eaibanglai
Homeএই বাংলায়জমির মালিকানাঃ সর্ষের ভেতর ভূত খুঁজছে মরীয়া এডিডিএ

জমির মালিকানাঃ সর্ষের ভেতর ভূত খুঁজছে মরীয়া এডিডিএ

মনোজ সিংহ, দুর্গাপুর:- জমির মালিকানা হাতে কবে পাবে, তার এখনো নিশ্চয়তা নেই, তবে রাষ্ট্রায়ত্ত গেইল (গ্যাস অথরিটি অফ ইন্ডিয়া) কে দেওয়া ৩ একর জমির পূর্ণসত্ব কিভাবে এবং কতটা তাড়াতাড়ি দেওয়া যায়-তার জন্য এখন বিস্তর হুড়োহুড়ি এডিডিএতে।

রাজ্য সরকারের পুর ও নগরোন্নয়ন দপ্তরের আসানসোল দুর্গাপুর উন্নয়ন সংস্থা(এডিডিএ)র চেয়ারম্যান তাপস বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “গেইল’ এর জমি কিভাবে দ্রুত তাদের নামে রেকর্ড করিয়ে দেওয়া যায়, সেই উদ্দেশ্যে আমাদের এখানে দফায় দফায় ভূমি রাজস্ব আধিকারিকদের সাথে বৈঠক হচ্ছে। অতিরিক্ত জেলাশাসক (ভূমি রাজস্ব) এবং আমাদের কার্যনির্বাহী আধিকারিক ইতিমধ্যেই দু’দফা বৈঠক করেছেন। এখন পর্যন্ত কাজ ঠিক দিশাতেই এগোচ্ছে। কলকাতায় সংশ্লিষ্ট দপ্তর গুলিকেও সবটা জানানো হয়েছে।”

রাষ্ট্রায়ত্ব ‘গেইল’কে পূর্বাঞ্চলীয় সদর দপ্তর নির্মাণের জন্য ২০২০ তে পলাশডিহা গ্রাম সংলগ্ন সিটি সেন্টার ‘ফেজ-২’ তে ৩ একর জমি দেয় এডিডিএ। রাষ্ট্রায়ত্ব গেইল ২০১৩’র ১ ফেব্রুয়ারি দেশের মুখ উজ্জ্বল করা অন্যতম ‘নবরত্ন’কোম্পানির শিরোপা পায়। এরকম একটি রাষ্ট্রায়ত্ব সংস্থা দুর্গাপুর শহরে তার দপ্তর বসালে আদতে গরীমা বাড়বে এই শিল্পাঞ্চলেরই। গেইল জমি বাবদ ইতিমধ্যেই এডিডিএ’তে ২৫ কোটি টাকা জমাও করে দিয়েছে নির্দিষ্ট সময়ে। কিন্তু, এডিডিএ ওই জমির মালিকানা না দিয়ে গেইলকে ৩৩ বছরের চুক্তিতে হস্তান্তর করেছে।

“আসলে আমরা সমস্ত জমিই চুক্তিভিত্তিতে দিয়ে থাকি। তা সে বাসস্থানের জমিই হোক বা কলকারখানা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, অফিস-কাছারি। কারণ-এডিডিএ’র হাতেই এখনো ওইসব জমির মালিকানা নেই। যে নিজেই জমির মালিক নয়, সে কিভাবে অন্যকে মালিকানা দেবে?”- প্রশ্ন খোদ এডিডিএ’রই এক বরিষ্ঠ আধিকারিকের। তার কথায়, “সিটি সেন্টার, বিধান নগরের সমস্ত জমিই অধিগ্রহণ মুক্ত হওয়ার পর রাজ্যের ভূমি রাজস্ব দপ্তর ও বনদপ্তরের আওতায় চলে যায়। নগরোন্নয়নের স্বার্থে সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলি যখন যেমন দরকার পড়েছে, এডিডিএ’কে ব্যবহারের জন্য জমি দিয়েছে বটে, তবে, সেগুলির কখনো দলিল নথিকরণ হয়নি। তাই এই সমস্যা।”

এরই মাঝে, রাজ্য সরকার সম্প্রতি ‘লিজহোল্ড টু ফ্রি-হোল্ড’ নামে চুক্তির ভিত্তিতে দেওয়া জমিগুলিকে চিরস্থায়ী মালিকানাধীন করে দেওয়ার একটি আইন প্রণয়ন করে। এর দরুন জমির লিজ হোল্ডারকে এককালীন জমির মূল্যের ৭.৫ শতাংশ থেকে ২০ শতাংশ পর্যন্ত রূপান্তর মূল্য দেওয়ার কথাও বলা হয়েছে ওই আইনে। রাজ্যের অন্যান্য নগরোন্নয়ন ও পরিকল্পনা সংস্থাগুলির মতো এডিডিএ’র সদর দপ্তরে এই নির্দেশ এসে পৌঁছায়। সেই নির্দেশের পরিপ্রেক্ষিতেই, গত ১৪ মার্চ ‘গোল্ডেন অপরচ্যুনিটি ‘ নাম দিয়ে জমি রূপান্তরের প্রকল্প ঘোষণা করে এডিডিএ।

কিন্তু, প্রকল্প ঘোষণা করে গোড়াতেই হোঁচট খায় এডিডিএ। সংস্থার আধিকারিক-কর্মীরা বেশ বুঝতে পারেন “জমিটাই যখন হাতে নেই, তা লোকের নামে রেকর্ড করাবো কোন উপায়ে ?” কপালে ভাঁজ পড়ে এডিডিএ’র চেয়ারম্যান তাপস বন্দ্যোপাধ্যায়েরও। বিষয়টি নিয়ে, রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়ন দপ্তর, ভূমি রাজস্ব দপ্তরের সাথে আলাদা করে এক প্রস্থ আলোচনাও চালায় কলকাতায়। তার পরে পরেই বৈঠক হয় দুর্গাপুরেও। কিন্তু, এখনো জট কাটেনি। বিশেষতঃ গেইল নিয়ে বেশি অস্বস্তিতে এডিডিএ। সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ‘গেইল’এর দুর্গাপুরের ভারপ্রাপ্ত জেনারেল ম্যানেজার কাঞ্চন রায় বলেন, “আমাদের তরফ থেকে ওই জমিটির জন্য যা যা করণীয় সবই করেছি। কিন্তু, জমিটির স্থায়ী মালিকানা দেওয়ার ব্যাপারে এডিডিএ আর কিছু করেনি।” কেন ? -জানতে চাইলে, এডিডিএ’র চেয়ারম্যান বলেন, “কিছু সমস্যার দরুনই কাজ এগোয়নি। এ বিষয়টা আমরা ইতিমধ্যে উচ্চ পর্যায়ে নিয়ে গেছি। সত্যিই এতে ‘গেইল’এর তরফে কোন ত্রুটি নেই। ক্যাবিনেট সিদ্ধান্তেই গেইলকে জমি দেওয়া হয়। ওটা নিয়েই বনদপ্তরের সাথে আমাদের সমস্যা চলছে এখন।”

এদিকে, গেইল’র জমি নথিকরণে বিলম্ব হলেও, এরই মাঝে ফাঁকতালে পলাশডিহা লাগোয়া একটি বেসরকারি পলিটেকনিক কলেজের জমি নথি করণের কাজ দ্রুত এগিয়ে গেছে এডিডিএ এবং রাজ্যের ভূমি রাজস্ব দপ্তরের স্থানীয় ব্লক অফিসের ‘অবিশ্বাস্য’ তৎপরতায়। একটি সূত্র জানিয়েছে, এডিডিএ’র এক জুড়ে বসা নতুন পদাধিকারীই নাকি স্থানীয় ব্লক ভূমি রাজস্ব আধিকারিককে কলেজের জমি নথিকরণের জন্য চাপ সৃষ্টি করেছেন। যে সিটি সেন্টারের মোট ৬৩১ একর বন্টনকৃত জমির মালিকানাই এখনো আসেনি এডিডিএ’র হাতে, সেখানে, শুধুমাত্র বেসরকারী ওই পলিটেকনিক কলেজকে দেওয়া ২০ একর জমি আচমকাই প্রথমেই এডিডিএ’র নামে চাপের মুখে নাকি রেকর্ড করে দিয়েছেন স্থানীয় ব্লক ভূমি রাজস্ব আধিকারিক। এ বিষয় ব্লক ভূমি রাজস্ব আধিকারিক মৈনাক চট্টোপাধ্যায় বলেন, “দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানা কর্তৃপক্ষ দুমাস আগে তাদের অব্যবহৃত জমি এডিডিএ’র হাতে তুলে দিতে চায় বলে একটি চিঠি দিয়ে জানায়। সেই মোতাবেক আমরা ইস্পাত কর্তৃপক্ষ ও এডিডিএ’কে নোটিশ করে শুনানীর ব্যবস্থা করি। তাতে, দুপক্ষই সহমত হলে আমরা সরকারি নিয়মেই সেই সব জমি এডিডিএ’র নামে নথিকরণ শুরু করি।” মৈনাকের কথামতো, তাহলে জমি সরকারি ভাবে এডিডিএ’র আওতায় এসে গেছে। আর কোনো সমস্যা থাকার কথাই নয়। অথচ এই বিলম্বটা কিসের ?

আসলে ‘শাক দিয়ে মাছ ঢাকতে’ গিয়ে সম্ভবতঃ কিছু তথ্যগত ভ্রান্তি ছড়িয়ে ওই ভূমি আধিকারিক নিজেদের স্বচ্ছতা প্রমাণ করতে চাইছেন। কারণ, দুর্গাপুর ইস্পাত কর্তৃপক্ষ ইতিমধ্যেই সম্পূর্ণ উল্টো দাবী করে বসেছে। দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানার তরফে মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক বেদবন্ধু রায় সাফ জানিয়ে দেন, “আমাদের কাছে থাকা তথ্য পরিসংখ্যান মোতাবেক, গত এক দশকে দুর্গাপুর ইস্পাত কর্তৃপক্ষ কাউকেই একচুল জমিও হস্তান্তর করেনি।”

তাহলে ? সর্ষের ভেতর ভূতের বাসটা ঠিক কোথায় ? তা আবশ্য এখনো ঠাহর করে উঠতে পারিনি এডিডিএ।

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments