জ্যোতি প্রকাশ মুখার্জ্জী,গুসকরাঃ- ‘ক্লিনলিনেস ইজ নেক্সট টু গড’ হলেও গোটা বিশ্বটাকে আমরা ডাম্পিং গ্রাউন্ডের চোখে দেখছি। আমাদের চারপাশে দ্যাখা যাচ্ছে আবর্জনার স্তুপ। যত্রতত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে প্লাস্টিকজাতীয় বর্জ্য দ্রব্য। দৃশ্য দূষণের সঙ্গে সঙ্গে পরিবেশ দূষণ ঘটে চলেছে। নষ্ট হচ্ছে জীব বৈচিত্র্য, খাদ্যের গুণগত মান কমছে, ক্ষতি হচ্ছে মানুষের স্বাস্থ্যের। অথচ কারও কোনো সচেতনতা নাই। সবটাই ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে সরকারের উপর। এতে যে নিজেরাই নিজেদের কবর খনন করছি সেদিকে কারও খেয়াল থাকছেনা। বাসযোগ্য করার পরিবর্তে ভবিষ্যত প্রজন্মের হাতে এক বিষাক্ত বিশ্ব আমরা তুলে দিয়ে যাচ্ছি।
শেষ পর্যন্ত পরিস্থিতি সামাল দিতে এগিয়ে আসতে হলো ইউনাইটেড নেশনস কে। গত বছর ডিসেম্বর মাসে আয়োজিত সাধারণ সভায় প্রতিবছর ৩০ শে মার্চ দিনটিকে আন্তর্জাতিক শূন্য-বর্জ্য দিবস হিসাবে পালন করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এটি শুরু হবে ২০২৩ সাল থেকে। লক্ষ্য ২০৩০ সালের মধ্যে কঠিন বর্জ্যকে শূন্যে নামিয়ে আনা বা যতটা সম্ভব কম করার প্রচেষ্টা। কিভাবে এটা সম্ভব তারও একটা রূপরেখা তৈরি করা হয়। গৃহস্থালি পরিচ্ছন্নতার ক্ষেত্রে মহিলাদের সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকে তাই এক্ষেত্রে তাদের উপর বেশি দায়িত্ব দেওয়া হয়। যেহেতু গ্রামের থেকে শহরে বেশি বর্জ্য পদার্থ উৎপাদন হয় তাই নজর দেওয়া হয় শহরের পরিচ্ছন্নতার দিকে।
ইউনাইটেড নেশনস এর উদ্যোগকে সম্মান জানিয়ে ‘সুডা’-র উদ্যোগে ও গুসকরা পৌরসভার সহযোগিতায় গত ৩০ শে মার্চ গুসকরা শহরকে আবর্জনা মুক্ত রাখার জন্য শপথ নেন পুরসভার মহিলা কাউন্সিলররা। শপথ বাক্য পাঠ করান ভাইস চেয়ারম্যান বেলি বেগম।
গত ৩১ শে মার্চ মহিলা পরিচালিত স্বচ্ছতা মিশনের লক্ষ্যে শহর জুড়ে শুরু হয় ‘মশাল মার্চ’। মশাল তুলে দেন চেয়ারম্যান কুশল মুখার্জ্জী। কাউন্সিলর শিপ্রা চৌধুরী ও সাধনা কোনারের নেতৃত্বে বিদ্যাসাগর হল থেকে মশাল মিছিল শুরু হয়। সঙ্গে ছিল সুদৃশ্য ট্যাবলো। অসচেতন মানুষের মনে সচেতনতার আলো জ্বালানোর লক্ষ্যে মশাল হাতে মিছিল শহরের বিভিন্ন এলাকা পরিক্রমা করে। শুধু মহিলা কাউন্সিলর বা পুরসভার ভারপ্রাপ্ত কর্মীরা নন অনেক সাধারণ মহিলাকেও মিছিলে পা মেলাতে দ্যাখা যায়। মিছিল পুনরায় বিদ্যাসাগর হলে শেষ হয়। প্রত্যেকেই এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন।
কেন নিজেদের এবং ভবিষ্যত প্রজন্মের বাঁচার স্বার্থে শূন্য-বর্জ্য দরকার সেই সম্পর্কে সেখানে উপস্থিত সাধারণ মানুষের সামনে গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য পেশ করেন পুরসভার স্বাস্থ্য দপ্তরের কর্মী চন্দন যশ, কাউন্সিলর সাধনা কোনার, পুরসভায় সুডার ভারপ্রাপ্ত কোঅর্ডিনেটর অভিষেক দলুই প্রমুখ। শেষে বক্তব্য পেশ করেন চেয়ারম্যান কুশল মুখার্জ্জী।
সাধনা দেবী বলেন – গুসকরা আমাদের সবার প্রিয় শহর। একে পরিচ্ছন্ন রাখার দায়িত্ব আমাদের সবার। আসুন এবিষয়ে আমরা নিজেরা সচেতন হই এবং অপরকে সচেতন করি।
অন্যদিকে চেয়ারম্যান বললেন – শহরকে পরিচ্ছন্ন রাখতে হলে প্রত্যেককে সচেতন হতে হবে। পরিচ্ছন্নতার বিষয়ে পুরসভার পক্ষ থেকে যতটা সম্ভব দায়িত্ব পালন করা হচ্ছে। ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য আমাদের সবাইকে হাতে হাত মিলিয়ে কাজ করতে হবে।