নিজস্ব সংবাদদাতা, দুর্গাপুরঃ- এক নাবালিকা নিখোঁজের ঘটনায় শোরগোল পড়ে গেছে দুর্গাপুর শিল্প শহরে। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে সামনে এসেছে শহরে একটি সক্রিয় ‘মেয়েধরা’ চক্র। অভিযোগ যারা নানা কৌশলে শহরের কিশোরীদের নেশার মায়াজালে আবদ্ধ করে তাদের দিয়ে নানান ভিডিও তৈরি করে ব্ল্যাকমেল করছে। ঘটনার তদন্তে নেমে ইতিমধ্যেই রাহুল পরামানিক নামে এক যুবককে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার ধৃতকে দুর্গাপুর মহকুমা আদালতে পেশ করা হয়।
ঘটনার সূত্রপাত দিন দুই আগে। ইস্পাত নগরীর এ-জনোর, তুলসী দাস বস্তি এলাকার বাসিন্দা হালদার পরিবারের বছর বারোর এক কিশোরী গত ১৩ জুন ভোররাতে নিজের বাড়ি থেকে নিখোঁজ হয়ে যায়। দুর্গাপুর থানার দ্বারস্থ হয় কিশোরীর বাবা-মা। অবশেষে পুলিশ তদন্তে নেমে ইস্পাত নগরীর হোস্টেল এ্যাভিনিউর বস্তি থেকে রাহুল পরামানিক ওরফে ‘লাকি’ নামক এক যুবকের বাড়ি থেকে ওই নাবালিকাকে উদ্ধার করে ও রাহুল পরামানিককে গ্রেপ্তার করে।
নাবালিকার মা জানিয়েছেন, “বেশ কিছুদিন ধরেই মেয়ের আচার আচরণে কিছু অস্বাভাবিকতা লক্ষ্য করছিলেন তিনি। প্রায়ই তার মেয়েকে হোয়াটঅ্যাপে ম্যাসেজ বা কল করতো কেউ বা কারা । আর ওই কল পেয়েই মেয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যেত। এমনকি ইদানিং মাঝে মধ্যেই ঝিমিয়ে পড়ছিল তার মেয়ে। এরই মধ্যে গত ১৩ তারিখ ভোর ৩টে নাগাট বাড়ি থেকে বেরিয়ে নিখোঁজ হয়ে যায় তাদের মেয়ে।” দিনভর খোঁজাখুজি করেও কোনও হদিশ না মিললেও ওই দিন প্রায় মাঝ রাতে ‘কাঞ্চা’ নামের যুবক নাবালিকার বাবাকে ফোন করে মেয়েকে নিয়ে যেতে বলে। এরপরই পুলিশের দ্বারস্থ হন নাবালিকার মা ও তার স্বামী।
ওই নাবালিকার মায়ের অভিযোগ শহরে একটি ব্ল্যাকমেল চক্র সক্রিয় হয়েছে। চক্রটির নজরে রয়েছে শহরের কিশোরীরা। যাদের নানা প্রলোভন দিয়ে ফুসলিয়ে নেশার সামগ্রী খাইয়ে হাত করা হচ্ছে। পরে নেশাগ্রস্ত অবস্থায় ওই কিশোরীদের দিয়ে ভিডিও তৈরি করা হচ্ছে এবং ওই ভিডিও ব্ল্যাকমেলের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। মহিলার দাবি এই চক্রের মূল পাণ্ডা ‘কাঞ্চা’ নামের এক যুকব। উল্লেখ্য ধৃত রাহুল এই কাঞ্চারই শ্যালক।
এই ঘটনায় ধৃত রাহুল পরামানিক ছাড়াও অঙ্কিত সিং ও রাজ ইকবাল নামে আরও দুই যুবকের বিরূদ্ধেও এফআইআর দায়ের করেছেন নাবালিকার বাবা-মা। যদিও তাদের এখনও হদিশ পায়নি পুলিশ। তবে জানা গেছে ধৃত রাহুল পরামানিক সহ অভিযুক্ত দুই যুবক ইস্পাত নগরীর জঙ্গলমহল নামক একটি ক্লাবের সদস্য বলে অভিযোগ নাবালিকার মা এর ।
দুর্গাপুরের মতো শান্তিপ্রিয় এলাকায় এই ধরণের অপরাধমূলক ঘটনা আগে কখনও সামনে আসেনি। এদিকে বিস্ফোরক এই ঘটনা সামনে আসতেই আতঙ্ক ছড়িয়েছে শহরের অভিভাবকদের মধ্যে। যদিও পুরো বিষয়টি নিয়ে তদন্তে নেমেছে দুর্গাপুর থানার পুলিশ এবং ধৃতকে জিজ্ঞাসাবাদ করে তদন্তে গতি আনতে চাইছে।