সঙ্গীতা চ্যাটার্জী (চৌধুরী)ঃ- কথায় বলা হয় ভগবান দয়াময়, তিনি ভক্তের শত অপরাধ ক্ষমা করেন। কিন্তু শত অপরাধ ক্ষমা করার এই আইডিয়াটা প্রথম এসেছিল শিশু পালের সময় থেকে। সনাতনশাস্ত্র গভীর থেকে না জানলেও যারা মোটামুটি মহাভারতের গল্প শুনেছেন, তারা জানেন যে, যুধিষ্ঠিরের সভায় শিশু পালকে সকলের সামনে সুদর্শন চক্র দিয়ে বধ করেছিলেন ভগবান শ্রীকৃষ্ণ, কিন্তু শ্রীকৃষ্ণের প্রতি প্রথম অপরাধের কারণেই ভগবান এমন আচরণ করেন নি, সেদিন যুধিষ্ঠিরের সভায় শিশু পালের কৃষ্ণের প্রতি করা শত অপরাধ পূর্ণ হয়েছিল আর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বলেছিলেন যে, তিনি শিশুপালের শত অপরাধ ক্ষমা করবেন তাই যুধিষ্ঠিরের সভায় শিশু পাল যখন ভগবান শ্রীকৃষ্ণের বিষয়ে একের পর এক অপশব্দ বলতে থাকেন,তখন ভগবান অপেক্ষা করছিলেন, এরপর দ্রৌপদী এবং শ্রীকৃষ্ণের সম্পর্ক নিয়ে কুরুচিকর আক্রমণ করায় যখন শিশু পালের শত অপরাধ পূর্ণ হলো, তখন শিশুপালের উপর নেমে এলো নিয়তি নির্ধারিত চরম আক্রমণ, শিশুপালের মৃত্যু রূপে।
কিন্তু আপনারা কি জানেন শিশুপালের ১০০ টা ভুল ক্ষমা করার বরদান ভগবান শ্রীকৃষ্ণ কেন শিশু পালকে দিয়েছিলেন? আজকে আমি আপনাদের সেই প্রশ্নের উত্তরই দেব। সনাতন শাস্ত্রে বলা হয় শিশুপাল ছিলেন ভগবান শ্রীকৃষ্ণের পিসতুতো ভাই। শিশুপালের যখন জন্ম হয় তখন তার শরীরের গঠন ছিলো রাক্ষসের মত, তার চারটি হাত ছিল, তিনটে চোখ ছিল। নবজাতক শিশুর এই চেহারা দেখে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের পিসি ও তার স্বামী দুজনে মিলে ভয় পেয়ে যান, তারা শিশুটিকে ত্যাগ করবার সিদ্ধান্ত নেন, তখনই দৈববাণী হয় যে, এই বাচ্চাটিকে এখনই ত্যাগ করবার প্রয়োজন নেই, একটি নির্দিষ্ট সময় আসবে যে সময় তার দুটি হাত এবং একটি চোখ নিজে থেকেই বিলুপ্ত হয়ে যাবে, কিন্তু যার সংস্পর্শে এসে এই শিশু রাক্ষস আকৃতি থেকে সাধারণ শিশুর আকৃতি পাবে তার হাতেই তার বিনাশ অর্থাৎ মৃত্যু হবে।
এরপর একবার ভগবান শ্রীকৃষ্ণ তার পিসির বাড়ি বেড়াতে আসেন ও ছোট্ট শিশুপালকে দেখে তিনি কোলে নেন, শিশুটিকে কোলে নেওয়ার সাথে সাথে শিশু পালের একটি চোখ ও দুটি হাত গায়েব হয়ে যায়, শিশুপালের মা তাদের সন্তানকে সাধারণ আকৃতিতে ফিরে পেয়ে খুশি হয় কিন্তু সেই সময় তাদের দৈববাণী মনে পড়ে যায় যে, যার হাতে শিশু স্বাভাবিক আকৃতি পাবে, তার হাতেই তার বিনাশ হবে।
তখন শ্রীকৃষ্ণের পিসি শ্রীকৃষ্ণ কে বলেন যে আপনি আমায় প্রতিজ্ঞা করুন যে আপনি কখনোই শিশু পালকে বধ করবেন না, ভগবান শ্রীকৃষ্ণ তো সবই জানেন তিনি কি করে এরকম প্রতিশ্রুতি করেন? তখন তিনি এই প্রতিশ্রুতি করতে অস্বীকার করেন। পরে তার পিসির জোরাজুরি তে তিনি তার পিসিকে এই প্রতিজ্ঞায় প্রতিশ্রুত হন যে, শিশুপালের শত অপরাধ তিনি ক্ষমা করবেন। শিশুপাল তো তার ভুলের গননায় ভুলে গিয়েছিল মোহের বশে, কিন্তু আমরাও সেই একই ভুল করছি না তো?-হরে কৃষ্ণ, রাধে রাধে।