জ্যোতি প্রকাশ মুখার্জ্জী,গুসকরাঃ- গত ১২-১৪ ই জানুয়ারি তিন দিন ব্যাপী গুসকরা বালিকা বিদ্যালয়ে পালিত হয় প্লাটিনাম জয়ন্তী উৎসব। প্রাক্তন ও বর্তমান ছাত্রীদের ভিড়ে গমগম করে ওঠে বিদ্যালয় প্রাঙ্গন। উপস্থিত ছিলেন বহু সাধারণ মানুষ, অভিভাবক-অভিভাবিকা সহ বহু বিশিষ্ট ব্যক্তি। এক জমজমাট পরিবেশ।
সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের ফাঁকে ফাঁকে প্রবীণদের অনেকেই স্মৃতিচারণ করতে ব্যস্ত। একসময় মাইক্রোফোন হাতে দাঁড়ান বিশিষ্ট ব্যবসায়ী তথা সমাজসেবী রাজেন্দ্রপ্রসাদ আগরওয়াল। বহু মানুষের উপস্থিতিতে তিনি বিদ্যালয় প্রাঙ্গনটি পাথর দিয়ে বাঁধিয়ে দেওয়ার কথা ঘোষণা করেন।
গুসকরা বালিকা বিদ্যালয় চত্বরে প্রায় বারো হাজার বর্গফুট জায়গা মাটির। বর্ষা বা অন্য সময় যখন বৃষ্টি হয় তখন বিদ্যালয়ের সহস্রাধিক ছাত্রীর জুতোয় উঠে আসা কাদা আল্পনা লেপে দেয় বিদ্যালয়ের বারান্দায়। এমনকি তাদের ইউনিফর্মও কাদায় নষ্ট হয়ে যায়। সব দেখে অসহায়তা বোধ করে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। আর্থিক কারণে ইচ্ছে থাকলেও তাদের পক্ষে কার্যকর কোনো ভূমিকা নেওয়া সম্ভব হচ্ছিলনা। সেই মুহূর্তে রাজেন্দ্রপ্রসাদ অর্থাৎ এলাকার সুপরিচিত রাজুবাবুর ঘোষণায় বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আশার আলো দেখে। যদিও অনেকেই এই ঘোষণার মধ্যে অন্য ‘গন্ধ’ খোঁজার চেষ্টা করে এবং মিথ্যা প্রতিশ্রুতি ভেবে নেয়।
কিন্তু রাজুবাবুর ঘোষণা যে কোনো মিথ্যা প্রতিশ্রুতি ছিলনা ঘোষণার মোটামুটি দু’মাস পর তার প্রমাণ পাওয়া গ্যালো। তিনি ঘোষণা করেছিলেন পাঁচ হাজার বর্গফুটের মত বিদ্যালয় প্রাঙ্গন পাথর দিয়ে বাঁধিয়ে দেবেন। মাপজোক করে দ্যাখা যায় প্রায় অর্ধেকের বেশি ফাঁকা পড়ে থাকবে। তাই মত পরিবর্তন করে সম্পূর্ণ প্রাঙ্গন বাঁধিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। দক্ষ ইঞ্জিনিয়ারের উপস্থিতিতে মার্চ মাসের ১১-১২ তারিখ থেকে কাজ শুরু হয়। বিদ্যালয় পরিচালন সমিতির সভাপতি কুশল মুখার্জ্জী সহ বিদ্যালয় অন্তপ্রাণ সকলেরাজুবাবু বললেন – প্রায় চল্লিশ বছর ধরে এখানে আছি। শুধু লাভের কথা ভাবলে হবেনা, মনে রাখার মত সমাজসেবার কথাও ভাবতে হবে যেটা বহু জনের উপকারে লাগবে। তাই বিদ্যালয় প্রাঙ্গন বাঁধানোর কথা ভাবলাম। তারপর হাসতে হাসতে বললেন- সেদিন আমি থাকবনা, কিন্তু এই পাথরের উপর দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে আমার নাতনি সমা ছাত্রীরা আমার কথা ভাববে। এটাই হয়তো সবচেয়ে বড় পাওনা হবে।
র গৌতমদা ও শম্ভুদার মত অশিক্ষক কর্মীকে নিয়ে রাজুবাবু নিজে পাথর বাঁধানোর কাজ তত্ত্বাবধান করেন। যুদ্ধকালীন তৎপরতার সঙ্গে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা শুরু হওয়ার আগেই প্রাথমিক কাজ শেষ করা হয়েছে। জানা যাচ্ছে পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর ‘ফিনিশিং টাচ’ দেওয়া হবে।
বিদ্যালয় প্রাঙ্গনে পাথর বসানোর খবর শুনে দশম শ্রেণির ছাত্রী জুঁই ঘোষ বলল – এতো খুব ভাল খবর। বৃষ্টি হলে আমাদের ইউনিফর্মে এমন কাদা লাগত পরের দিন সেটা ব্যবহার করতে পারতাম না।
প্রসঙ্গত প্রচারের অন্তরালে থেকে দীর্ঘদিন ধরেই রাজুবাবু এই এলাকায় বিভিন্ন ধরনের সমাজসেবামূলক কাজ করে চলেছেন।
বিদ্যালয় পরিচালন সমিতির সভাপতি তথা গুসকরা পুরসভার চেয়ারম্যান কুশল মুখার্জ্জী বললেন – বিদ্যালয়ের ছাত্রীরা যখন কাদার সমস্যার কথা বলে তখন খুব খারাপ লাগছিল। ইচ্ছে থাকলেও অর্থের অভাবের জন্য কাজটা করতে পারছিলাম না। রাজুবাবু এগিয়ে আসায় ওদের আশা পূরণ হলো। এরজন্য আমি রাজুবাবুর কাছে কৃতজ্ঞ। অন্যান্য ব্যবসায়ীদের কাছে তার আবেদন – আপনারাও এগিয়ে আসুন এবং গুসকরা পুরসভার অন্তর্গত বিভিন্ন সামাজিক প্রতিষ্ঠানগুলিকে এইভাবেই সাজিয়ে তুলুন।