নিজস্ব সংবাদদাতা ,দুর্গাপুরঃ– সদ্য সম্পন্ন হওয়া পঞ্চায়েত নির্বাচন ঘিরে এখনো চলছে ভোট পরবর্তী হিংসা। দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চল ও তার আশেপাশের এলাকায় একের পর এক বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতা কর্মীদের ওপর হামলার খবর আসছে । প্রায় সব জায়গাতেই শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস কর্মীদের দ্বারা আক্রান্ত হচ্ছেন বিরোধী দলের কর্মী সমর্থকরা বলে অভিযোগ। এমনই এক অভিযোগের ভিত্তিতে গত বুধবার পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হওয়া তৃণমূল কংগ্রেসের পঞ্চায়েত নির্বাচনে বিজয়ী প্রার্থীর স্বামী সহ মোট ১১ জনকে দুর্গাপুর মহকুমা আদালতে হাজির করে বুদবুদ থানার পুলিশ। বুদবুদ থানার পুলিশের পক্ষ থেকে বিচারকের কাছে ধৃতদের পুলিশি হেফাজতের আবেদন জানানো হয়। কিন্তু মাননীয় বিচারপতি অসীমানন্দ মন্ডল গ্রেফতার মোট ১১ জনকে ১৪ দিনের জেল হেফাজতের নির্দেশ দেন।
উল্লেখ্য পঞ্চায়েত নির্বাচনের ভোটের গননার দিন মানকর/বুদবুদ মহাকালী বিদ্যালয়ের কেন্দ্রের বাইরে জাতীয় কংগ্রেস নেতা ও কর্ম্মীদের মারধরের ও হত্যার ষড়যন্ত হয় বলে জাতীয় কংগ্রেসের পক্ষ থেকে অভিযোগ জানানো হয় বুদবুদ থানার পুলিশ ও নির্বাচন কমিশনের কাছে। এরপরেই স্থানীয় বুদবুদ থানার পুলিশ অভিযোগের ভিত্তিতে তৎপরতার সাথে মঙ্গলবার রাত্রেই গ্রেপ্তার করে ১১ জন তৃণমূল কর্মী সমর্থককে বুদবুদ ,মানকর ও তার আশেপাশের গ্রাম থেকে। গ্রেপ্তার হওয়া বাক্তিদের মধ্যে ছিলেন তৃণমূল কংগ্রেসের টিকিটের বিজয়ী প্রার্থীর স্বামী সহ ১১ জন । বুদবুদ থানার পুলিশের উদ্যোগে এ বিষয়ে এখনও তদন্ত চলছে বলে জানা গেছে। এই ঘটনায় এলাকা জুড়ে চাপা উত্তেজনা রয়েছে গত মঙ্গলবার রাত থেকেই। কেন্দ্রীয় বাহিনী ও বুদবুদ থানার পুলিশ এলাকায় টহল দিচ্ছে শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রাখার উদ্দেশ্যে।
এরই মধ্যে শুক্রবার সকালে দুর্গাপুর মহকুমা আদালতে দুর্গাপুর বার অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যরা মাননীয় বিচারপতি অসীমানন্দ মন্ডলের এজ্লাস বয়কট করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে জাতীয় কংগ্রেস দলের পশ্চিম বর্ধমান জেলা কংগ্রেস সভাপতি দেবেশ চক্রবর্তী অভিযোগ করেন । এদিন এক ভিডিও বার্তায় সামাজিক মাধ্যমে প্রকাশ করে জাতীয় কংগ্রেস দলের পশ্চিম বর্ধমান জেলা কংগ্রেস সভাপতি দেবেশ চক্রবর্তী জানান ,”ভোট গণনার দিন মানকর/বুদবুদ মহাকালী বিদ্যালয়ে কংগ্রেস নেতা ও কর্মীদের মারধরের ও হত্যার ষড়যন্তকারী আসামিদের ১৪ দিন জেল হেফাজতের নির্দেশ দেওয়ার ফলে মাননীয় বিচারপতি অসীমানন্দ মন্ডলের এজ্লাস বয়কট করলো তৃণমূলের দলদাস বার এসোসিয়েশন বলে অভিযোগ করেন।” তিনি আরো অভিযোগ করেন “উক্ত তৃণমূল কংগ্রেস দলদাস বার এসোসিয়েশনের একাধিক সদস্য মাননীয় বিচারকের কাছে অবিলম্বে নিঃশর্তে, গ্রেপ্তার হওয়া ১১ জন তৃণমূল কংগ্রেস কর্মী সমর্থককে নিঃস্বার্থ মুক্তি দেবার দাবি জানান বলে এদিন দেবেশ বাবু অভিযোগ করেন। ” জাতীয় কংগ্রেস নেতা দেবেশ বাবু বলেন , “তৃণমূল কংগ্রেসের ওই দলদাস আইনজীবীদের বিরুদ্ধে ধিক্কার জানাই যখন নিরপরাধ গরীব মানুষের বিনা দোষে জেল হয় তখন এদের দেখা পাওয়া যায়না। আর আজ দোষীদের মুক্তির দাবীতে কোর্ট বয়কট ? আর খুনের ষড়যন্ত্রকারী ও ভোট লুটকারি অপরাধীদের যখন পুলিশ নিয়ে এসেছে আদালতের সামনে তখন তাদের নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে কোর্ট বয়কট করছেন ? আপনাদের ধিক্কার জানাই । তৃণমূল কংগ্রেসের ওইসব আইনজীবীদের আগামী দিনে মানুষ প্রত্যাখ্যান করবে এবং সময় মত যথাযথ জবাব দেবে বলে তিনি জানিয়েছেন । “
পশ্চিম বর্ধমান জেলা জাতীয় কংগ্রেস দলের আই এন টি ইউ সি, সভাপতি, সুভাষ সাহা বলেন “বিচারের বানী নিভৃতে কাঁদে। যেখানে সংবিধানের একটা স্তম্ভ হচ্ছে বিচার ব্যাবস্থা, সেই বিচার ব্যাবস্থা উপর জনগণের বিশ্বাস ও আস্থা যদি উঠে যায় বিচার ব্যাবস্থার উপর, তাহলে মানুষ কার উপর ভরসা রাখবে।”
এদিকে কোর্ট বয়কটের সিদ্ধান্ত বিষয়ে দুর্গাপুর বার অ্যাসোসিয়েশনের একাধিক সদস্যকে প্রশ্ন করা হলে সবাই এ বিষয়ে কোন মন্তব্য না করে মুখে কুলুপ এঁটেছেন।
এখন প্রশ্ন আদেও কি দুর্গাপুর মহকুমা বার অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে এইরকম কোর্ট বয়কটের কোন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, নাকি বিরোধী রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে শুধুমাত্র রাজনৈতিক প্রচারের ফায়দা তোলার জন্যই অভিযোগ করা হচ্ছে ?
এখন দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চলের বাসিন্দাদের একটাই প্রশ্ন যদি কোট বয়কটের সিদ্ধান্তের কথা সত্যি হয়, তাহলে কি দুর্গাপুর মহকুমা আদালতে তৃণমূল কংগ্রেস দ্বারা প্রভাবিত আইনজীবীরা নিজেদের মর্জি মাফিক দুর্গাপুর আদালতের মাননীয় বিচারকদের রায় দিতে বাধ্য করছেন ,নাকি মাননীয় বিচারকরা সঠিক রায় দেওয়ার ফলেই কোর্ট বয়কটের পথে হাঁটছেন ওই আইনজীবীরা ?