eaibanglai
Homeএই বাংলায়কবির এডিডিএ'তে কবি দত্ত'র ফাইলটাই লোপাট কেন ?

কবির এডিডিএ’তে কবি দত্ত’র ফাইলটাই লোপাট কেন ?

স্টাফ রিপোর্টার, দুর্গাপুরঃ- পাড়া – মহল্লার জবরদখল ভেঙে চুরমার করে এবার গড়ার কাজ শুরুও করেছে রাজ্য সরকারের এডিডিএ। শহরের বিশ্বকর্মা নগর দিয়ে যার শুরু।

কিন্তু, এরই মাঝে প্রাসঙ্গিক দুটি প্রশ্ন উকি দিতে শুরু করেছে শহর জুড়ে। প্রথমত: শহর জুড়ে দখল মুক্ত করতে আসানসোল দুর্গাপুর উন্নয়ন সংস্থার বুলডোজার অভিযান কি তবে শেষ হলো ? দ্বিতীয়তঃ জবরদখল সমেত যে সব ঘরবাড়ি, দোকান ঘর অফিস, ক্লাব, প্রতিষ্ঠান এখনো বহাল তবিয়তে শহর জুড়ে রয়েই গেল তাদের কি তবে দখলদারির স্বীকৃতিই দিয়ে দিল এডিডিএ? পাশাপাশি, ইতিমধ্যেই উচ্ছেদ হওয়া ছিন্নমূল দোকানদার, হকারদের প্রশ্ন – যারা ধনী, প্রভাবশালী বা যাদের ওপর মহলের কর্তা আধিকারিকদের সাথে বিস্তর দহররম মহরম অথবা যাদের কথায় আমলারা ওঠেন বসেন তাদের দখল দারিটা কি তবে এডিডিএর অভিধানে সেই অর্থে জবরদখল নয় ? উচ্ছেদ হওয়া হকারেরা এ প্রসঙ্গে প্রসঙ্গে প্রশ্ন তুলেছেন ‘বাঘের ঘরে ঘোগের বাসা’ বেন্ধে নবাবীর হুকুম চালানো জবরদখলকারী ধনীদের জন্য কি সরকারের আলাদা আইন ? আবার, তেনাদের পাইক, পেয়াদা – যারা উড়ে এসে এডিডিএতে জুড়ে বসা এক নতুন মুনিবের তাবেদার তাদের দখল দারিতেও সরকারি সংস্থাটির অভিযানের উদ্যোগে হঠাৎ করে বারে বারে কেনো মিইয়ে যাওয়া ? নাকি, এই নতুন মনিবের লম্বা হাতটা সত্যি সত্যি কালীঘাটের টালির চালা পর্যন্ত প্রসারিত ?

এই প্রসঙ্গে এডিডিএ’র পরিকল্পনা বিভাগের এক আধিকারিক অবশ্য বলেন, “দেখুন কর্তাদের প্রভাব তো একটা থাকবেই। কিন্তু, এমন ভাবার কোন কারণ নেই যে আলাদা আলাদা লোকের জন্য আমাদের সংস্থায় আলাদা আলাদা আইন। আমাদের যারা নীতি-নির্ধারক তারা এ ব্যাপারে স্পষ্ট নির্দেশ দিয়েছেন যে কাউকে রেয়াত নয়। বেছে বেছে কাউকে তোয়াজ করাও নয়।” এরপরেও প্রশ্ন – তাহলে সিটি সেন্টারের জংশন মল এলাকায় ডাগর মাপের প্রাসাদোপম হোটেলটির পেছন দিকে, তার ডান পাশে যে ঢালাও জবরদখল তা কি সংস্থার কর্তাদের চোখে পড়েনি ? নাকি তখনই চোখেরবালি কারো কথা স্মরণ আসায় তেনার চোখ বন্ধ করে নিলেন ? তাইকি সেখানে এডিডিএ লাল দাগ এঁকে চিহ্নিতও যেমন করেনি তার আশেপাশে গজিয়ে ওঠা গুমটি, হোটেল, চা দোকানে লালখড়ি ঘুরিয়ে দিলেও হোটেলটির গায়ে আঁচড় টুকুও পরেনি ? বিতর্কিত ওই হোটেলের মালিক কবি দত্ত। এডিডিএ’র এই নতুন মনিব আবার সরকারি সংস্থাটির ভাইস চেয়ারম্যান। সেই উনিই বুক ফুলিয়ে সরকারি জায়গা দখল করে ব্যবসা চালাচ্ছেন বলে অভিযোগ সিটি সেন্টার সহ এলাকার উচ্ছেদ হওয়া দোকানদারদের। কবি নাকি বলে বেড়ান- ‘অত সহজে যে আমার হোটেলে হাত দেওয়ার ক্ষমতা কারোরই নেই। সব আটঘাট আমার বাঁধা আছে।’

কবি দত্তর আটঘাট কোথায়, কেমন বাঁধা আছে তা তিনিই জানেন। তবে, মজার কথা হলো তার সংস্থার ফিতে বাঁধা ফাইলটি হঠাৎই উধাও হয়ে গেছে তারই এডিডিএ থেকে। অনেক মাথা খুঁড়েও সেই ফাইলের হদিস না মেলায় এডিডিএ দায় ঝাড়তে দুর্গাপুর থানার পুলিশের কাছে একটি জেনারেল ডাইরি করে মুখে কুলুপ এঁটে বসে আছে। এত জবরদখল উচ্ছেদের মাঝে সেই ফাইল আরো তলিয়ে গেছে অতলে। যে সংস্থার তিনি ভাইস চেয়ারম্যান, সেখানে তারই হোটেলের ফাইল কলাপাতার মতো কোথায় হারালো, আর কেনই বা হারিয়ে গেল, তার দায় কবি কি নেবেন নাকি এতেও আদতে তার আরো ভালই হল – সময় বলবে। কবি দত্তের বিতর্কিত ওই হোটেলটির ফাইল লোপাটের কথা প্রথম ফাঁস হয় একটি জনস্বার্থ অভিযোগ দায়ের হওয়ার পর। ‘অল ইন্ডিয়া আন্টি করাপশন অর্গানাইজেশন’ নামের একটি বেসরকারি সংস্থার পক্ষে জনৈক সুব্রত মল্লিক গত ১৬ ই মে ‘তথ্য অধিকার আইন ২০০৫’ র ৬ নম্বর ধারায় দুর্গাপুর নিগমের কাছে কবির হোটেলটির ডিডের (দলিলের) প্রতিলিপির কপি, হোটেলটির অনুমোদিত বিল্ডিং প্ল্যানের কপি এবং ওই জমিটি কবির পক্ষে বরাদ্দ করার কপি চেয়ে বসেন। দুর্গাপুরের জমি বরাদ্দ করার মালিক যদিও নগর নিগম নয়, এটার দায় এডিডিএ’র। মল্লিকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে রাজ্যের পুর ও নগর উন্নয়ন দপ্তরের সহকারী সচিব গত ২৩ শে মে এডিডিএ’র সংশ্লিষ্ট আধিকারিককে দ্রুত জবাব দেওয়ার নির্দেশ দেন। সেই নির্দেশ হাতে পাওয়ার পরেই নড়ে চড়ে বসে এডিডিএ। কবি দত্তের হোটেলের ব্যবসা কেন্দ্রের ফাইল এর তত্বতালাশ করতে গিয়ে সংস্থা টের পায় ফাইলটি নিরুদ্দেশ। হয় সেটা গাফিলতির জের, নয়তো বা উদ্দেশ্য প্রণোদিত। অবিশ্বাস্যভাবে ওই ফাইলটির খোঁজ আগস্ট মাসেও মেলেনি। কিন্তু কেন ?

বিষয়টি নিয়ে এডিডি’র চেয়ারম্যান তাপস বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “ফাইলটির খোঁজ চলছে। খুঁজে পাওয়া যায়নি বলেই তো আমরা ইতিমধ্যেই পুলিশের কাছে একটা মিসিং ডায়েরিও করেছি।” একজন প্রভাবশালী পদাধিকারীর এমন জরুরি একটি ফাইল হারিয়ে গেলে কি খানিকটা স্বস্তি মেলে কারো কারো ? তাই কি বেশ দায়সারা ভাব এডিডিএ’র অন্দরমহলে ?

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments