জ্যোতি প্রকাশ মুখার্জ্জী,উত্তর চব্বিশ পরগণাঃ- মাত্র কয়েক ঘণ্টার ব্যবধান, যদিও অনেক জায়গায় ইতিমধ্যে শুরু হয়ে গিয়েছে, রাত পেরলেই বসন্তের মৃদু মন্দ দক্ষিণা বাতাসের সঙ্গে তাল মিলিয়ে রঙের উৎসব দোলে মেতে উঠবে আপামর বাঙালি। পরস্পরকে রাঙিয়ে দেবে আবিরের রঙে। তার সঙ্গে সাযুজ্য রেখে শিমুল-পলাশ ফুলে সেজে উঠেছে সমগ্র প্রকৃতি। দেখলে মনে হবে কোনো এক শিল্পী যেন তুলির টান দিয়েছে।সব মিলিয়ে এক অপরূপ দৃশ্য।
কিন্তু দোলের সময় যে আবির ব্যবহার করা হয় সেটা মূলত কৃত্রিম, যার সঙ্গে রাসায়নিক বস্তু মেশানো থাকে। ফলে ত্বক বা চোখের ক্ষতি হতে পারে। যার জন্য উদ্বিগ্ন চিকিৎসকরা দোলের সময় সাবধানে আবির মাখতে বলেছেন। আনন্দের সময় কে আর সাবধানতা মেনে চলে! প্রয়োজনের তুলনায় যথেষ্ট কম হলেও অন্তত নিজেদের এলাকায় সমস্যা সমাধানে এগিয়ে এলো উত্তর চব্বিশ পরগণার দত্তপুকুরের ‘আমরা মানবিক’ নামে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। আমন্ত্রণ মোড়ে নিজেদের অফিসে বসে পিণ্টু, প্রিয়া, পার্থ, সুব্রত, টিংকু, সুস্মিতা, সোমা, সৃজা, বিদিশা, সান্তা, মিতু, কৌশিক, আকাশ, হৃদয়, অরণ্য, বরেন্দ্র ও অদিতিরা মেতে উঠেছে ভেষজ আবির তৈরি করতে।
সেবার মনোভাব নিয়ে কলেজ পড়ুয়াদের হাত ধরে গড়ে ওঠা ‘আমরা মানবিক’ এর সদস্যরা গত কয়েকদিন ধরে অক্লান্ত পরিশ্রম করে বিটের রস দিয়ে গোলাপী আবির, পালং শাক দিয়ে সবুজ আবির, কাঁচা হলুদ দিয়ে হলুদ আবির এবং অপরাজিতা ফুল দিয়ে নীলচে-বেগুনি আবির তৈরি করেছে। ইতিমধ্যে তারা প্রায় ষোলো কেজির উপর ভেষজ আবির তৈরি করে ফেলেছে। ইচ্ছে থাকলেও অধিকাংশ সদস্যের পরীক্ষা থাকার জন্য এর বেশি আবির তারা তৈরি করতে পারেনি। জানা যাচ্ছে তৈরি করা আবিরের প্রায় সবটাই বিক্রি হয়ে গ্যাছে। নিজেদের জন্য আরও কিছু পরিমাণ আবির তৈরি করার ইচ্ছে তাদের আছে।
প্রসঙ্গত এলাকার বিভিন্ন অসহায় ও দুস্থ ছেলেমেয়েদের নিয়ে ‘আমরা মানবিক’ এর সদস্যরা ‘মানবিক পাঠশালা’ গড়ে তুলেছে। গতবছর পাঠশালার বাচ্চাদের জুতো কিনে দেওয়ার উদ্দেশ্যে প্রথমবারের জন্য তারা ভেষজ আবির তৈরি করে। রাতারাতি সেই আবির, কার্যত কাড়াকাড়ি করে, বিক্রিও হয়ে যায়। চাহিদা থাকা সত্ত্বেও পরিমাণ কম থাকার জন্য অনেকজনকে তারা আবির দিতে পারেনি। এবারও সেই একই পরিস্থিতি। তৈরি হতে না হতেই শেষ।
কলেজ ছাত্রী অদিতি বলল – ভেষজ আবির তৈরি করার বিষয়টি প্রথম আমাদের সদস্য পিণ্টু হালদারের মাথায় আসে। আমরা নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে এই ভেষজ আবির তৈরি করার সিদ্ধান্ত নিই। এরফলে আমাদের ‘মানবিক পাঠশালা’-র ছেলেমেয়েদের জন্য যেমন কিছু আয় হলো তেমনি জনগণের স্বাস্থ্য সচেতনতার বিষয়টি বজায় থাকল। চেষ্টা করব আগামী দিনে আরও বেশি পরিমাণে ভেষজ আবির তৈরি করতে।
ভেষজ আবির তৈরি করার বিষয়টি শুনে বিজ্ঞান মঞ্চের অন্যতম সৈনিক অমল দাস বললেন – খুব ভাল উদ্যোগ। এইসব ছোট ছোট উদ্যোগ দোল উৎসবকে অন্য মাত্রা দেবে। অন্তত প্রত্যেকে নিশ্চিন্তে আবির ব্যবহার করতে পারবে।