সংবাদদাতা, বাঁকুড়াঃ- গ্রামের উপ প্রধান বাড়ির হেঁশেলে ও ঘরকন্নার কাজ করতে করতে আনমনে গেছে চলছেন কালজয়ী সেই গান – “একবার বিদায় দে মা ঘুরে আসি।” আর তার সুমিষ্ট গানের গলা ও মনোমুগ্ধকর গানে রীতিমতো মুগ্ধ নেট দুনিয়া। কারণ উপ প্রধানের গানের সেই ভিডিও ইতিমধ্যেই ভাইরাল সোশ্যাল মিডিয়ায়।
বাঁকুড়া জেলার ইন্দাস ব্লকের করিশুণ্ডা গ্রাম পঞ্চায়েতের উপ প্রধান সোমা পাত্র। দরিদ্র পরিবারে বড় হয়ে ওঠা। বিয়েও হয়েছে ইন্দাস ব্লকের ফতেপুর গ্রামের এক হতদরিদ্র পরিবারে। বাড়িতে রান্নার গ্যাস এমনকি নেই স্মার্টফোন পর্যন্ত নেই । বাড়ির চারিদিকে দারিদ্র্যের ছাপ। স্বামী চাষবাসের কাজ করেন। পরিবারে নুন আনতে পান্তা ফুরানোর মতো অবস্থা। এহেন সোমাই এবারের করিশুণ্ডা গ্রামে পঞ্চায়েত উপ প্রধান পদে নির্বাচিত হয়েছেন। সকাল সকাল ঘরকন্যার সমস্ত কাজ, রান্নাবান্না, ছেলেমেয়েদের খাইয়ে দাইয়ে স্কুলের জন্য তৈরি করে নিজেও দুটি মুখে দিয়ে সকাল দশটার মধ্যে পৌঁছে যান পঞ্চায়েত অফিস। সোমার কথায়, “আমরা গরীব মানুষ, আমাদের সব দিকই সামলাতে হয়।” তবে এহেন সোমা তার দারিদ্রতার জন্য সংবাদ শিরোনামে উঠে এসেছেন তাঁর সুমধুর গানের গলার জন্য। সোমা জানান ছোট থেকেই গান গাইতে খুব ভালোবাসেন। তাই ঘরে ঘরকন্যার কাজ করতে করতেই গুন গুন করেন। তবে আর্থিক অনটনের কারণে কোনও দিন গান শেখার সুযোগ হয়নি। মাইকে, রেডিওতে, টিভিতে গান শুনে শুনেই গান তোলেন ও গান গান। তবে কোনোদিন যদি গান শেখার সুযোগ পান অবশ্যই গান শিখবেন বলেও জানান সোমা। এই সব বলতে বলতেই ফের ঘরের কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েন সোমা আর আনমনে গাইতে থাকেন দেশাত্মবোধক গান “একবার বিদায় দে মা ঘুরে আসি। হাসি হাসি পরব ফাঁসি দেখবে জগৎবাসী।”…. তাঁর সুমধুর কন্ঠের সেই গান এক লহমায় মনে করিয়ে দেয় সবে কৈশর থেকে সদ্য যৌবনে পা দেওয়া ক্ষুদিরাম বোসের দেশের জন্য আত্মবলিদানের কথা। তাঁর জন্যই যে গাঁথা হয়েছিল এই গান।