – সত্যিই আজ খুব ভাল লাগছে। কলেজ জীবনে শুরুতে আমার মত প্রত্যেক কলেজ ছাত্র-ছাত্রীদের বরণ করে নেওয়া হয়েছিল। এই কলেজ আমাদের সবার গর্ব। এর সম্মান বজায় রাখার দায়িত্ব আমাদের সবার।
কলেজ ছাত্রী তথা তৃণমূল ছাত্র পরিষদ নেত্রী মলি দাস বলল – একদিন আমিও নবাগতা ছিলাম। গুসকরায় বাড়ি হলেও বা কাছ থেকে মহাবিদ্যালয়টিকে দেখলেও প্রথম যেদিন ছাত্রী হিসাবে প্রতিষ্ঠানে পা রাখি সেদিন অজানা ভয় ও উত্তেজনা মনের মধ্যে কাজ করে। সিনিয়র দাদা-দিদিদের জন্য যদিও ধীরে ধীরে সেগুলো কেটে যায়। নবীন বরণের দিন বুঝতে পারি জুনিয়রদের প্রতি সিনিয়রদের কর্তব্য ও ভূমিকা। আজ সেই দিন। জুনিয়রদের অনুরোধ করব তোমরা ভয় পেয়োনা। প্রতিষ্ঠানের নিয়মকানুন মেনে চলবে। নিয়মিত ‘ক্লাস’ করবে। যেকোনো সমস্যায় আমরা তোমাদের পাশে আছি। একই সুর শোনা গ্যালো আর এক ছাত্রী রিয়ার কণ্ঠে।