মনোজ সিংহ, সিটিসেন্টার:- সরকারি জমি জবরদখলে যে শহর দুর্গাপুরের ফুটপাত দখল করে শুধু চায়ের দোকান, ঘুমটি, কাপড়ের দোকান মোবাইল- রিচার্জ সেন্টারই চলছে তা নয়, শহরের বিত্তবান নয়া ‘জমিদারে’রাও যে দেদার সরকারি জমি দখল করে তাদের বেওসা বাড়িয়ে চলেছেন বেআইনিভাবে এবার তা ধরা পড়েছে এডিডিএ’র র্যাডারে।
শহরের প্রাণকেন্দ্র সিটিসেন্টারের খুদিরাম সারণী, আম্বেদকর সরণী, কবিগুরু রোড বরাবর কয়েক ডজন রেস্তোঁর, হাসপাতাল, বিপণন কেন্দ্র রমরমিয়ে চলছে তাদের সামনে প্রশস্ত সরকারি জমি দখল করে। গত ২৩ মার্চ একটি সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে আসানসোল-দুর্গাপুর উন্নয়ন সংস্থা (এডিডিএ) সিটিসেন্টারেরই আম্বানি গোষ্ঠীর একটি বিপণনী সংস্থায় হানা দিয়ে সরেজমিনে পাকড়াও করে এরকমই একটি জবরদখল কাণ্ড। পুলিশের সহায়তায় এডিডিএ’র এক অতিরিক্ত টাউন প্ল্যানার এবং এক সিনিয়র সার্ভেয়ার হাতেনাতে ধরেন কিভাবে ওই বিপণনী সংস্থাকে সুবিধা পাইয়ে দিতে এক বাড়ির মালিক ফুটপাত সংলগ্ন প্রশস্ত সরকারি জমি জবরদখল করে কংক্রিটে মুড়ে দিচ্ছেন। হানাদারির সময়ই এডিডিএ’র আধিকারিক-কর্মীরা জানতে পারেন, আম্বানি গোষ্ঠীর ওই বিপনীটি চলছে শহরের এক ‘কুখ্যাত’ কয়লা মাফিয়ার বাড়ি ভাড়া করে। যেহেতু বেআইনি কয়লার কারবারি, তাই, পেশি বল এবং ‘দাদাগিরি’র অভ্যাসটা যে তার এখনো যায়নি, তারই দৃষ্টান্ত এই জবরদখল।
সিটিসেন্টারের অম্বুজা পাড়ায় ওই বিপনীর বিরুদ্ধে জবরদখল, রাস্তা বন্ধ করে দেওয়ার অভিযোগ করেন কৃষ্ণ কুমার নামে অম্বুজা এলাকার ঊর্বশী পাড়ার এক বাসিন্দা। তার অভিযোগ, “আমার বাড়ির সামনে সরকারি নিয়মেই ৩৫ ফুট পর্যন্ত আমার পার্কিং এরিয়া পাওয়ার কথা। কিন্তু, আমার প্রতিবেশী সেই জায়গাটুকু তো বটেই সরকারি জায়গায়ও দখল করে বেপরোয়া নির্মাণ চালিয়ে যাচ্ছেন। বারবার সতর্ক করা সত্ত্বেও উনি কাজ থামাচ্ছেন না।”
এরপরই কৃষ্ণকুমার এডিডিএ’র মুখ্য কার্যনির্বাহী আধিকারিকের কাছে তার অভিযোগ পত্র জমা করে দাবি করেন, “আমার প্রতিবেশী শুধু আমার জায়গা দখলই নয়, সরকারি জায়গা দখল করে পাকাপোক্তভাবে বসিয়েছেন একটি বড় বিদ্যুৎ জেনারেটরের সেট। সেখানে বেআইনিভাবে বসানো হয়েছে দুটি পেল্লাই হোর্ডিংও। এগুলির কোন অনুমোদনই নেই। ওই দুটি হোর্ডিং আমার বাড়িটি ঢেকে ফেলেছে।”
কৃষ্ণকুমারের যাবতীয় অভিযোগের তীর ব্যবসায়ী মধু সাহার বিরুদ্ধে। এই মধুই একসময় বেআইনি কয়লা কারবারে হাত পাকিয়েছিলেন। পুলিশ তাকে কয়লা কারবারের দায়ে গ্রেপ্তারও করে। সেই মধু সাহাই এবার জবরদখলে অভিযুক্ত। অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে মধু বলেন, “এডিডিএ’র আধিকারিকেরা এসে কাজ বন্ধ করতে বলে গেছেন, কিন্তু, গোটা সিটিসেন্টারেই তো প্রায় সব জায়গাতেই লোকে এভাবে জায়গা দখল করে ব্যবসা চালাচ্ছে।” তার যুক্তি, “তাহলে শুধু আমার বেলাতেই দোষ কেন ?”
মধুর এই ঠুনকো যুক্তিকে কার্যতঃ পাত্তা না দিয়ে এডিডিএ’র আধিকারিকেরা জানিয়েছেন, “কেউ চুরি করছে বলেই কি চুরি করা যায় ? সুনির্দিষ্ট ভাবে অভিযোগ পেলে ভেঙে ফেলা হবে সমস্ত জবরদখল। আমরা সবকিছুই লক্ষ্য রাখছি।
এদিকে এডিডিএ’রই এক পদস্থ সূত্র জানাচ্ছে, মধু সাহার জবরদখলের নেপথ্যে নাকি সায় এবং অভয় দিয়েছেন এডিডিএ’রই নতুন দায়িত্ব পাওয়া সেই ‘নতুন বামুন’ আর তার শাগরেদ হয়েছেন শহরের ভিরিঙ্গি বেনাচিতি এলাকার এক প্রাক্তন কাউন্সিলর। এডিডিএ’র অন্দরেই এখন প্রশ্ন- “তবে কি এবার ‘নতুন বামুনে’র পছন্দের গুটিকয় ব্যবসায়ী বন্ধুর স্বার্থ রক্ষা করাই কাজ হবে এডিডিএ’র ?”