জ্যোতি প্রকাশ মুখার্জ্জী, বীরভূমঃ- একটানা দীর্ঘদিন ধরে অসহ্য গরমের পর গত কয়েকদিন ধরে আবহাওয়ার কিছুটা পরিবর্তন হয়েছে। মাঝে মাঝে বিভিন্ন জায়গায় ছিটেফোঁটা বৃষ্টিও হচ্ছে। কিন্তু ২৭ শে এপ্রিল দুপুরের দিকে নানুর থানার রাণীবাজারে যেটা হলো এককথায় সেটা অস্বাভাবিক, কেউই প্রস্তুত ছিলনা।
স্থানীয় সূত্রে জানা যাচ্ছে, সকাল থেকেই মেঘ-সূর্যের মধ্যে লুকোচুরি খেলা চলছিল। সেরকম গরমও ছিলনা। দুপুরের দিকে হঠাৎ ঘন কালোমেঘ রাণীবাজারের আকাশ ছেয়ে ফেলে। কয়েকদিন ধরেই এটা হলেও বৃষ্টি হয়নি। ফলে অন্য কিছু হতে পারে সেটা স্থানীয় বাসিন্দাদের কেউই ভাবেনি।
সবাইকে চমকে দিয়ে প্রথমে শুরু হয় ঝড়। সঙ্গী বৃষ্টি এবং সঙ্গে ঝরে পড়তে থাকে বড় বড় শিলা- অনেকটা সিনেমার মত। একটানা দীর্ঘ সময় ধরে চলতে থাকে উভয়ের দাপট। প্রথমে বৃষ্টির আনন্দে মেতে ওঠে সবাই। পরে আতঙ্ক গ্রাস করে। মাঠে পড়ে আছে বোরোধান। কেটে খামারে তোলার সময় হয়েছে। শিলাবৃষ্টি যেন তাদের পাকা ধানে মই দিয়ে গ্যালো!
ঝড় থামতেই দ্যাখা যায় ঝড় ও শিলাবৃষ্টির দাপটে ধান গাছ নুইয়ে গ্যাছে। আম গাছ থেকে ঝরে পড়েছে আম। বিভিন্ন গাছের পাতায় তখনো লেগে আছে বড় বড় বরফের টুকরো। ঘরের উঠান থেকে রাস্তা – বরফ দিয়ে ঢাকা। আচমকা দেখলে মনে হবে প্রকৃতি যেন সাদা পোশাকে নিজেকে ঢেকে নিয়েছে, অথবা বরফ ঢাকা পাহাড়ি এলাকা। অনেককে ঠাট্টা করে বলতে শোনা গ্যালো- গরীবের কাশ্মীর দর্শন। তবে এখনো পর্যন্ত শিলার আঘাতে কোনো মানুষের আহত হবার খবর পাওয়া যায়নি।
স্থানীয় কৃষক গোবর্ধন পাল, অজয় মণ্ডলদের আশঙ্কা – এই বৃষ্টির ফলে অন্যান্য গাছের উপকার হলেও বোরোধানের ক্ষতি হয়ে যাবে। কোথাওহ ধান কাটা শুরু হয়েছে, কোথাও বা তার প্রস্তুতি চলছে। মাঠে গিয়ে বুঝতে পারা যাবে কতটা ক্ষতি হয়েছে।
কলেজের ভূগোল বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী টিনা পাল বলল – এতদিন ভূগোল বইতে পড়লেও এই প্রথম এইধরনের শিলাবৃষ্টি চাক্ষুষ করলাম। প্রকৃতির এই ভয়ংকর সুন্দর রূপ আগে কখনো দেখিনি। এএক অন্য অভিজ্ঞতা।