সন্তোষ মণ্ডল, আসানসোলঃ– উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে গত মার্চ মাস থেকে লাগাতার আন্দোলন চালাচ্ছিলেন কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, অশিক্ষক কর্মী ও ছাত্রছাত্রীদের একাংশ। লাগাতার সেই আন্দোলনের জেরে বিষয়টি আদালত পর্যন্ত গড়ায়। এরই মধ্য গত ১৩ মে আচমকাই বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ডঃ সাধন চক্রবর্তীকে বরখাস্ত করেন রাজ্যপাল তথা আচার্য সিভি আনন্দ বোস। এরপরই আন্দোলনে ইতি টানেন আন্দোলনকারীরা। অন্যদিকে রাজ্যপালের নির্দেশের বিরুদ্ধে আদালতের দ্বারস্থ হন উপাচার্য। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলন শেষ হলেও রাজ্যপাল ও উপচার্যের মধ্যে নতুন করে দ্বন্দ্ব শুরু হয়।
উল্লেখ্য আচার্য তথা রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসের নির্দেশে নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের চাকরির মেয়াদ তিন মাসের জন্য বাড়ানো হয়েছিল। যার মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা ২৮ মে রবিবার। এবার এই তারিখ ও উপাচার্যের বরখাস্তের নির্দেশের নোটিশ নিয়ে নতুন করে তৈরি হয়েছে দুই পক্ষের দ্বন্দ্ব। জানা গেছে, দুদিন আগেই রাজ্য উচ্চ শিক্ষা দপ্তরে চিঠি লেখেন উপাচার্য ডঃ সাধন চক্রবর্তী। তাতে তিনি জানতে চান, তার চাকরির মেয়াদ সরকারি ভাবে কবে শেষ? ২৮ মে ? না, ৩১ মে? রবিবার উপাচার্য নিজেই এই কথা জানিয়ে বলেন, দুদিন আগে উচ্চ শিক্ষা দপ্তরে চিঠি দিয়েছি। এদিন পর্যন্ত কোন উত্তর পাইনি। আশা করছি সোমবার পাবো। তখনই জানতে পারবো। তবে এর মধ্যে রবিবার পর্যন্ত তিনি উপাচার্যের পদ থেকে পদত্যাগ করেননি ।
অন্যদিকে রাজ্যপালের উপাচার্যকে বরখাস্ত করার নির্দেশের নোটিশ নিয়েও দেখা দিয়েছে জটিলতা। গত ১৩ তারিখ রখাস্তের নোটিশ পাওয়ার পর ১৫ মে কলকাতা হাইকোর্টে এর বিরুদ্ধে একটি মামলা করেন উপাচার্য। যেখানে উপাচার্য জানান রাজ্যপাল তাকে বরখাস্ত করার চিঠি প্রত্যাহার করে নিলে, তিনি ২৪ ঘন্টার মধ্যে পদত্যাগ করবেন। এরপর রাজ্যপালের আইনজীবী হাইকোর্টে আবেদন করে বলেন, আচার্য বরখাস্তের নোটিশ প্রত্যাহার করে নেবেন। বিচারপতিও সেই নির্দেশ দেন। কিন্তু রাজ্যপালের বরখাস্ত নোটিশ প্রত্যাহার করার নির্দেশের চিঠির বয়ান নিয়ে ও তাতে আচার্যের সই না থাকায় উপাচার্য ফের আপত্তি তোলেন। জানা গেছে উপাচার্যের বরখাস্তের নোটিশ প্রত্যাহারের চিঠির বয়ানে বলা হয় রাজ্যপাল বরখাস্তের নোটিশ প্রত্যাহার করছেন। তবে উপাচার্য যেন পদত্যাগ করেন। আর তাতে রাজ্যপালের বদলে সই ছিল তাঁর সচিবের। উপাচার্য রাজভবনে পাল্টা আইনজীবী মারফত চিঠি পাঠিয়ে বলেন, কলকাতা হাইকোর্ট এমন কোন নির্দেশ দেয়নি। আমি নিজের থেকে পদত্যাগ করবো বলেছিলাম। কিন্তু রাজ্যপালের চিঠিতে পদত্যাগ করার উল্লেখ আছে। পাশাপাশি আচার্য হিসাবে তাতে রাজ্যপালের সই থাকার কথা। এই বিষয় দুটি ঠিক করা হলে, আমি পদত্যাগ করবো। পরে চিঠিতে রাজ্যপাল আচার্য হিসাবে সই করেন। কিন্তু চিঠির বয়ান বদলানো হয়নি। তাই উপাচার্য্য পদত্যাগও করেননি। রাজ ভবন থেকে তাকে আর কিছু বলাও হয়নি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের পদত্যাগ নিয়ে জটিলতার মধ্যেই এখন শুরু হয়েছে নতুন জল্পনা। এবারে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরবর্তী উপাচার্য কে হতে চলেছেন।