eaibanglai
Homeএই বাংলায়ভাঙ্গা গড়ার খেলা/৪…. 'উট' কবি গেলেন 'পাহাড়', মলয়ের কাছে

ভাঙ্গা গড়ার খেলা/৪…. ‘উট’ কবি গেলেন ‘পাহাড়’, মলয়ের কাছে

মনোজ সিংহ, দুর্গাপুরঃ- সরকারি বুলডোজারের কামড় থেকে নিজের, নিজের পেয়াদাদের জবরদখল বাঁচাতে এবার কি তবে মন্ত্রী-মলয় ঘটকের দ্বারস্থ কবি দত্ত?

রবিবার সন্ধ্যায় পুর নিগমের এক যুব প্রশাসককে ম্যানেজ করে মন্ত্রী মলয়ের কাছে পৌঁছে গেলেন কবি। এডিডিএরই গেস্ট হাউসে চুপি চুপি বৈঠক সেরে নিলেন মন্ত্রীর সাথে। যে মন্ত্রীর সাথে তার দূরত্ব ছিল সকলের জানা, সেই মন্ত্রীর সাথে পুর প্রশাসক দীপঙ্কর লাহাকে ধরে হঠাৎই কেন বসে যেতে হল, তা খোলসা করে বলেননি মন্ত্রীর ঘনিষ্ঠরা বা কবি নিজেও।
এটা কি কোনো নতুন রাজনৈতিক সমীকরণের ইঙ্গিত ? নাকি কবির ঘর-সম্পত্তি রক্ষা করার কৌশল, তা নিয়ে বৃষ্টি ভেজা সোমবার শহরের রাজনৈতিক মহলে ছিল জোর চর্চা। “সবকথা কি সব সময় খুলে বলা যায়, বুঝে নিতে হয়,” মত কবির ছায়াসঙ্গী এক ব্যবসায়ীর।

কিন্তু, মলয় ঘটকই বা তার পুরনো বিরক্তি ঝেড়ে ফেলে হঠাৎ কবি দত্তের সাথে গোপন বৈঠকে রাজি হলেন কেন ? আসানসোল দুর্গাপুর উন্নয়ন সংস্থা (এডিডিএ)র চেয়ারম্যান তাপস বন্দ্যোপাধ্যায়ের সাথে মলয় ঘটকের ‘অল্প মধুর’ সম্পর্ক প্রায় সকলেরই জানা। সিটি সেন্টার জুড়ে অবৈধ দখলদারি উচ্ছেদ অভিযানে সম্প্রতি নেমেছে এডিডিএ । এই জবর দখল উচ্ছেদে চেয়ারম্যানকে যে শুধু বাইরের দখলদার, তাদের তোষণকারী রাজনৈতিক নেতাদের সাথেই লড়াই করতে হচ্ছে তাই নয়, চেয়ারম্যানের আপোষহীন এই লড়াই দিন দিন আরও কঠিন হচ্ছে তারই সংস্থার এক শ্রেণীর আমলা আর সংস্থার ভাইস চেয়ারম্যান কবি দত্তের চূড়ান্ত অসহযোগ এমনকি অভিযান ভেস্তে দেওয়ার কুটকাচালি খেলায়, বলে সংস্থার একটি সুত্র জানায়। তাই, বার বার রুট বদলে, কর্মচারীদের বিভ্রান্ত করে অভিযানের লক্ষ্যকে কার্যতঃ বানচাল করার চক্রান্ত হচ্ছে বলে অভিযোগ । আরো অভিযোগ, নিজের এবং নিজের বংশবদ কিছু জবরদখলকারীর স্বার্থ রক্ষা করতেই নাকি আমলাদের ওপর বিভ্রান্তিমূলক নির্দেশ ও আবদার চাপিয়ে গত দেড় সপ্তাহ ধরে পরিস্থিতি ঘোরালো করতে উঠে পড়ে লেগেছেন এডিডএর ভাইস চেয়ারম্যান কবি দত্ত। এ নিয়ে এডিডিএর এক আধিকারিক বলেন, “আমরা তো বিভিন্ন দপ্তর সামলে এখানে এসেছি। আমরা তো জানি আইন সবার জন্যই সমান। কিন্তু, এখানে আমাদের বুঝিয়ে দেওয়া হচ্ছে – আইন সবার জন্য সমান নয়। আলাদা আলাদা। আমরা অসহায়। কি করব ?” ভাইস চেয়ারম্যান নাকি দখলদারদের আংশিক পক্ষে – আর তাতেই আটকে তৈরি হয়েছে যত জট। তবে, সেই জটকে কার্যতঃ পাত্তা না দিয়ে সংস্থার চেয়ারম্যান স্পষ্ট ভাষায় বারে বারে ঘোষণা করেন, “বলছি তো, কে কি বলছে, করছে, কার কার জন্য তদবির করছে সব জানা আছে। আমি চলবো আইনের সাথে, আর আইনের পথে। সরকারের স্বার্থ রক্ষায়। তাতে যারা বাধার সৃষ্টি করবে, সবার কথা কোথায় জানাতে হয় তা আমার জানা আছে।”

মলয় ঘটককে কখনোই কবি দত্তের হোটেলে দরবার করে, তাকে তোয়াজ করতে দেখা যায়নি। বরং তিনি যে এতকাল কবিকে বিশেষ পছন্দই করেন না, তার ঘনিষ্ঠ মহলে ঠারে ঠারে বুঝিয়েও দিয়েছেন বারে বারে। তবে কি তাপস বন্দ্যোপাধ্যায়ের সাথে তার দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক ঠান্ডা লড়াইকে কৌশলে কাজে লাগাতে দীপঙ্করকে ধরে সটান মলয়ের কাছে পৌঁছে গেলেন মিষ্টিভাষী কবি ? গোপনে ওই বৈঠকের পর কবি সটান নিজের হোটেলে পৌঁছে মলয়ের জন্য খাবার দাবারের ব্যবস্থাও করেন বলে একটি সূত্রে জানা যায়। তবে, মলয়ের ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র জানায়, “দাদা এখন অন্য চিন্তায় আছেন। এসব ফালতু ব্যাপারে জড়িয়ে শুধু শুধু নিজের ব্যস্ততা রাখতে চান না। এসব উটকো কাজের জন্য তার অত সময় নেই। তাপসদার সাথে তার ব্যাপারটা আলাদা। ওতে কবি টবির মতো চুনোপুটিদের কি দাম আছে ?” কিসের ঠিক কি দাম – সে তো বিচার করবে সময়। তবে, প্রবাদ আছে সহজে পাহাড়ের কাছে যেতে না চাওয়া উটকে শেষে কিন্তু যেতেই হয়েছিল। তাই কি,পরিস্থিতির ঠেলায় এবার ‘উট’ কবিকে পাহাড় মলয়ের কোলে বসতেই হল ? বিষয়টি নিয়ে বার বার চেষ্টা করেও দীপঙ্কর লাহার প্রতিক্রিয়া মেলেনি। তেমনি জানা যায়নি চলতি সপ্তাহে এডিডিএর উচ্ছেদ অভিযানের কোনো নির্ঘণ্ট। “বৃষ্টির দরুন সবকিছু থামিয়ে রাখা হয়েছে শুধুমাত্র কয়েকটা দিন,” বলে, এডিডিএর একটি সূত্র জানায়।

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments