সংবাদদাতা, পানাগড়ঃ- হাজারো প্রতিকূলতার মধ্যেও নিজের ইচ্ছাশক্তি, অদম্য জেদের কারণেই কাঁকসার আদিবাসী অধ্যুষিত গ্রামের মেয়ে সরস্বতী মুর্মু বাংলার হয়ে কাবাডি প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে আগামীকাল হরিয়ানা রাজ্যে পাড়ি দিচ্ছেন। সরস্বতী মুর্মু এবছর অযোধ্যা উচ্চ বিদ্যালইয়ের মাধ্যমিকের ছাত্রী। বাবা সোম মুর্মু পেশায় দিনমজুর, দিন আনা দিন খাওয়া পরিবারের মেয়ে সরস্বতী। গত ৬ বছর আগে কাঁকসার অযোধ্যা গ্রামের নারকেল ডাঙায় কাবাডি খেলার প্রশিক্ষণ নেওয়া শুরু করে। তবে তাতেও ঝামেলা কম ছিলো না। অনেকে প্রশিক্ষণ নিতে বারণও করেছিলো। তবুও হার মানে নি সরস্বতী।গত ছয় বছর ধরে তাকে প্রশিক্ষণ দেয় সৈয়দ রহমত আলী(রিঙ্কু। তার ইচ্ছা শক্তির জোরেই ধীরে ধীরে কাবাডি খেলায় নিজের একটা পরিচয় বানিয়ে ফেলে স্কুলের গন্ডি পেরিয়ে একের পর এক জায়গায় তার খেলার প্রশংসা শুরু হয়। অবশেষে গত ৩১ শে জানুয়ারি কোলকাতায় জাতীয় কাবাডি প্রতিযোগিতায় অংশ নেবার জন্য গেলে সেখানে জাতীয় স্তরে খেলার সুযোগ পায় সে। মঙ্গল বার হরিয়ানার জন্য পারি দেবে সরস্বতী। সেখানে জুনিয়ার কাবাডি প্রতিযোগিতায় রাজ্যের হয়ে মাঠে নামবে। তার প্রশিক্ষক সৈয়দ রহমত আলী (রিঙ্কু)। ওই এলাকায় সাত বছর আগে প্রশিক্ষণ দেওয়া শুরু করি। প্রথম প্রথম অনেক জন মেয়েকে নিয়েই প্রশিক্ষণ দেওয়া শুরু করলে পরে অনেকেই প্রশিক্ষণ ছেড়ে চলে যায়। শেষ পর্যন্ত ১২ জন মেয়েকে নিয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া শুরু করি সাত বছর ধরে। সরস্বতী মন্ত্র বছর আগে প্রশিক্ষণের যোগ দেয়। তবে তোকে প্রশিক্ষণ দিতে অনেক সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। একদিকে পরিবারে আর্থিক অবস্থা ভালো নয় তার ওপরে কাবাডি খেলা খুব একটা পরিবারের পছন্দ ছিল না প্রথম থেকেই। তো প্রথম থেকেই তার মধ্যে একটি ইচ্ছাশক্তি চোখে পড়ে সেই কারণেই হাল ছাড়েনি। মেয়েদের নিয়ে কাবাডি খেলা অনেকেই হয়তো পছন্দ করছিল না। তো অনেকেই চেষ্টা করেছিল প্রশিক্ষণ বন্ধ করে দেওয়ার। কিন্তু কয়েকজন মেয়ের ভিতর কাবাডি খেলার প্রতি আগ্রহ দেখে আমরাও গ্রামের মানুষদের বোঝানো শুরু করি ।অনেক কে বোঝানোর পর অবশেষে ১২ জন মেয়েকে নিয়ে প্রশিক্ষণ চলছে ছয় বছর ধরে। এটা আমাদের গর্ব আমরা আমাদের এলাকার একজন খেলোয়ারকে জাতীয় স্তর পর্যন্ত পৌঁছাতে পেরেছি। যতটুকু খবর পাওয়া গেছে তার বাড়িতে বিদ্যুৎ সংযোগ নেই, নেই বাড়িতে তেমন খাবার যা একটা খেলোয়াড়ের জন্য উপযুক্ত পরিমাণে লাগে। এছাড়া ও পরিকাঠামো র দিক থেকেও তেমন ভালো ছিলো না। এলাকার কিছু মানুষের সাহায্যে কোন মতেই প্রশিক্ষণ চলত।
এলাকার মেয়ে জাতীয় স্তরে খেলতে যাবে সেই কথা জানতে পেরে সাহায্যের হাত বাড়িয়েছেন বনকাটি পঞ্চায়েতের প্রধান পিন্টু বাগদি। তিনি জানিয়েছেন তার খেলতে যাবার জন্য যতটুকু যা সাহায্যের প্রয়োজন তার যথাসাধ্য চেষ্টা করবেন তিনি। পাশাপাশি তার উজ্জ্বল ভবিষ্যতের কামনা করেছেন তিনি।