সঙ্গীতা চ্যাটার্জী (চৌধুরী)ঃ- আজকে ২ রা জুন, আজ হলো পরম পবিত্র পানিহাটি চিড়া দধি দন্ড মহোৎসব। বৈষ্ণব চূড়ামণি শ্রী রঘুনাথ দাসকে শ্রী নিত্যানন্দ মহাপ্রভু দন্ড দিয়েছিলেন এইদিন। শ্রী রঘুনাথ দাসের মনে যখন সংসারের প্রতি বৈরাগ্য জন্মায় তখন তিনি শ্রীচৈতন্যের পাদ পদ্মে নিজেকে অর্পণ করেন, চৈতন্য মহাপ্রভু রঘুনাথ গোস্বামীকে দেখেই বুঝেছিলেন যে তার মনে তীব্র বৈরাগ্যের সৃষ্টি হয়েছে কিন্তু তিনি রঘুনাথ দাসের প্রেম ভক্তি ধন গ্রহণ করলেন না, তিনি দুই বার রঘুনাথ দাসকে ফিরিয়ে দিলেন। রঘুনাথ দাসের মনে তখন চৈতন্যের উদয় হলো, তিনি বুঝতে পারলেন যে, নিত্যানন্দ মহাপ্রভুর কৃপা ব্যতীত চৈতন্য কৃপা লাভ করা যায় না। এরপর পানিহাটি গ্রামে নিত্যানন্দ মহাপ্রভু আসছেন শুনে তাঁর দর্শন লাভের প্রত্যাশী হয়ে রঘুনাথ দাস সেখানে যান এবং নিত্যানন্দের চরণতলে লুটিয়ে পড়েন। শ্রী নিত্যানন্দ প্রভু রঘুনাথ দাসকে চোর বলে সম্মোধন করে বলেছিলেন, এখানে এসো আমি তোমাকে দন্ড দেবো।
আসলে শ্রী নিত্যানন্দ মহাপ্রভুর কৃপা ব্যতীত শ্রী চৈতন্য মহাপ্রভুর কৃপা লাভ করার চেষ্টা করছিলেন বলেই রঘুনাথ দাসকে তিনি চোর বলেন, রঘুনাথ দাসকে দেখে তিনি বলেন যে, “রঘুনাথ তুই এতদিন চোরের মতন পালিয়ে থেকে অবশেষে আজ আমাকে দর্শন দিলি, দাঁড়া, আজ তোকে আমি দন্ড দেব।”
নিত্যানন্দ মহাপ্রভু ছিলেন অত্যন্ত কৃপালু চরিত্রের এবং তাঁর চরিত্রের আরো একটি দিক ছিল তিনি অত্যন্ত হাস্য রসাত্মক কাজকর্ম করতেন। তাই নিত্যানন্দ মহাপ্রভু শ্রী রঘুনাথ দাসের মস্তকে নিজের পাদপদ্ম রেখেছিলেন এবং তাঁকে দন্ড স্বরূপ বলেছিলেন, “একটি মহোৎসবের আয়োজন করো এবং আমার সকল পর্ষদদের চিড়া ও দধি সেবন করাও। ”
শ্রী নিত্যানন্দ মহাপ্রভুর কাছ থেকে এই দণ্ড গ্রহণ করে শ্রী রঘুনাথ দাস অত্যন্ত আনন্দিত হন এবং এই উৎসবটি তারপর থেকে পানিহাটি মহোৎসব বা দন্ড মহোৎসব নামে পরিচিত হয়।
তাই আজকের দিনে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ, মহাপ্রভু ও নিত্যানন্দকে যদি দধি চিড়া নিবেদন করা হয় তাহলে তা অত্যন্ত পূর্ণ ফল দায়ী এবং মনস্কামনা পূর্ণকারী হয় বলে মনে করা হয়।