সংবাদদাতা, আসানসোলঃ– যেন মৃত্যুকে ছুঁয়ে ফিরেছেন ওঁরা। সেদিনের ভয়ঙ্কর ট্রেন দুর্ঘটনার কথা বলতে গিয়ে এখনও কেঁপে উঠছে শরীর। রূপনারায়ণপুরের ঋতিশঙ্কর রায়,চিত্তরঞ্জনের মুনেশ কুমার, রাকেশ কুমার এবং সঞ্জয় পাল বেঁচে ফিরে জানালেন সেই ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতা কথা।
ঋতিশঙ্কর রায়,মুনেশ কুমার, রাকেশ কুমার এবং সঞ্জয় পাল চিকিৎসার জন্য বেঙ্গালুরু গিয়েছিলেন। চিকিৎসা করিয়ে গত ২ জুন বেঙ্গালুরু-হাওড়া যশবন্তপুর এক্সপ্রেস ফিরছিলেন। আর ফেরার পথেই ঘটে সেই ভয়াবহ দুর্ঘটনা। ওড়িশার বালেশ্বরের বাহানাগা বাজার স্টেশনের কাছে ১২৮ কিমি বেগে থাকা শালিমার-হাওড়া করমণ্ডল এক্সপ্রেস দাঁড়িয়ে থাকা একটি মালগাড়িকে ধাক্কা মেরে লাইনচ্যুত হয়। ট্রেনের ইঞ্জিন উঠে যায় মালগাড়ির উপরে। ট্রেনের অধিকাংশ কামড়াই লাইচ্যুত হয়ে একে অপরের সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে প্রায় দলা পাকিয়ে যায়। ওই সময় পাশের লাইন দিয়ে যাচ্ছিল বেঙ্গালুরু-হাওড়া যশবন্তপুর এক্সপ্রেস। লাইন চ্যুত হওয়া করমণ্ডল এক্সপ্রেসের কামড়ার ধাক্কায় ওই ট্রেনটিও ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
ঋতিশঙ্করবাবু জানান তারা এসি কামরায় ছিলেন। প্রথমে ভয়ঙ্কর একটা শব্দ তাদের কানে আসে এবং তারপরই এসির সমস্ত কাঁচের জানলা ভেঙে চারিদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে। অন্ধকার নেমে আসে। সেই অবস্থায়ও ট্রেন কিছুটা চলে থেমে যায়। এরপর ওই ট্রেনের টিটি সহ কর্মীরাই একে একে তাদের উদ্ধার করেন। রাতের অন্ধকারেই তাদের ট্রেন থেকে নামিয়ে বসানো হয় রেল লাইনের ধারে। স্থানীয়দের সাহায্য়ে জল ও তিছু খাবারেরও ব্যবস্থা করে দেন রেলকর্মীরা এবং তাদের ওইখানেই অপেক্ষা করার পরামর্শ দেন। সন্ধ্যে থেকে রাত তিনটে পর্যন্ত দুর্ঘটনা এলাকাতেই কাটাতে হয় তাদের। আর সেই সময় আহত রেল যাত্রীদের আর্তনাদ, ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে থাকা ধংসস্তূপে চাপা পড়া মানুষজন, মৃতদেহ দেখে আতকে উঠেছিলেন সকলে। অবশেষে রাত তিনটে নাগাদ তাদের ট্রেনটি মেরামতি করে যাত্রা শুরু করে এবং পরদিন ৩ তারিখ দুপুরে হাওড়ায় পৌঁছয়।
সেদিনের সেই ভয়ঙ্কর দৃশ্য আজও ভুলতে পারছেন না আসানসোলের চার বাসিন্দা। বার বারা চোখের সামনে ফিরে আসছে সেই স্মৃতি। সারা জীবনে আদৌ ওই ভয়ঙ্কর স্মৃতি ভোলা সম্ভব হবে কিনা তাও জাননে না কেউ। তবে দুর্ঘটনার সঠিক তদন্তের পাশাপাশি এরকম দুর্ঘটনা যাতে ভবিষ্যতে আর না হয় তার আবেদন জানিয়েছেন ঋতিশঙ্করবাবুরা।
অন্যদিকে এদিন সালানপুর ব্লক তৃর্ণমুল কংগ্রেসের পক্ষ থেকে ঋতি শঙ্কর রায়ের আবাসনে গিয়ে ফুলের তোড়া ও মিষ্টির দিয়ে শুভেচ্ছা জানান জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষ মহম্মদ আরমান সহ দলের অন্যান্যরা।