জ্যোতি প্রকাশ মুখার্জ্জী,মেমারিঃ- এদিকে ‘দুয়ারে পঞ্চায়েত ভোট’, অন্যদিকে গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে জর্জরিত মেমারিতে নতুন করে অশান্তির আঁচ কিছুতেই পিছু ছাড়ছেনা মেমারির তৃণমূল কংগ্রেসকে। দেখেশুনে মনে হচ্ছে ওখানে দলের থেকে এক শ্রেণির নেতার ব্যক্তিগত স্বার্থ বেশি বড়। এইফল কিন্তু দলের কাছে বিপজ্জনক হতে পারে।
ঘটনার সূত্রপাত একটি সোলার মিনি পাম্পকে কেন্দ্র করে। স্থানীয় সূত্রে জানা যাচ্ছে সম্প্রতি সরকারি খরচে মেমারি-১ নং ব্লকের অন্তর্গত নিমো-১ নং অঞ্চলের রেললাইনের ধারে শ্মশানের কাছাকাছি এলাকার চাষযোগ্য জমিতে জল দেওয়ার জন্য একটি সোলার মিনি পাম্প বসানো হয়েছিল। একইসঙ্গে চাষের কাজে আসা ক্ষেতমজুরদের সুবিধার্থে পানীয় জলের একটি ট্যাঙ্কও লাগানো হয়। কিন্তু গত ৪ ঠা এপ্রিল সন্ধ্যায় স্থানীয় বাসিন্দারা দ্যাখে সেখান থেকে জলের ট্যাঙ্ক ও পাইপ খুলে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। স্থানীয় মানুষের অভিযোগ নিমো-১ নং গ্রাম পঞ্চায়েতের নির্দল সদস্য মজনু রহমান সেখের নির্দেশেই নাকি এই কাজ করা হচ্ছে। ঘটনায় স্থানীয় বাসিন্দা তথা চাষীরা ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে এবং জলের ট্যাঙ্ক নিয়ে যেতে বাধা দেয়।
স্থানীয় বাসিন্দা সুমন কুমার বললেন – একটা চালু সরকারি প্রকল্পের পানীয জলের ট্যাঙ্ক কিভাবে কাউকে না জানিয়ে রাতের অন্ধকারে পঞ্চায়েত সদস্যের নির্দেশে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়? স্থানীয়রা যদি সেইসময় না ধরতে পারত তাহলে হয়তো কেউ তার ব্যক্তিস্বার্থ সিদ্ধ করার জন্য ট্যাঙ্কটি ব্যবহার করতো। স্থানীয়দের প্রশ্ন- এই অনৈতিক কাজের জন্য পঞ্চায়েত কি সংশ্লিষ্ট সদস্যের বিরুদ্ধে কোনো আইনগত ব্যবস্থা নেবে?
ঘটনা সম্পর্কে নিমো -১ পঞ্চায়েত প্রধান উত্তম কৈবর্ত্য সাফাই দিয়ে বললেন – কয়েকদিন পরই গাজন শুরু হবে। নিমোর গাজন মেমারি তথা আশেপাশের এলাকায় খুবই জনপ্রিয়। বহু মানুষ গাজন দেখতে আসে। আগত মানুষদের পানীয় জলের সুবিধার্থে নিমো দুর্গাতলায় জলের ট্যাঙ্কটি বসানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। যদিও তিনি বলেন – খুব শীঘ্রই বিকল্প ব্যবস্থা করা হবে।
ক্ষুব্ধ এলাকাবাসীর প্রশ্ন- এইভাবে রাতের অন্ধকারে একটি সরকারি প্রকল্পের বরাদ্দ জলের ট্যাঙ্ক অন্যত্র কেন নিয়ে যাওয়া হবে ? অবশ্যই সেখানে পঞ্চায়েত নতুন ট্যাঙ্ক বসাতেই পারে। সেক্ষেত্রে কোনো প্রশ্নই উঠতনা। তাছাড়া এই পরিবর্তনের জন্য কি কোনো লিখিত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল?
জনৈক চাষীর দাবি – এখানে প্রায় ১০০ বিঘা চাষযোগ্য জমি আছে। কাছাকাছি পানীয় জলের সুবিধা না থাকায় আমরা খুব সমস্যায় পড়তাম। গ্রীষ্মের সময় পঞ্চায়েতের পক্ষ থেকে সোলার পাম্পের ব্যবস্থা করে দেওয়ায় আমাদের পানীয় জলের সমস্যা মিটেছিল। কিন্তু যেভাবে সেই ট্যাংক সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল সেটাতো চুরির সামিল।
যার দিকে অভিযোগ সেই নির্দল সদস্যের কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।
রাজ্যজুড়ে শিক্ষা সহ বিভিন্ন দুর্নীতির অভিযোগে তৃণমূল কংগ্রেস যখন জর্জরিত ঠিক তখন মেমারির এই উটকো ঝামেলা দলের কাছে ‘গোদের উপর বিষফোঁড়া’-র মত। পঞ্চাযেত নির্বাচনে এই ঘটনা এলাকায় কোনো বিরূপ প্রভাব ফেলবে কিনা তার উত্তর সময়ই দেবে।