eaibanglai
Homeএই বাংলায়সরকারি জায়গায় একটি ভুতুড়ে বহুতল আবাসন নির্মাণের অভিযোগ দায়ের দুর্গাপুরে

সরকারি জায়গায় একটি ভুতুড়ে বহুতল আবাসন নির্মাণের অভিযোগ দায়ের দুর্গাপুরে

নিজস্ব সংবাদদাতা, দুর্গাপুরঃ- সরকারি খাসজমিতে গজিয়ে উঠেছে ভুঁইফোঁড় ছয় তল বিশিষ্ট বেআইনি আবাসন আর বিষয়টি নিয়ে দুর্গাপুরের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের পক্ষ থেকে ওই ভুতুড়ে আবাসনের হালহকিকত, সৃষ্টি রহস্য জানতে এবং আবাসনটির মূল পান্ডাদের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ চেয়ে ইতিমধ্যেই অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে মহকুমা শাসকের কার্যনির্বাহী বিচার বিভাগে, বলে জানা গেছে। ভারপ্রাপ্ত কার্যনির্বাহী ন্যায়াধীশ দুর্গাপুর ফরিদপুর ব্লক ভূমি ও ভূমি রাজস্ব আধিকারীককে এ বিষয়ে বিস্তারিত খোঁজখবর নিয়ে একটি রিপোর্ট জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। শুধু তাই নয়, ন্যায়াধীশ দুর্গাপুরের নিউ টাউনশিপ থানার অফিসার ইনচার্জকেও পৃথক একটি নির্দেশে ওই বহুতলে নির্মাণ কাজ অবিলম্বে বন্ধ করার হুকুম দিয়েছেন।

নিউ টাউনশিপের কালিগঞ্জ এলাকার টেঁটিখোলা মৌজার সরকারি জায়গায় একটি ছয় তলা বহুতল আবাসন প্রকল্প ভুঁইফোঁড়ের মতো রাতারাতি গজিয়ে উঠছে। কালিগঞ্জ উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রের গায়ে গায়ে গড়ে উঠেছে এই বহুতল আবাসনটি। সাদা চোখেই বোঝা যায় – এটি মাথা তুলছে সরকারি জায়গা জবরদখল করে।

সম্ভবতঃ ওই আবাসন প্রকল্পটি আগাগোড়াই ‘বেআইনি’ ভাবে গড়ে উঠছে বলেই প্রকল্প সাইটের কোথাও কোন সংস্থা বা কারা এই প্রকল্পটি তৈরি করছেন – সে বিষয়ে কিচ্ছুটি উল্লেখ করে সাইনবোর্ড লাগানো হয়নি। খোঁজ নিয়ে জানা গেল, শহরের বিধাননগরের রাম মন্দিরের সামনে অবস্থিত একটি প্রোমোটারি সংস্থা নাকি ঐ বহুতল আবাসনটি নির্মাণের নেপথ্য কারিগর। ওই প্রকল্পের দুইজন মালিকের নামও জানা গিয়েছে। যদিও, ওই প্রকল্পের অফিসে গিয়ে তাদের হদিশ মেলেনি।

দুর্গাপুরের ওই সমাজকর্মী মহকুমা শাসক আদালতে দুই ব্যক্তির বিরুদ্ধে তার যে অভিযোগ নথিভূক্ত করিয়েছেন, তাতেই অভিযুক্ত দুই প্রোমোটারের নাম সামনে এসেছে – টেঁটিখোলা গ্রামের মুক্তিপদ ভান্ডারী ও তার শাগরেদ ‘লুনার হোম সংস্থা’র কর্ণধার বিবেক মন্ডল। ওই সমাজকর্মী এই দুই জমি লুঠেরার শাস্তি চেয়েই মহকুমা কার্যনির্বাহী ন্যায়াধীশের শরণাপন্ন হয়েছেন।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, “আসলে এই বহুতল প্রকল্পটি অনুমোদন পেয়েছে যেখানে এটি মাথা তুলছে সেখান থেকে প্রায় ৬০০ মিটার দূরে একটি জমির দাগ নম্বর দেখিয়ে, কিন্তু, স্থানীয় এক প্রভাবশালী তৃণমূল কংগ্রেস নেতার যোগসাজসে ও ভূমি ও ভূমি রাজস্ব বিভাগের দুই কর্মীর প্রত্যক্ষ মদতে ও মোটা টাকার লেনদেনে ওই প্রোমোটারেরা সরকারি খাসজমি দখল করে ইতিমধ্যে কয়েক কোটি টাকার ওই প্রকল্পটির কাজ প্রায় শেষ করেই ফেলেছেন।”

স্থানীয় বাসিন্দাদের আরো অভিযোগ, “জেমুয়া গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার এক তৃণমূল কংগ্রেস নেতা – যিনি নাকি শংকরপুর নিবাসী ও সাধারণ একজন ইস্পাত কর্মীর সন্তান হয়েও আজ কোটিপতি শুধুমাত্র প্রোমোটারির অবৈধ টাকার লেনদেনের ফলে। ওই তৃণমূল কংগ্রেস নেতার উদ্যোগে মূলতঃ ওই এলাকায় সরকারি জমি, পাট্টা দেওয়া জমি, বনদপ্তরের জমি সহজেই দখল করে বহুতল নির্মাণ করছে এক একের পর এক প্রোমোটার গোষ্ঠী।” নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক প্রোমোটার জানিয়েছেন, সরকারের বহু জমি বেনামে দখল করে অবৈধভাবে নাম ট্রান্সফার করে দিতে সাহায্য করেন ওই তৃণমূল কংগ্রেস নেতা। সবই নাকি চলে মোটা টাকার বিনিময়ে। এই তৃণমূল কংগ্রেস নেতার দুটি ব্যাংক একাউন্টে কয়েক কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে শেষ কয়েক বছরে, বলে কয়েকটি সূত্র থেকে জানা গেছে। কোথা থেকে এলো এত টাকা তার ওই ব্যাংক একাউন্ট গুলিতে – এ প্রশ্ন এলাকাবাসীর। দুর্গাপুরের শঙ্করপুরের একটি রাষ্ট্রায়ত্ব ব্যাংকের শাখায় তার নামের একাউন্টে কয়েক কোটি টাকা লেনদেন হয়েছে বলে ইতিমধ্যেই তদন্তকারীরা জানতে পেরেছেন। শুধু ওই অ্যাকাউন্টটিই নয়,মামলাকারী ওই সমাজকর্মীর দাবি, “বিধাননগরের গোধূলি ব্রাঞ্চেও আরেকটি রাষ্ট্রীয়ত্ব ব্যাংকের শাখায়ও কয়েক লক্ষ টাকার লেনদেন করা হয়েছে ওই তৃণমূল কংগ্রেস নেতার পক্ষ থেকে। তার আয়ের সোর্স কি ? তা কি আইনসিদ্ধ কোনো আয় – নাকি সবটাই বাহুবল আর দালালির বখরা ?”

সরকারি খাস জমি হেলায় বেচে দিয়ে কোটি কোটি টাকার অবৈধ লেনদেন আর পাহাড় প্রমাণ ঐ টাকা সরাসরি ঢুকেছে শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেসের ওই নেতার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে। কখনো নগদে তো কখনো আবার চেক্ মারফত। শুধু খাস জমিই নয়, এই লুটমারকারী নেতাটির দাপটে রেহাই পায়নি বন দপ্তরের জমিও, এমনকি কারো কারো ব্যক্তিগত জমি সম্পত্তিও, বলে অভিযোগ।

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments