সংবাদদাতা, বিষ্ণুপুরঃ– এবার থেকে মন্দির নগরী বিষ্ণুপুর শহরে প্রবেশ করতে গেলে দিতে হবে কর। বিষ্ণুপুর পৌরসভার এহেন নির্দেশিকা ঘিরে শহর জুড়ে শুরু হয়েছে জোর জল্পনা। যদিও মহকুমা শাসক ওই নির্দেশিকার বিষয়ে কিছু জানেননা বলে দাবি করেছেন।
বিশেষ সূত্র মারফত জানা গেছে বিষ্ণুপুর পৌরসভার পক্ষ থেকে একটি বিশেষ নির্দেশিকা জারি করা হয়েছে। যাতে বলা হয়েছে, ‘আগামী ১/৮/২০২৩ তারিখ থেকে বিষ্ণুপুর পৌর এলাকায় প্রবেশকারী সকল বহিরাগত যাত্রীবাহী ও পণ্যবাহী যানবাহনকে প্রবেশ কর দিতে হবে। পাশাপাশি সমস্ত যানবাহন চালক, মালিক ও জনসাধারণের কাছে বিশেষ অনুরোধ করা হয়েছে যাতে তারা নীলকন্ঠ এন্টারপ্রাইজ নামক টোল ট্যাক্স আদায়করী সংস্থার কর্মীদের সাথে এবিষয়ে অর্থাৎ কর দিয়ে পূর্ণ সহযোগিতা করেন।’
এখন প্রশ্ন উঠেছে যদি সত্যি সত্যিই বিষ্ণুপুর পৌরসভার পক্ষ থেকে এই নির্দেশিকা জারি হয়েছে, তাহলে হঠাৎ করে একটি বেসরকারি সংস্থাকে কেন দায়িত্ব দেওয়া হল এই টোল ট্যাক্স আদায় করার । সাধারণ বাসিন্দারা এও জানতে চেয়েছেন যে, ‘এই টোল ট্যাক্স বা প্রবেশ কর সংক্রান্ত কোনো টেন্ডার কি ডাকা হয়েছিল ।’
অন্যদিকে এই নির্দেশিকা ঘিরে বিষ্ণুপুর শহর লাগোয়া এলাকার বাসিন্দা থেকে শুরু করে পরিবহন ব্যবসায়ী ও পর্যটন ব্যবসার সাথে যুক্ত মানুষজনের মধ্যে রীতিমতো ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। একরাশ ক্ষোভ নিয়ে এক বেসরকারি বাস পরিবহন সংস্থার মালিক জানান প্রতিদিন অন্তপক্ষে তিনবার তাদেরকে বিষ্ণুপুর শহরে প্রবেশ করতে হয় যাত্রী ওঠানো নামানো করার জন্য। এখন যদি প্রতিবার শহরে প্রবেশের জন্য মোটা টাকা কর দিতে হয় তাহলে তাদের ক্ষতির সম্মুখীন হতে হবে। পরিবহন ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি শহর সংলগ্ন এলাকার বাসিন্দারাও বিষয়টি নিয়ে রীতিমতো ক্ষুব্ধ। জীবিকা সহ নানা কারণে প্রতিদিনই তাদের শহরে যাতায়াত করতে হয়। তাই হঠৎ করে পুরসভা কেন এধরণের সিদ্ধান্ত নিল তা নিয়ে কুল কিণারা পাচ্ছেন না তারা। এছাড়া মন্দির নগরী হিসেবে দেশের পর্যটন মানচিত্রে স্থান করে নেওয়া এই শহরে দেশ বিদেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বহু পর্যটক বছরভর ঘুরতে আসেন। তাই পুরসভার এই সিদ্ধান্তে পর্যটন শিল্পেরও ক্ষতি হতে পারে বলেও আশঙ্কা করছেন অনেকে।
যদিও বিষ্ণুপুরের মহকুমা শাসক অনুপ কুমার দত্তের সঙ্গে যোগাযোগ করে এবিষয়ে জানতে চাওয়া হলে তিনি জানান, “তার দপ্তরে এখনো অবধি এবিষয়ে কোনো নির্দেশিকার প্রতিলিপি এসে পৌঁছায়নি।” এমনকি বাঁকুড়া জেলার তৃণমূল কংগ্রেসের প্রথম সারির নেতা তথা সদ্য় সমাপ্ত পঞ্চায়েত নির্বাচনে জেলা পরিষদ থেকে বিপুল ভোটে জয়ী তৃণমূল প্রার্থী শুভাশিস বটব্যালের কাছে এবিষয়ে জানতে চাওয়া হলে তিনিও জানান, “তার কাছে এবিষয়ে কোনও খবর নেই। বিষ্ণুপুর পৌরসভার চেয়ারম্যানের কাছ থেকে পুরো বিষয়টি জেনে তিনি মন্তব্য করবেন।”
উল্লেখ্য ভারতবর্ষের বিভিন্ন রাজ্যের একাধিক শহরে প্রবেশ করতে গেলে প্রবেশ কর বা ‘টোল ট্যাক্স’ দিতে হয়। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের কোন শহরে এখনো অবধি এই নিয়ম কার্যকর নেই। তাহলে হঠাৎ করে বিষ্ণুপুর পৌরসভা কি করে এহেন সিদ্ধান্ত নিল এবং এই সিদ্ধান্তর পেছনে তাদের মূল উদ্দেশ্যটাই বা কি তা নিয়ে শুরু হয়েছে জোর জল্পনা।
এই বিষয়ে বিষ্ণুপুর পৌরসভার চেয়ারম্যান গৌতম গোস্বামীকে প্রশ্ন করা হলে তিনি পরিষ্কারভাবে জানিয়ে দেন, “রাজ্যের অন্যান্য পৌরসভা গুলির মতো বিষ্ণুপুর পৌরসভা ও যাত্রীবাহী ও পণ্য পরিবহনকারী গাড়িগুলির ওপর প্রবেশ কর বা টোল ট্যাক্স নেওয়া হবে । কিন্তু ইদানিং বেশ কিছু মানুষজন এই নির্দেশিকাকে নিয়ে বিভ্রান্তিকর প্রচার চালাচ্ছেন। আমরা পরিষ্কারভাবে বলে দিতে চাই বিষ্ণুপুর পৌরসভা কোনরকম পর্যটকদের গাড়ির ওপর টোল ট্যাক্স বা প্রবেশ কর নেবেনা বা আগামী দিনেও নেওয়া হবে না। শুধুমাত্র যাত্রীবাহী ও পণ্য পরিবহনকারী গাড়িগুলির ওপরেই প্রবেশ কর ও টোল ট্যাক্স নেওয়া হবে । একশ্রেণীর প্রচার মাধ্যম বিষ্ণুপুর পৌরসভার এই নির্দেশিকাটিকে ভুল ব্যাখ্যা করছেন মানুষের কাছে। বিষ্ণুপুর পৌরসভা সব সময় মানুষের সাথে রয়েছে ও আগামী দিনেও থাকবে। সম্পূর্ণ আইন মোতাবেক পৌরবোর্ড অনুমোদন নিয়ে ও বৈধ টেন্ডার মারফতই এই সংস্থাকে টোল ট্যাক্স বা প্রবেশ কর আদায় করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে ।”