eaibanglai
Homeএই বাংলায়আমিন হত্যাকান্ডে যাবজ্জীবন সাজা দোষীদের, ২০ লক্ষ টাকা ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ সরকারি...

আমিন হত্যাকান্ডে যাবজ্জীবন সাজা দোষীদের, ২০ লক্ষ টাকা ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ সরকারি আইনজীবীর বিরুদ্ধেঃ “এই বিক্ষোভ ও অভিযোগ আমার সার্টিফিকেট”…দেবব্রত সাঁই

নিজস্ব সংবাদদাতা,দুর্গাপুরঃ- কুখ্যাত কোল মাফিয়া সেখ আমিনের চাঞ্চল্যকর হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত আট অভিযুক্তকে দোষী সাব্যস্ত করে যাবজ্জীবন সাজা ঘোষণা করল দুর্গাপুরের অতিরিক্ত মুখ্য দায়রা আদালত। বুধবার।

তবে, এদিনের সাজা ঘোষণার ঘটনা আর পাঁচটা অপরাধের সাজা ঘোষনার মতো এতটা নিরুপদ্রব থাকেনি। কারণ – সাজাপ্রাপ্তদের প্রিজন ভ্যানের পথে নিয়ে যাওয়ার সময় বিশেষত: তাদের পরিবারের মহিলারা আদালত চত্বরেই ‘সরকারি আইনজীবী ২০ লক্ষ টাকা ঘুষ নিয়েছিলেন এই বলে, যে, সাজা হতে দেবনা। তারপরও কেন সাজা হলো ? তাহলেও আমাদের ঘরের লোকেদের এখন জেলে যেতে হচ্ছে কেন ? আমাদের টাকাগুলো কোথায় গেল ?”

উল্লেখ্য, এই দেবব্রত সাঁই দুর্গাপুর বার এসোসিয়েশনের সভাপতি।

আদালত কর্তৃক খুনী বলে চিহ্নিত আটজনের পরিবারের মহিলাদের গগনভেদী আর্তনাদে আদালত চত্বরে তখন ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা। পরিস্থিতি বেগতিক দেখে মোকদ্দমার সরকারি আইনজীবী দেবব্রত সাঁইকে আচমকাই এলাকা ছেড়ে সরে যেতে দেখা যায়। এরপরই, ‘দুর্গাপুর আদালতে সরকারি আইনজীবীদের নিরাপত্তা নেই’ – এই অভিযোগ তুলে সাঁই এর সতীর্থরা এদিন বিকালে কর্মবিরতিতে যাবার কথা ঘোষণা করলে, পরিস্থিতি আরো ঘোরালো হয়ে যায়। আদালতের আইনজীবীদের একাংশ সরাসরি সরকারি আইনজীবীদের এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেন।

২০১৬ সালের ঈদের দিন এখানকার লাউদোহায় নামাজ শেষ হতেই স্টেনগানের মুহুর্মুহু গুলিতে ঝাঁঝরা হয়ে ঈদগাহের কয়েক মিটারের মধ্যেই লুটিয়ে পড়ে ঘটনাস্থলেই মারা যান সেখ আমিন। এই আমিন ই আবার ছিল প্রাক্তন আরেক কোল মাফিয়া সেখ সেলিম হত্যাকাণ্ডের মূল অভিযুক্ত। চাঞ্চল্যকর সেই আমিন হত্যাকান্ডের আট দোষীকে বুধবার যাবজ্জীবন কারাদন্ডে দন্ডিত করল দুর্গাপুর আদালত।

বুধবার দুর্গাপুরের অতিরিক্ত জেলা দায়রা আদালতের(২য় )বিচারক প্রিয়ব্রত দত্ত দোষীদের সাজা ঘোষনা করলেন। তার আগে গতকাল এই আদালতেই ওই আট জন আসামীকে দোষী ঘোষনা করে আদালত। যাবজ্জীবনের পাশাপাশি দোষী ব্যক্তিদের ১০ হাজার টাকা করে জরিমানাও ধার্য্য করা হয়।

প্রসঙ্গত , গতকাল মোট ১১ জনকে দুর্গাপুর আদালতে পেশ করা হয়। তার মধ্যে তিনজনকে বেকসুর খালাস বলে ঘোষণা করা হয়। এই মোকদ্দমায় সাজাপ্রাপ্ত আসামীদের নাম শেখ সানিউল, শেখ সাকিবুল, শেখ কাশেম, শেখ নুরুল হোদা, শেখ জাহাঙ্গীর, শেখ জৈনুল, সেখ বাবর আলী ও শেখ শাহজাহান। এরা সকলেই ফরিদপুর – লাওদোহা থানা এলাকারই বাসিন্দা।

রায় ঘোষনা পরেই দুর্গাপুর আদালতে আমিন হত্যাকাণ্ড সাজাপ্রাপ্ত আসামিদের পরিবার ক্ষোভ উগরে দিতে থাকেন সরকারি আইনজীবী দেবব্রত সাঁই এর বিরুদ্ধে। সাজা ঘোষণা হওয়া মাত্রই সরকারি আইনজীবীর বিরুদ্ধে বিক্ষোভে ফেটে পড়েন সাজাপ্রাপ্ত আসামিদের পরিবারের মহিলা সদস্যরা। তাদের জোরালো দাবি, ৪ দফায় ২০ লক্ষ টাকা নিয়েছেন সরকারী আইনজীবি দেবব্রত সাঁই।’ এই ঘটনাতেই ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়ায় আদালত চত্বরে।

এই ঘটনায় নিরাপত্তার অভাব বোধ করায় সরকারি আইনজীবীরা ধর্মঘটের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। দুর্গাপুর আদালতের ২২ জন সরকারি আইনজীবী বৃহস্পতিবার থেকে বিচার প্রক্রিয়ায় অংশ না নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। সরকারি আইনজীবীদের পক্ষে তুষার গুপ্ত জানান, “যেভাবে এদিন এক সরকারি আইনজীবীকে আদালত চত্বরে হেনস্থা করা হয়েছে, এবং পুলিশ প্রশাসন যতটা নিষ্ক্রিয় ছিল, তা বেশ উদ্বেগের। এ অবস্থায় কাজ করা কি যথেষ্ট নিরাপদ?” এই কর্মবিরতির ফলে বৃহস্পতিবার থেকে আদালতের স্বাভাবিক কাজকর্মে বিস্তর প্রভাব পড়ার আশঙ্কা। সরকারি আইনজীবী দেবব্রত সাঁই দাবি করেন, “একজন সরকারি আইনজীবীর কাজটা সুষ্ঠুভাবে করতে পেরেছি। খুনীরা সাজা পেয়েছে। এক সময় কৈলাসপুর গ্রাম মাফিয়াদের দখলে ছিল । আমিন হত্যাকাণ্ডের পর থেকে ওই সব গ্রেপ্তার কুখ্যাত অপরাধীদের সংশোধনাগারে রেখে দীর্ঘ আট বছরেরও বেশি সময় ধরে বিচার প্রক্রিয়ার জন্য সওয়াল করেছি। আজকের এই সাজা থেকে কৈলাসপুর গ্রামে শান্তি স্থির স্থায়ী হবে বলে মনে করি।” তার বিরুদ্ধে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগে দেবব্রত সাঁই বলেন, “এই বিক্ষোভ ও অভিযোগ আমার সার্টিফিকেট, যে আমি সঠিক পথে থেকে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছি। একজন সরকারি আইনজীবী হিসেবে এর জন্য আমি গর্বিত। অপরাধীদের পরিবারের লোকদের একটু ক্ষোভ তো থাকবেই। এ বিষয়ে আমার আর কিই বা বলার থাকতে পারে ?”

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments