নিজস্ব সংবাদদাতা, দুর্গাপুরঃ– দুর্গাপুরের বেনাচিতির যুবকের রহস্য মৃত্যুর ঘটনায় উঠে এল চাঞ্চল্যকর তথ্য। ত্রিকোণ সম্পর্কের জেরে প্রাক্তন প্রেমিককে সঙ্গে নিয়ে একেবারে ফিল্মি কায়দায় বর্তমান প্রেমিক ওই যুবককে খুন করে তার প্রেমিকাই। অভিযুক্ত প্রেমিকা ও তার প্রাক্তন প্রেমিককে জেরা করে এমন তথ্যই উঠে এসেছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
প্রসঙ্গত গত বৃহস্পতিবার সকালে দুর্গাপুরের গোপালমাঠের বনগাঁ মোড়ের কাছে ১৯ নম্বর জাতীয় সড়কের উপর থেকে হাত-মুখ বাঁধা অবস্থায় বেনাচিতির নতুন পল্লীর বাসিন্দা পেশায় পরিবহণ ব্যবসায়ী বছর উনিশের অবিনাশ ঝাঁয়ের মৃতদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। অবিনাশের পরিবারের তরফে খুনের অভিযোগ দায়ের করা হয়। এরপরই রহস্যময় ওই মৃত্যুর ঘটনার তদন্তে নামে পুলিশ। তদন্তে নেমে নানা তথ্য ও সূত্র ধরে যুবকের প্রেমিকা বেনাচিতিরই নঈমনগরের বাসিন্দা আফরিন খাতুন ও তার প্রাক্তন প্রেমিক বিজু পাড়ার বাসিন্দা বিট্টু সিংহকে গ্রেফতার করে জেরা করতেই খুলে যায় মৃত্যু রহস্যের জট। পুলিশে দাবি জেরায় ধৃত দুজনেই অবিনাশকে খুনের কথা স্বীকার করে নেয়। জেরায় পুলিশ জানতে পারে অবিনাশ ও আফরিনের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক ছিল। কিন্তু সম্প্রতি এই সম্পর্কের মধ্যে চলে আসে আফরিনের প্রাক্তন প্রেমিক বছর একুশের বিট্টু সিংহ। দুজনে নতুন করে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়লেও আফরিনের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করতে কিছুতেই রাজি হয়নি আবিশান। আর তারই ফল ভোগ করতে হয় তাঁকে। পথের কাঁটা সরাতে অবিনাশকে খুনের পরিকল্পনা করে আফরিন ও বিট্টু।
মৃত যুবকের পরিবার সূত্রে জানা যায়, ঘটনার দিন অর্থাৎ বুধবার বিকেলে ভিরিঙ্গিতে অবিনাশ নিজের দপ্তরে যান। সন্ধ্যা সাতটা নাগাদ মায়ের সাথে ফোনে কথাও বলেন। কিন্তু তার ঘণ্টা খানেক বাদে তার মা তাকে ফের ফোন করলে ফোন বন্ধ থাকায় আর ছেলের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেননি। বিষয়টি তিনি কলকাতায় বসবাসকারী বড়ছেলেকে জানান। এরপর অবিনাশের দাদা অনবরত তার ভাইকে ফোন করতে থাকেন। কিন্তু ফোন বন্ধ থাকায় কিছুতেই তার সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। এরইমধ্যে রাত দশটা নাগাদ একবার ফোন রিং হয়েই কেটে যায়। তারপর ফের ফোন বন্ধ হয়ে যায়। সন্দেহ হওয়ায় ফরিদপুর ফাঁড়িতে বিষয়টি জানায় অবিনাশের পরিবার। অবশেষে বৃহস্পতিবার সকালেই জাতীয় সড়কের উপর থেকে অবিনাশের দেহ উদ্ধার হয়।
অন্যদিকে পুলিশ সূত্রে জানা যায় ওই দিন সন্ধ্যায় আফিরন অবিনাশকে তার প্রাক্তন প্রেমিক রাজুর বিজুপাড়ার বাড়িতে ডেকে পাঠায়। সেখানে তিনজন মদ্যপান করার পর আফিরন প্রথমে নেশাগ্রস্ত হয়ে পড়া অবিনাশের মাথায় ভারী রড দিয়ে আঘাত করে। অবিনাশ মাটিতে লুটিয়ে পড়লে বিট্টু মৃত্যু নিশ্চিত করতে মদের বোতল ও কাচের গ্লাস দিয়ে ফের মাথায় আঘাত করে। এরপর অবিনাশের হাত মুখ বেঁধে তাকে বিট্টুর বাইকে নিয়ে বসে আফরিন এবং দুজনে মিলে গোপালমঠের কাছে জাতীয় সড়কে তার মৃতদেহ ফেলে দিয়ে আসে।
পরিবার সূত্রে জানা গেছে বাবা মারা যাওয়ার পর মায়ের সাথেই পৈত্রিক পরিবহন ব্যবসার দেখভাল শুরু করেন বিসিএ দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র অবিনাশ। পড়াশুনা আর ব্যবসার কাজ সামলাতে সামলাতে বেনাচিতিরি নঈম নগরের বাসিন্দা তারই সমবয়সী আফরিন খাতুনের সঙ্গে প্রণয়ের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে সে। আর এই সম্পর্কে জড়ানোই তাঁর জীবনের কাল হয়ে দাঁড়ায় বলে মনে করেছন মৃত অবিনাশের পরিবার।
আসানসোল দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেটের ডিসিপি (পূর্ব) অভিষেক গুপ্তা এদিন জানান, এর আগেও এক মহিলার খুনের অভিযোগে অভিযুক্ত বিট্টু কুমার সিংহ। যে বাইকে করে অবিনাশের মৃতদেহ চাপিয়ে জাতীয় সড়কের পাশে ফেলে দিয়ে আসা হয়েছিল সেই বাইকটি উদ্ধার করা হয়েছে বলেও জানান তিনি। এদিন ধৃত দুজনকে মহাকুমা আদালতে পেশ করে নিজেদের হেফাজতে নেওয়ার জন্য আবেদন জানায় পুলিশ।