জ্যোতি প্রকাশ মুখার্জ্জী,কলকাতাঃ- অটিজম হল শিশুদের এক ধরনের স্নায়বিক বিকাশ জনিত সমস্যা। এই রোগ শিশুদের কথাবার্তা ও সামাজিক যোগাযোগ করার ক্ষমতাকে নষ্ট করতে পারে এবং আমাদের মানসিক, শারীরিক ও সামাজিক স্বাস্থ্যের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। তিন বছর হওয়ার পর থেকে একটি শিশুর মধ্যে অটিজমের লক্ষনগুলো ধীরে ধীরে প্রকাশ পেতে শুরু করে। অটিজমের লক্ষণ এক এক বয়সের বাচ্চাদের ক্ষেত্রে এক এক রকম হয়ে থাকে।
কলকাতা রোটারি ক্লাবের সহযোগিতায় গত ১৮ ই ফেব্রুয়ারি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ডিউইশ মাল্টি ডিসিপ্লিনারি থেরাপি সেন্টার কলকাতায় প্রথমবারের জন্য অটিস্টিক ছেলেমেয়েদের জন্য সম্পূর্ণ বিনামূল্যে একটি সেমিনারের আয়োজন করে।
রোটারি সদনে আয়োজিত এই সেমিনারে উপস্থিত ছিলেন ডা. জয়রঞ্জন রাম, ডা. নন্দিতা চ্যাটার্জী, ডা. যশোধরা বাগচি, ডা. দিপ্তাংশু দাস, মনোবিদ ড. অনিন্দিতা চ্যাটার্জী ও বিদিশা সাহা, স্পিচ থেরাপিষ্ট মহম্মদ সাহিদুল আরেফিন, ডা. শান্তনু মন্ডল, ডা. অদিতি বন্দোপাধ্যায়, চৈতালি গামি, বহ্নি ভট্টাচার্য মন্ডল সহ অনেক বিশিষ্ট ডাক্তার, মনোবিদ, স্পিচ থেরাপিষ্ট, অটিজম ও অন্যান্য প্রতিবন্ধকতা নিয়ে কাজ করা ব্যক্তিরা। রোটারি ক্লাব শ্রীলঙ্কার পক্ষ থেকে উপস্থিত ছিলেন হ্যারল্ড সান্দ্রাসাগারা সহ রোটারি ক্লাব কলকাতার সভাপতি, সম্পাদক এবং রোটারিয়ান শ্রীরঞ্জনি জোশি।
সেমিনারে শতাধিক অটিজম আক্রান্ত শিশুর অভিভাবক ও পরিবারের সদস্য এবং অটিজম নিয়ে কাজ করা বিভিন্ন সংস্থার শিক্ষক-শিক্ষিকারা উপস্থিত ছিলেন।
সেমিনারে বিভিন্ন বক্তা একটা বিষয়ের উপর জোর দেন। তাদের বক্তব্য – অটিস্টিক শিশুদের লালন পালনের ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকে তাদের মা-বাবার। শিশুর মনে যাতে নেতিবাচক প্রভাব না পড়ে তার জন্য অভিভাবকদের সর্বদা ইতিবাচক থাকতে হবে। শিশুর বিরক্তিকর মনোযোগ আকর্ষণকারী আচরণগুলি উপেক্ষা করার চেষ্টা করতে হবে। শিশুকে রাগ, দুঃখ, হতাশা ইত্যাদি অনুভূতি প্রকাশ করার সঠিক পদ্ধতি শেখাতে হবে। ওদের নিজেদের মত করে থাকতে দিতে হবে। অন্য শিশুরা যাতে তাদের নিয়ে বিদ্রুপ না করে সেদিকে খেয়াল রাখার জন্য বক্তারা অভিভাবকদের পরামর্শ দেন। তাদের মতে যেহেতু পুরোপুরিভাবে এই রোগ নির্মূল করার জন্য কোন চিকিৎসা নাই তাই চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী সঠিক থেরাপির মাধ্যমে এই রোগের উপসর্গগুলি হ্রাস করা ও শিশুর মানসিক বিকাশ ঘটানো সম্ভব হবে।
সেমিনারে উপস্থিত অটিজম আক্রান্ত জনৈক শিশুর মা বললেন – সবার বক্তব্য শুনে একটা জিনিস বুঝতে পারলাম শিশুর আচরণে বিরক্তি প্রকাশ না করে তার প্রতি সহানুভূতিশীল হলেই আমার সন্তান ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হয়ে উঠতে পারে। এই ধরনের অনুষ্ঠানের আয়োজন করার জন্য তিনি উদ্যোক্তাদের ধন্যবাদ জানান।
ডিউইশের পক্ষ থেকে সংস্থার ডিরেক্টর সুমিত্রা পাল বক্সী বলেন- মানুষের মধ্যে অটিজম সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য সারাবছর আমরা কাজ করে থাকি। সহযোগিতার জন্য তিনি রোটারি ক্লাব কর্তৃপক্ষের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।।