সূচনা গাঙ্গুলি,দুর্গাপুরঃ- দুর্গাপুর শহরের বিখ্যাত অস্থিরোগ বিশেষজ্ঞ হলেন ডা: উদয়ন চৌধুরী। একডাকে সবাই চেনে। এইরকম হাইপ্রোফাইল চিকিৎসকের জন্মদিন মানেই সাজোসাজো রব, উৎসবের মেজাজ। বড় প্যাণ্ডেল, মায়াবী আলোর ঝলকানি, হাল্কা মিউজিক। রঙিন ঝলমলে পোশাক পরিহিত আত্মীয় স্বজনের ভিড়, নিজের পেশার জগতের মানুষের উজ্জ্বল উপস্থিতি, টেবিল ভরে যেত দামি উপহারে, কেক কাটার সময় ঝলসে উঠত ক্যামেরার ফ্ল্যাশ বাল্ব – সব মিলিয়ে সৃষ্টি হতো এক স্বপ্নময় পরিবেশের এবং সেটাই হতো স্বাভাবিক ঘটনা।
অথচ এলাকার মানুষ অবাক বিস্ময়ে তাকিয়ে দেখল তাদের সবার প্রিয় ডাক্তারবাবু নিজের জন্মদিন পালন করলেন তারই সদ্য প্রতিষ্ঠিত ‘ছোঁয়া’-র একঝাঁক আদরের অসহায় ফুটফুটে শিশুদের সঙ্গে। জন্মদিনের সকালবেলায় তাদের মাঝেই কাটলেন জন্মদিনের কেক এবং মেতে উঠলেন শিশুসুলভ আনন্দে। সেইসময় তার পাশে ছিলেন তার চিকিৎসক স্ত্রী ও কন্যা এবং তার প্রতিষ্ঠিত স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ‘উত্তিষ্ঠত জাগ্রত ও জাগো নারী (ট্রাস্ট)’-র সদস্যরা।
প্রসঙ্গত বিভিন্ন বিষয়ে প্রতিভা থাকা সত্ত্বেও যেসব গরীব ঘরের শিশুরা নিজেদের প্রতিভা বিকাশের সুযোগ পায়না তাদের দিকে স্নেহের ছোঁয়া দেওয়ার নিজের একমাত্র সন্তানের জন্মদিনে দিনের আলোর মুখ দেখে ‘ছোঁয়া’। ঠিক হয় অসহায় দুস্থ প্রতিভাবান শিশুদের এখানে সম্পূর্ণ বিনা খরচে পড়াশোনা, অঙ্কন, নৃত্য, গীত ইত্যাদি শেখানোর সঙ্গে সঙ্গে বিনা খরচে শিক্ষা সামগ্রী দেওয়া হবে।
শুধু তাই নয় এলাকার মানুষের আহ্বানে সাড়া দিয়ে বাঙালি মনে কবি চেতনা ফিরিয়ে আনতে নিজের স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ‘উত্তিষ্ঠত জাগ্রত ও জাগো নারী (ট্রাস্ট)’-এর পক্ষ থেকে আড়রা কালীনগর মিলন তীর্থ ক্লাব ময়দানে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের অবক্ষ মূর্তি প্রতিষ্ঠা করা হয়। ফেলে দেওয়া প্লাস্টিকের বোতল দিয়ে মূর্তির চারপাশে সাজসজ্জা করা হয়। এর আগে তিনি আড়রা মোড়ে নেতাজির মূর্তি স্থাপন করেন।
মূর্তি উন্মোচন করেন পান্ডবশ্বরের বিধায়ক নরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী। উপস্থিত ছিলেন ডিএমসি বোর্ড অফ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন এর সদস্য দীপঙ্কর লাহা, রাখি তেওয়ারি, সাগরভাঙা উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রাজীব চ্যাটার্জ্জী সহ শহরের বেশ কিছু গুণীজন।
মূর্তি উদ্বোধন করার পর বিধায়ক বললেন – বর্তমান যুগে এরকম সমাজ বান্ধব ডাক্তার পাওয়া খুবই কঠিন। সৌভাগ্য আমাদের মাঝে এরকম একজন সমাজসেবী চিকিৎসককে পেয়েছি।
প্লাষ্টিক ফ্রি ও দূষণ মুক্ত দুর্গাপুর শহরের ডাক দিয়ে উদয়ন বাবু বললেন- শুধু আজ নয় দীর্ঘদিন ধরেই সবার মাঝে আমি আমার জন্মদিন পালন করে চলেছি এবং সেক্ষেত্রে একটা আলাদা তৃপ্তি পাই। শিশুদের মুখের হাসি আমার কাছে পার্থিব উপহার সামগ্রীর চাইতে অনেক বেশি মূল্যবান।