জ্যোতি প্রকাশ মুখার্জ্জী, মেমারিঃ– ‘চিতাতেই সব শেষ’- হিন্দু মতে মৃত মানুষের ওইটাই শেষ এবং পূর্ব নির্ধারিত ঠিকানা। একটা সময় জনবসতির বাইরে, কার্যত লোকচক্ষুর অন্তরালে, শ্মশানগুলি অবস্থিত ছিল। মুখে বলা হয় পবিত্র স্থান, অথচ দূর থেকে সেগুলি দেখলে অজানা আতঙ্কে বুক কেঁপে ওঠে। কিন্তু বর্তমানে অবস্থার অনেক পরিবর্তন হয়েছে। অধিকাংশ শ্মশান সেজে উঠেছে। কোথাও গড়ে উঠেছে শ্মশান কালীমন্দির। মন্দিরে যাওয়ার জন্য সুসজ্জিত প্রবেশ পথ ও প্রবেশদ্বার। দেখলেই আতঙ্কের পরিবর্তে মনের মধ্যে সৃষ্টি হয় ভক্তির।
সম্প্রতি পূর্ব বর্ধমানের মেমারি পৌরসভার ১৫ নং ওয়ার্ডের অন্তর্গত বামুনপাড়া মহাশ্মশান মন্দিরের প্রবেশ পথে গড়ে উঠেছে এ’রকমই একটি সুদৃশ্য প্রবেশদ্বার। সৌজন্যে এলাকার বাসিন্দা গদাধর মোহন্ত। তিনি তার স্বর্গীয় পিতা তারাপদ মোহন্ত ও মাতা মায়াবতী মোহন্তের স্মরণে এই প্রবেশদ্বারটি নির্মাণ করিয়েছেম।
গত ২৬ শে মার্চ ফিতে কেটে এই মহাশ্মশান মন্দিরের প্রবেশদ্বারের উদ্বোধন করেন সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের কাউন্সিলর কাশ্মীরা বেগম। তখন সেখানে উপস্থিত ছিলেন গদাধর বাবু সহ সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের বহু তৃণমূল কর্মী ও সাধারণ মানুষ। প্রত্যেকেই গদাধর বাবুর এই উদ্যোগের ভূয়সী প্রশংসা করেন। তাদের বক্তব্য রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তের প্রতিটি শ্মশান এভাবেই সেজে উঠুক। তাকে কেন্দ্র করেই সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি গড়ে উঠুক।
চারিদিকে ধর্মের নামে বিভাজন সৃষ্টি হচ্ছে। একদল সাম্প্রদায়িক মানুষের বিষাক্ত নিশ্বাসে সমাজ আজ কলুষিত। এরা কোনো ধর্মের নয়, এদের একমাত্র পরিচয় এরা সাম্প্রদায়িক এবং সমাজের কলঙ্ক। ঠিক সেই সময় দাঁড়িয়ে সম্প্রীতির নজির সৃষ্টি করলেন মেমারির কাউন্সিলর কাশ্মীরা বেগম জন্মসূত্রে যিনি একজন মুসলিম ধর্মালম্বী হলেও মানবধর্ম যার কাছে বড় ধর্ম। পবিত্র রমজান মাসে নিজে রোজা রেখে মানবিকতার তাগিদে হিন্দু ধর্মের শ্মশান মায়ের মন্দিরের প্রবেশদ্বার উদ্ঘাটন করে তিনি এক বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন। পবিত্র মাসে করলেন পবিত্র কাজ।
প্রসঙ্গত গলসীর গৃহবধূ কাশ্মীরা দেবী এই প্রথম এই ধরনের কাজ করলেন না। এর আগেও তিনি বহুবার নিজেকে এই ধরনের কাজে লিপ্ত রেখেছেন। অনেকের মতে সমাজের রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে গলসীর ফাজিলা বেগম বা গুসকরার বেলি বেগমরা যত এগিয়ে আসবে তত সমাজ থেকে ধর্মীয় ভেদাভেদ দূর হবে।
গদাধর বাবু বললেন – মা-বাবার স্মৃতিতে আমি এই প্রবেশদ্বার নির্মাণ করলেও এটা সবার। আশাকরি প্রত্যেকেই এর মর্যাদা রাখার চেষ্টা করবেন।
অন্যদিকে কাশ্মীরা দেবী বললেন – জন্মসূত্রে আমি মুসলিম হলেও আমার কাছে সবচেয়ে বড় হলো মানব ধর্ম। প্রত্যেক ধর্মের মহাপুরুষরা সেই শিক্ষায় দিয়ে গ্যাছেন। সমাজে শান্তি বজায় রাখার জন্য তাই প্রতিটি ধর্মের প্রতি প্রত্যেকের শ্রদ্ধাশীল হওয়া উচিত। কাউন্সিলর নয়, আমার বড় পরিচয় আমি একজন মানুষ।