স্টাফ রিপোর্টার, দুর্গাপুর: গৃহস্থের ঘরে ফের ‘সাফাই গ্যাং’র হানা, ফের লক্ষ লক্ষ টাকার গহনা দিনেদুপুরে লুঠ শহর দুর্গাপুরে। লুঠ করে মোটরবাইক নিয়ে পালানোর সময় দুষ্কৃতীরা চাপা দিল বাড়ির গৃহবধূকেও।
ঘটনাস্থলে স্বল্প সময়ের মধ্যে পুলিশ পৌঁছালেও, সিসিটিভি’র ফুটেজ মিললেও, এদিন সন্ধ্যা পর্যন্ত দুষ্কৃতীরা রইল অধরাই – যা নিয়ে দিনভর চাঞ্চল্য ছড়াল শহর জুড়েই। কারণ, এই একই কেপমারির ‘সাফাই গ্যাং’ টি গত তিন দিনে এই নিয়ে শহরের চারটি বাড়িতে হানা দিয়ে নয় নয় করে সাড়ে চার লক্ষ টাকার সোনার গহনা হাতিয়ে নিয়ে চম্পট দিল, অথচ পরপর ঘটনার পরেও পুলিশি সক্রিয়তা বিশেষ চোখে পড়লনা শহরবাসীর। বিষয়টিতে ইতিমধ্যেই পুলিশের ভূমিকায় হতাশাও ছড়িয়েছে শহরের আনাচে কানাচে।
জনবহুল বেনাচিতি বাজারের গোয়েল গলির বাসিন্দা গনেশ চৌধুরীর বাড়িতে সোমবার বেলা ১২টা’য় হানা দেয় চার সদস্যের সাফাই গ্যাং। পেশায় ঠিকাদার গনেশ তখন বাড়িতেই ছিলেন। তিনি বলেন, “ওদের দুজন আমার ঘরে ক্লিনিং পাউডার বিক্রি করতে ঢোকে। আমার স্ত্রী দীপার কাছে ওরা একটা বাটি চেয়ে কেমিক্যাল ডাস্ট দিয়ে পরিষ্কার করে দেখালো যে ঐ পাউডারটি কতটা কাজের।” এরপরই, গনেশ বলেন, “ওরা একটি একটি করে সোনার হার, মঙ্গলসূত্র, কানের দুল খুলে নিয়ে পরিস্কার করতে থাকে। একটি একটি করে গহনা সাফ করে ওরা প্যাকেট করে রাখছিল। আমার স্ত্রী একটি প্যাকেট খুলে দেখে সেটি ফাঁকা। তখনি বেগতিক বুঝে ওরা গহনাগুলি নিয়ে দুটি চলন্ত মোটরসাইকেলে চেপে ঊরধশ্বাসে পালাতে শুরু করে।” কেপমারেরা ভিড়িঙ্গী মোড়ের দিকে পালাতেই, নিজের স্কুটি বাইক নিয়ে সঙ্গে সঙ্গেই তাদের পিছু ধাওয়া করেন দীপা। ভিড়িঙ্গী মোড়ের টোটো স্ট্যান্ডের কাছে একটি বাইকে থাকা দুষ্কৃতীরা দীপার স্কুটারে চলন্ত অবস্থায় ধাক্কা মারলে ছিটকে পড়েন ঐ গৃহবধূ। সেই সুযোগেকেপমারের দলটি জাতীয় সড়ক ধরে সিটিসেন্টারের দিকে উধাও হয়ে যায়। দীপার শরীরে, হাতে পায়ে চোট লাগে।
দীপা বলেন, “আমি স্কুটার নিয়ে ওদের তাড়া করছি আর চিৎকার করছি, কিন্তু কেউই ওদের আটকাতে এগিয়ে এলনা, এটাই আফসোস।” দীপা জানান, ওদের কপালে তিলক কাটা ছিল আর তারা হিন্দিতে কথা বলছিল।
এদিকে, লুঠের ঘটনার ২০ মিনিটের মধ্যে পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে বয়ান রেকর্ড করে এবং সিসিটিভির ফুটেজ জোগাড় করে। পুলিশকে গনেশ জানান, আড়াই লক্ষ টাকার গহনা লুঠ করে পালিয়েছে কেপমারেরা। গত শুক্রবার শহরের বি-জোন এলাকার সেকেন্ডারি রোডের বাসিন্দা, মিশ্র ইস্পাত কারখানার অবসরপ্রাপ্ত কর্মী অরূপ চৌধুরীর বাড়ি থেকে একই কায়দায় ঐ একই গ্যাং দো লক্ষ টাকার গহনা দিনেদুপুরে চোখে ধুলো দিয়ে লুঠ করে পালিয়ে যায়। সেখানেও তিলক কাটা, হিন্দিতে কথাবলা দলটিই ছিল। তার ঠিক আগে দলটি সিটি সেন্টারের আলাউদ্দিন খান বীথি র বাসিন্দা সঞ্জয় রায়ের বাড়িতে ঢুকে পড়ে গহনা ঝকঝকে করে দেওয়ার অছিলায়। বাসিন্দাদের সচেতনতায় দ্রুত গতিতে বাইক চালিয়ে তারা এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যায়।
সোমবারের ঘটনার পর দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেট জানিয়েছে, যথেষ্ট তথ্য হাতে আসায় দলটি দ্রুত ধরা পড়ার ব্যাপারে তারা এখন বেশ আশাবাদী।