সংবাদদাতা,বাঁকুড়াঃ- হিন্দুদের অন্যতব বড় ধর্মীয় উৎসব রথ যাত্রা উৎসব। প্রতি বছর হিন্দু ক্যালেন্ডারের আষাঢ় মাসের শুক্লপক্ষের দ্বিতীয় তিথিতে জগন্নাথ দেবের রথ যাত্রা উৎসব পালিত হয়। উৎসবে অংশ নিতে বিদেশের বহু ভক্ত ও দর্শনার্থী ভারতে আসেন। কথিত আছে এদিন ভগবান জগন্নাথ, দাদা বলভদ্র ও বোন সুভদ্রাকে সঙ্গে নিয়ে রথে চড়ে মাসির বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দেন এবং সেখানে সাতদিন বসবাস করে উল্টোরথের দিন ফের রথে চড়ে ঘরে ফেরেন। হিন্দু বিশ্বাস অনুযায়ী রথে বিরাজমান প্রভু জগন্নাথকে দর্শন করলে ও রথের রশিতে টান দিলে জন্ম-জন্মান্তরের চক্র থেকে মুক্তি মেলে। ওড়িশার পুরিতে জগন্নাথ প্রভুর মূল উৎসবটি পালিত হলেও দেশ জুড়ে পালিত হয় রথাযাত্রা উৎসব।
বাঁকুড়ার শহরেও কয়েকশো বছর ধরে রথযাত্রা উৎসব পালিত হয়ে আসছে। শহরের প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী রথগুলির মধ্যে অন্যতম বড় রথ ও ছোট রথ। কিন্তু মজার বিষয় হল যে রথটি উচ্চতায় বড় সেটির নাম ছোট রথ এবং যেটির উচ্চতায কম সেটির নাম বড় রথ। কি অদ্ভুত নামকরণ ভাবুন দেখি! আসলে বাঁকুড়ার ব্যাপারীহাটের বড় রথ উচ্চতায় শ্রী শ্রী শ্যামসুন্দর রথ কমিটির রথের চেয়ে ছোট হলেও নাম বড় রথ কারণ সে বয়সে ছোট রথের চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ। এই ব্যাপারী হাটের বড় রথ প্রায় ১১৪ বছরের পুরনো। ঐতিহ্যবাহী এই রথ টানা হয় মোটরে এবং যাতে লাগানো আছে চারচাকার স্টিয়ারিং। অন্যদিকে শ্রী শ্রী শ্যামসুন্দর রথ কমিটির ছোট রথ উচ্চতায় সুবিশাল। পুরো রথটি পিতলের তৈরি। সোনার মতো ঝলমলে এই রথ দৃষ্টিনন্দনও বটে। রথ কমিটি জানায় যে এই রথ প্রায় ৬৩ বছর পুরনো হলেও আসলে যে রথ শ্রী শ্রী শ্যামসুন্দর রথ কমিটির ছিল সেই রথ এখন বর্তমানে বাঁকুড়ার মেজিয়াতে চলছে, ফলেই ঠিক কতটা পুরনো এই শ্রী শ্রী শ্যামসুন্দর রথ তা রথ কমিটির হিসাব করে বলতে পারেন না।
প্রতিবছরই এই দুই রথ দেখা ও রথের রশিটে টান দেওয়ার জন্য পোদ্দার পাড়া এবং নতুন গঞ্জ এলাকায় দর্শনার্থীদের ঢল নামে। এদিন বাঁকুড়া শহরের বড় ও ছোট রথ উৎসবের আনন্দে মেতে ওঠেন শহরবাসী।