eaibanglai
Homeএই বাংলায়উড়নচণ্ডী নগর নিগম বেআইনি ১০৫টি গাড়ি চালাচ্ছে কর ফাঁকি দিয়ে

উড়নচণ্ডী নগর নিগম বেআইনি ১০৫টি গাড়ি চালাচ্ছে কর ফাঁকি দিয়ে

মনোজ সিংহ, দুর্গাপুরঃ- সরকারের পুরনিগম শহরজুড়ে বছরের পর বছর নম্বরপ্লেট ছাড়াই শতাধিক গাড়ি চালাচ্ছে খোদ রাজ্য সরকারকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে আর দেখেও চোখে ঠুলি পরে শহর দুর্গাপুরের পুলিশ, প্রশাসন।

একেই কি বলে ‘উড়নচণ্ডী’র সংসার ? দুর্গাপুর নগর নিগমের কাজকারবার দেখে দিনকে দিন এমন মনে হওয়াটাই স্বাভাবিক নগরবাসীর। কখনো পুর পরিবারের লোককে ইচ্ছেমতো লাখ লাখ টাকার গাড়ির বরাত, তো কখনো গ্যারাজটারই হদিশ নেই অথচ গাড়ি মেরামতির মোটা টাকার বরাত বগলদাবা করে নগর নিগমেই ঘুরঘুর করছেন মি: নটবরলাল! এখন আবার সামনে এসেছে খোদ রাজ্য সরকারকেই লক্ষ লক্ষ টাকার কর ফাঁকি দিয়ে নগর নিগমের জঞ্জাল বওয়া শতাধিক গাড়ি বছরের পর বছর শহরজুড়ে দাপিয়ে বেড়ানোর মতো চরম অভিযোগ। আর এই অভিযোগ এনেছে জেলা কংগ্রেস। সোমবার। অভিযোগ হাতে পেয়ে দুর্গাপুরের মহকুমা শাসক সৌরভ চট্টোপাধ্যায় এদিন বলেন, “অভিযোগ পাওয়ার পর আমি বিষয়টি আমাদের পরিবহন বিভাগকে খতিয়ে দেখে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছি।” দুর্গাপুর নগর নিগমের কাছে রাজ্য সরকারের নগরোন্নয়ন দফতর ২০২০ সালে কয়েক দফায় মোট ১০৫ টি জঞ্জাল বওয়া গাড়ি সরবরাহ করে। শহরের বিভিন্ন ওয়ার্ডের বাড়ি বাড়ি পচনশীল ও অপচনশীল জঞ্জাল সংগ্রহের জন্য মিশন নির্মল বাংলা প্রকল্পের কাজে ব্যবহারের জন্যই বিশেষভাবে তৈরি ওই গাড়িগুলি পাঠানো হয় রাজ্যের মোট ৯৭টি পুরসভাকে। সেই গাড়িগুলিই প্রায় তিন বছর ধরে চলছে রেজিস্ট্রেশন নম্বর ছাড়াই। সোমবার এই নিয়েই জেলা কংগ্রেসের পক্ষ থেকে মহকুমাশাসক, নগর নিগমের কমিশনার এবং দুর্গাপুরের আঞ্চলিক পরিবহণ আধিকারিককে আলাদা আলাদা করে স্মারকলিপি জমা দেওয়া হয়। দেবেশ চক্রবর্তীর আরো অভিযোগ, “নির্মল বাংলা প্রকল্পে মোট ২৫৮ কোটি টাকা বরাদ্দ হয়। তারই ২৫ কোটি টাকা দিয়ে বাড়ি বাড়ি আবর্জনা সংগ্রহের জন্যে এইসব নতুন গাড়ি কেনা হয়েছে। কিন্তু, সেইসব গাড়ির রেজিস্ট্রেশন নম্বরই নেই। গাড়ির গায়ে মনগড়া ক্রমিক নম্বর লিখে বেআইনিভাবে ওই গাড়ি গুলি রাস্তায় চালাচ্ছে দুর্গাপুর নগর নিগম। নম্বরহীন গাড়ি দুর্ঘটনা ঘটালে বিমার কি হবে? সরকার নিজে দু’নম্বরী করবে আর পলিউশন সার্টিফিকেটের অজুহাতে সাধারন মানুষের মোটরসাইকেল ধরবে এখানকার পুলিশ? লজ্জা হয়না এদের ?”

এদিকে, দুর্গাপুর নগর নিগম সূত্রে জানা গিয়েছে, বাড়ি বাড়ি আবর্জনা সংগ্রহের জন্যে নগর নিগমের মোট ১৪৪ টি গাড়ি রয়েছে, যার মধ্যে ১০৫ টি নতুন গাড়ি। ২০২০ সালে প্রথমে ১৮ টি ‘বি এস-৪’ গাড়ি পাঠানো হয়। কিন্তু, ততদিনে কেন্দ্রীয় সরকার ‘বি এস-৪’ গাড়ির নথিকরণ করা বন্ধ করে দেওয়ায় সেই গাড়ি গুলির আর রেজিস্ট্রেশন করা সম্ভব হয়নি। কিন্তু, যেহেতু এই প্রকল্প তাড়াতাড়ি শুরু করার একটা চাপ ছিল এবং সেসময় নিগমের হাতে গাড়ির সংখ্যাও যথেষ্ট কম ছিল, তাই নিগম থেকে ক্রমিক নম্বর দিয়েই গাড়ি গুলি দিয়ে পরিষেবা শুরু হয়। পরে, নথিকরণের করে সেগুলি ব্যবহারের জন্য নতুন ১০৫ টি গাড়ি সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারের হাতে তুলে দেওয়া হয়। “ওই ঠিকাদার সংস্থারই রেজিস্ট্রেশন করানোর কথা,” বলে নিগম সূত্রে দাবি করা হয়েছে। ইতিমধ্যেই কিছু গাড়ির রেজিস্ট্রেশন অবশ্য হয়ে গেছে। বাকিদের প্রক্রিয়া চলছে, বলে নগর নিগমের দাবি। কিন্তু, ‘বি এস-৪’ গাড়ির নথিকরণ এখন বেআইনি। আবার, আরো বেশি বেআইনি রেজিস্ট্রেশন ছাড়া রাস্তায় গাড়ি চালানো – বিষয়টিতে এই উভয় সংকটে বিব্রত পুরনিগম। এ বিষয়ে দুর্গাপুর নগর নিগমের কার্যকরী বাস্তুকার দেবব্রত বিশ্বাস এদিন জানান, “ওই গাড়িগুলির রেজিস্ট্রেশন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় পরে আর তা করা সম্ভব হয়নি। সেই সময়ে এই প্রকল্প তাড়াতাড়ি শুরু করার একটা চাপ ছিল। তাই গাড়িগুলি রাস্তায় নামানো হয়। এখন যদি সরকার বলে তবে ওই গাড়িগুলো বন্ধই করে দিতে হবে।”

বিষয়টি নিয়ে নগর নিগমের মুখ্য প্রশাসক অনিন্দিতা মুখোপাধ্যায় এদিন কোনো প্রতিক্রিয়া দেননি।

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments