সংবাদদাতা, বাঁকুড়া:– ” চালক সিগন্যাল আউটলুক করায় ঘটেছে দুর্ঘটনা। হয়তো ঘুমিয়ে পড়েছিলেন চালক, আর সেই কারণেই সিগনাল আউটলুক করেন তিনি।” বাঁকুড়ার ওন্দা স্টেশনের কাছে ঘটে যাওয়া রেল দুর্ঘটনার জন্য চালকের গাফিলতিকেই দায়ী করলেন আদ্রা ডিভিশনের ডিভিশনাল রেলওয়ে ম্যানেজার (ডিআরএম) মণীশ কুমার।
প্রসঙ্গত রবিবার ভোরে বাঁকুড়ার ওন্দা স্টেশনের কাছে দুর্ঘটনার কবলে পড়ে দু’টি মালগাড়ি। লুপ লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা মালগাড়িকে পিছন দিক থেকে এসে সজোরে ধাক্কা মারে বাঁকুড়া থেকে বিষ্ণুপুরগামী অপর একটি মালগাড়ি। হোম সিগন্যাল আউটলুক করে থ্রু লাইন বরাবর না এগিয়ে লুপ লাইনে ঢুকে পড়ে মালগাড়িটি। গতি বেশি থাকায় লাইন থেকে ছিটকে যায় চলন্ত মালগাড়ির একাধিক বগি এবং ইঞ্জিনটি দাঁড়িয়ে থাকা মাল গাড়ির উপরে ওঠে যায় ও দুমড়ে মুচড়ে যায়। দুই মালগাড়ির মোট ১৩টি ওয়াগন লাইনচ্যুত হয়। ক্ষতিগ্রস্ত হয় আপ এবং ডাউন লাইন এবং ওভারহেড তারও। দুর্ঘটনার জেরে বন্ধ হয়ে যায় আদরা খড়্গপুর শাখায় ট্রেন চলাচল। বাতিল করা হয় একাধিক ট্রেন। সেই তালিকায় আছে, পুরুলিয়া-হাওড়া, আসানসোল-দিঘা, আদ্রা-খড়্গপুর প্যাসেঞ্জার, বিষ্ণুপুর-আদ্রা প্যাসেঞ্জার, বিষ্ণুপুর-ধানবাদ, খড়্গপুর-আসানসোল, সাঁতরাগাছি-পুরুলিয়া এক্সপ্রেস, খড়্গপুর-হাতিয়া এক্সপ্রেস, গোমো-খড়্গপুর, আদ্রা-আসানসোল, আসানসোল-টাটা মেমু। এ ছাড়া, আনন্দবিহার টার্মিনাল-পুরী এক্সপ্রেস আদ্রা-টাটা-হাতিয়া লাইনে এবং পোরবন্দর-সাঁতরাগাছি এক্সপ্রেস পুরুলিয়া-টাটা-খড়্গপুর লাইনে ঘুরিয়ে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছে রেল।
যদিও দ্রুত পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার চেষ্টা শুরু করে দেয় রেল কর্তপক্ষ এবং আপ লাইনে ট্রেন চলাচল শুরু করে। বর্তমানে যুদ্ধকালীন তৎপরতার সাথে চলছে লাইন পরিষ্কার করার কাজ। তবে ধংসস্তূপ সরিয়ে ডাউন লাইনে ট্রেন চলাচাল স্বাভাবিক করতে আরও সময় লাগবে বলে জানিয়েছেন ডিআরএম।
এদিন ঘটনাস্থল পরিদর্শনে এসে ডিআরএম সাংবাদিকদের বলেন, ‘‘চালকের ভুলের কারণেই এই দুর্ঘটনা। মনে হচ্ছে, ওঁর চোখ লেগে এসেছিল। তাই চালক সিগন্যাল দেখতে পাননি। সিগন্যাল লাল ছিল। পয়েন্ট লুপ লাইনের দিকে সেট করা ছিল। সেখানে অন্য মালগাড়ি দাঁড়িয়ে ছিল। পিছন থেকে সেই মালগাড়িটিতে ধাক্কা মারেন চালক।’’ তবে এই ঘটনায় কেউ তেমন আহত হননি বলে জানিয়েছেন ডিআরএম।
এদিনের রেল দুর্ঘটনা ওড়িশার বালেশ্বরের ট্রেন দুর্ঘটনার স্মৃতি ফিরিয়ে দিয়েছে । গত ২ জুন হাওড়ার শালিমার থেকে চেন্নাইগামী করমণ্ডল এক্সপ্রেস বালেশ্বরের বাহানগা বাজার স্টেশনের কাছে লাইনচ্যুত হয়। করমণ্ডল এক্সপ্রেস লুপ লাইনে ঢুকে পড়ে এবং সেখানে দাঁড়িয়ে থাকা মালগাড়িতে প্রচণ্ড গতিতে ধাক্কা মারে। যার জেরে করমণ্ডলের ইঞ্জিন উঠে যায় মালগাড়ির উপরে। অন্যদিকে উল্টো দিক থেকে আসা বেঙ্গালুরু-হাওড়া সুপারফাস্ট এক্সপ্রেসের কয়েকটি বগিও লাইনচ্যুত হয়। এই দুর্ঘটনায় ২৯১ জনের মৃত্যু হয়। আহত হন হাজারেরও বেশি যাত্রী।