সন্তোষ মণ্ডল, আসানসোলঃ– বিগত কয়েক বছর ধরে আসানসোল জুড়ে সরকারি জমি লুঠের অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ সরকারি জমি দখল করে তা ঘিরে প্লট হিসাবে বিক্রির কারবার ফেঁদে বসেছে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী । শহরের ১৯ নম্বর জাতীয় সড়ক লাগোয়া এলাকা, কন্যাপুর, ধেমোমেন, বার্নপুরের মতো নানা জায়গায় জমি দখল করে তা বিক্রির অভিযোগ উঠেছে। জেলা প্রশাসন সূত্রে খবর এখনও পর্যন্ত প্রায় ৩.১৯ একর সরকারি খাস জমি দখল করার তথ্য সামনে এসেছে। সম্প্রতি বেদখল হওয়া জমি উদ্ধারের নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট। সেই নির্দেশ অনুসারে জমি পুনরুদ্ধারে নেমেছে পশ্চিম বর্ধমান জেলা প্রশাসন। যদিও বিরোধীদের দাবি শাসক দলের নেতাদের মদতেই চলছে জমির এই অবৈধ কারবার। তাই জেলা প্রশাসন চাইলেও কিছু করতে পারবে না।
অন্যদিকে হাইকোর্টের নির্শেদের পরই জমি উদ্ধারে তৎপরতা শুরু করেছে জেলা প্রশাসন। বিষয়টি নিয়ে অতিরিক্ত জেলাশাসক (ভূমি সংস্কার) সন্দীপ টুডু জানান, মহকুমাশাসককে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যেই শিল্পাঞ্চলে গড়ে ওঠা বিভিন্ন নির্মিয়মান আবাসনে সরকারি খাস জমি দখল করা হয়েছে কিনা খোঁজ নিতে শুরু করেছে পশ্চিম বর্ধমান জেলা ভূমি দপ্তর। শহর জুড়ে বেশকিছু এলাকায় ভূমি দপ্তরের পক্ষ থেকে লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে সরকারি ভেস্টেড ল্যান্ডের বোর্ড। শুধু তাই নয় নির্মিয়মান আবাসন এলাকায় খাস জমি দখল করে দেওয়া বাউন্ডারিও ভেঙে দেওয়া হচ্ছে প্রশাসনের পক্ষ থেকে।
অন্যদিকে সরকারি জমি দখল করে অবৈধ কারবার চালানো অসাধু ব্যবসায়ীদের উদ্দেশ্য রীতিমতো হুঁশিয়ারি দিয়েছেন আসানসোল দুর্গাপুর উন্নয়ন পর্ষদ (এডিডিএ) এর চেয়ারম্যান তাপস বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, “আইনের হাত অনেক লম্বা। যারা ভাবছেন অন্যায় করে পার পেয়ে যাবেন তা সম্ভব নয়। দশ বছর পর হলেও ধরা পড়বে। অসাধু ব্যবসায়ীরা ভাবছেন যেমন তেমন ভাবে জমি দখল করা বোধ হয় খুব সহজ। আর মানুষকে ভুল বুঝিয়ে বিক্রি করে দিচ্ছেন। এ সব আর চলবে না।”
অপর দিকে তৃণমূল নেতা তথা আসানসোল মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান অমর নাথ চট্টোপাধ্যায় মানুষকে এই অবৈধ জমি কারবারীদের কাছ থেকে সতর্ক থাকার কথা জানিয়েছেন। তিনি বলেন, “অনেক জমি পুরোনো। কিছু কিছু জমির কাগজও নেই। আবার প্রয়োজনে কিছু জমির কাগজ ছিড়ে ফেলাও হয়েছে। তাই জনগণের কাছে অনুরোধ জমি কেনা বেচার আগে দেখে নিন। দরকার হয় আরো ৫০০ টাকা বেশি খরচ করে উকিল দিয়ে কাগজ পত্র সার্চ করিয়ে নিন। আসানসোলে কাগজ না থাকলে বর্ধমানে যান।” পাশাপাশি তিনি প্রমোটারদের উদ্যেশ্যে বলেন, “ভালো করে কাগজ দেখে কাজ করুন।”
যদিও বিরোধী নেতা তথা বিজেপির রাজ্য নেতা কৃষ্ণেন্দু মুখার্জি বলেন, “তৃণমূল কংগ্রেস রাজ্যে ক্ষমতায় আসার পর সরকারি জমির পাট্টা অবৈধভাবে দলের নেতা কর্মী ও তাদের আত্মীয়স্বজনের নামে করে দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি সেই সব জমির চরিত্র বদল করে ফেলা হচ্ছে এবং বেনামে বেহাত হয়ে যাচ্ছে। এমকি তৃণমূল কংগ্রেসের সমস্ত দলীয় কার্যালয় সরকারি জমি দখল করে গড়ে তোলা হয়েছে। আসানসোল কর্পোরেশনের তরফে মাঝে মাঝে লোক দেখানো উচ্ছেদ অভিযান চালানো হয়। মা মাটি মানুষের স্লোগান দিয়ে যারা ক্ষমতায় এসেছিল আজ সেই নেতারা মা মাটির দালালি করছে। তৃণমূল কংগ্রেসের বড় বড় রাঘব বোয়ালরা এর সঙ্গে জড়িত। আমরা প্রশাসনকে বার বার জানিয়েছি, তবুও অবৈধ জমির কারবার বন্ধ হয়নি।” বিষয়টি নিয়ে আগামী দিনে বৃহত্তর আন্দোলনে নামারও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন বিজেপি নেতা।
যদিও হাইকোর্টের নির্দেশে জেলা প্রশানের জমি পুনরুদ্ধারের এই তৎপরতা তথা অভিযানকে সাধুবাদ জানিয়েছেন শহরের শুভবুদ্ধি সম্পন্ন মানুষ জন।