জ্যোতি প্রকাশ মুখার্জ্জী,পূর্ব বর্ধমানঃ- ভূমির ঢাল অনুসরণ করে পশ্চিম থেকে পূর্ব দিকে প্রবাহিত হয়ে কুনুর নদী উৎস থেকে প্রায় ১১২ কিলোমিটার দীর্ঘ পথ অতিক্রম করে আউসগ্রাম ও মঙ্গলকোট ব্লকের মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত হয়ে কোগ্রামের উজানি গ্রামের কাছে অজয় নদে পতিত হয়েছে। বর্ষার সময় উৎসমুখ ও উপত্যকা অঞ্চলের বৃষ্টির জল হলো এই নদীর জলের একমাত্র উৎস।
নদীর ধারণ ক্ষমতা কম। তার উপর বর্ষার সময় নদীর উৎসমুখ ও উপত্যকা অঞ্চলে ভারি বৃষ্টি হলে আউসগ্রাম ও মঙ্গলকোটের বিস্তীর্ণ এলাকা বন্যার কবলে পড়ে। ভেসে যায় নদীর দু’পারের কৃষি জমি। কখনো কখনো লোকালয়ে বন্যার জল প্রবেশ করে। দ্রুত বন্যার জল নদীতে ফিরে যায়না বলে অনেকে একে ঠাট্টা করে ‘ঘরজামাই’ বলে।
মানুষের অপরিণামদর্শীতার জন্য এবার বন্যা হলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে চলেছে। কার্যত গুসকরার মাঝখান দিয়ে চলে গেছে এনএইচ ২ বি রাস্তা। এটি যথেষ্ট উঁচু হওয়ায় রাস্তা টপকে বন্যার জল মঙ্গলকোটের কৃষি জমিতে প্রবেশ করতে পারেনা। মূলত সারঙ্গপুরের কাছে সেতুর নীচ দিয়ে বন্যার জল সরুলিয়া, সারঙ্গপুর, রামনগর ও গণপুরের কৃষিজমিতে প্রবেশ করে। গুসকরা-নতুনহাট রাস্তার মাঝে উজিরপুর পর্যন্ত থাকা বিভিন্ন কালভার্ট ও ভাসাপুলের মধ্যে দিয়ে সেই জল ক্রমশ পূর্বদিকে প্রবাহিত হয়ে উজিরপুর, জালপাড়া, বালিডাঙা হয়ে মূল নদীতে গিয়ে পড়ে।
সমস্যা এখানেই। অধিকাংশ কালভার্টের প্রবেশ ও প্রস্থানের মুখ অবরুদ্ধ। এমনকি ভাসাপুল থেকে চকপরাগ পর্যন্ত যে নালা দিয়ে বন্যার জল কালভার্টের নীচ দিয়ে বয়ে যায় তার মুখও মাটি ফেলে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। স্বাভাবিক ভাবেই বন্যার জল দ্রুত সরে যেতে পারবেনা। পরিস্থিতির দিকে নজর না দিলে বন্যার জলে শুধু গুসকরা শহর নয় শহরের পশ্চিম ও দক্ষিণ-পূর্ব দিকের গ্রামগুলো ভেসে যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি। যেসব গ্রামগুলো ১৯৭৮ সালের ভয়ংকর বন্যার পর কোনোদিন আক্রান্ত হয়নি সেগুলোও হয়তো তার সাক্ষী থাকার সুযোগ পাবে। বন্যার ফলে এক ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
কথা হচ্ছিল আউসগ্রামের বিধায়ক অভেদানন্দ থাণ্ডারের সঙ্গে। তিনি বললেন – বিষয়টি জানা ছিলনা। মঙ্গলকোটের বিধায়কের সঙ্গে আলোচনা করে সমস্যার সমাধান করার চেষ্টা করব।
অন্যদিকে মঙ্গলকোটের বিধায়ক অপূর্ব চৌধুরী বললেন – মনুষ্য সৃষ্ট কারণে বন্যার জল যাতে সাধারণ মানুষের ক্ষতি না করে তারজন্য দ্রুত উদ্যোগ নেব। স্থানীয় প্রশাসনকে বিষয়টির দিকে নজর দিতে বলব।