মনোজ সিংহ, দুর্গাপুরঃ- উত্তরপ্রদেশের দাগী আমন সিং কেই কয়লা মাফিয়া রাজু ঝা খুনের সুপারি দেওয়া হয়েছিল বলে তদন্তকারী আধিকারিকদের একাংশ প্রায় নিশ্চিত। বৃহস্পতিবার সে কারণেই বর্ধমানের মুখ্য দায়রা আদালতে ঝাড়খণ্ডের হাজারীবাগ জেলখানার ফুটেজ সংগ্রহের জন্য একটি আবেদন জমা করল পূর্ব বর্ধমান জেলা পুলিশ । জেলা পুলিশের ১২ সদস্যের বিশেষ তদন্তকারী দল ওই ফুটেজ হাতে পাওয়ার পর মিলিয়ে দেখতে চাইছে- রাজু খুনের আগে ও পরে ঠিক কারা কারা জেলবন্দী আমন সিং এর সাথে দেখা করে গেছে। এক তদন্তকারী আধিকারিক জানান, “গতকালই আমাদের দলের দুজন হাজারীবাগ জেলে গিয়ে সন্দেহভাজন আমনের সাথে এক প্রস্থ কথা বলে এসেছে ।” শনিবার পূর্ব বর্ধমানের পুলিশ সুপার কামনাশিষ সেন প্রথম হাজারীবাগ জেল সুপারের সাথে ফোনে কথা বলেন বলে সুত্র মারফত জানা গিয়েছিল। তারপরেই বুধবার তদন্তকারীদের দুই আধিকারিক রাকেশ সিং ও অরূপ ভৌমিক সরাসরি হাজারীবাগ জেলখানায় গিয়ে কুখ্যাত গ্যাংস্টার আমন সিং-র সাথে কথা বলেন বলে সুত্র মারফত জানা গেছে। তাকে প্রাথমিক জেরার পর ওই দুই আধিকারিক জেলা পুলিশকে রিপোর্ট দেয় । তার ভিত্তিতেই বৃহস্পতিবার হাজারীবাগ জেলের সিসিটিভি ফুটেজ নিজেদের হেফাজতে নিতে চাইছে জেলা পুলিশ ।
এদিন জেলার মুখ্য দায়রা আদালতে জেলা পুলিশ রাজু ঝা’র মৃতদেহের সাথে উদ্ধার হওয়া তার দুটি ব্যাগ ও জমা দিয়েছে। সেই ব্যাগে ছিল রাজু ঝা’র জামা কাপড় ও নগদ এক লক্ষ টাকা এবং একটি দামি বিদেশি মদের বোতল । পাশাপাশি, পুলিশ আততায়ীদের ফেলে যাওয়া গাড়ি থেকে উদ্ধার হওয়া ১২ রাউন্ড অব্যবহৃত গুলিও জমা করেছে । উদ্ধার হাওয়া গুলির মধ্যে ৮ মিলিমিটার ও ৯ মিলিমিটার মাপের বুলেটই পাওয়া গিছে । কিন্তু, রাজুর শরীরের ময়না তদন্তের সময় উদ্ধার হওয়া চারটি গুলির মাপ ছিল ৭.৬৫ মিলিমিটারের । এ থেকে তদন্তকারীরা বুঝতে পেরেছেন, রাজু ঝা এর মত অভিজাত কয়লা কারবারিদের হত্যা করার জন্য আততায়ীরা অন্ততঃ তিন রকমের আগ্নেয়াস্ত্র সাথে এনেছিল । কিন্তু লিক হয়ে যাওয়া হত্যাকাণ্ডের ভিডিও ফুটেজ দেখা যায় ,গুলি চালানোর সময় একজন হলুদ শার্ট পরা আততায়ীর পিস্তলটি একবার লক হয়ে যায় । আরেকবার সেটি আততায়ীর হাত থেকে পড়েও যায় । পুলিশেরই একাংশ এটিকে অত্যাধুনিক আগ্নেয়াস্ত্র বলে আদৌ মানতে রাজি নয়। পুলিশের কারো কারো মত, “এটি আসলে বেশি কাঠা। মুঙ্গেরি মাল।” তাহলে প্রশ্ন – আমনের মতো পেশাদার খুনীর বাহিনী এত সস্তার এলেবেলে আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহারের ঝুঁকি নেবে রাজুর মতো দামি টার্গেটকে নিকেষ করার জন্য ?
তদন্তকারীরা এখন সেই বিষয়টিও ভাবছেন ।