সঙ্গীতা চৌধুরীঃ- কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে মনোনীত হয়েছে ‘কাল্পনিক’। এই ছবির অন্যতম একটি চরিত্রে অভিনয় করেছেন অভিনেতা কোলাজ সেনগুপ্ত। এই ছবি নিয়ে আমাদের প্রতিনিধি সঙ্গীতা চৌধুরীকে একটি দীর্ঘ সাক্ষাৎকার দিলেন তিনি।
১। কাল্পনিক এ আপনার কী চরিত্র?
কোলাজ সেনগুপ্ত: কাল্পনিক ছবিতে আমার চরিত্রের নাম সৌমিত্র। সৌমিত্র এমন একজন মানুষ, যে অত্যন্ত অনুগত। আবার একই সাথে, আনুগত্যের তাড়নায় খুন করতেও পিছপা হয় না! এই ছবিতে মুখ্য চরিত্রে অভিনয় করেছেন শহীদুর রহমান। উনি একজন পলিটিশিয়ানের চরিত্রে অভিনয় করেছেন। সৌমিত্র হচ্ছে তার ভরসার জায়গা। যে কোন না হওয়া কাজ, সৌমিত্রকে বললেই হয়ে যায়। এতটাই ভরসা এবং বিশ্বাস আছে দুটি চরিত্রের মধ্যে। অধিরাজ (শহিদুর রহমানের চরিত্রের নাম) এবং সৌমিত্রের সম্পর্কের equation টা বেশ শক্তপোক্ত। আসলে এই গল্পে হিরো হিরোইন নেই। গল্পটাই হিরো। গল্পটাই হিরোইন। প্রত্যেকটি চরিত্রের পারস্পরিক সম্পর্কের পরত খুলতে খুলতে ছবি এগিয়ে গেছে। আমার বিশ্বাস ছবিটি দর্শকদের ভাবাবে। It will take them on a journey.
২। এই প্রজেক্টটি যখন এতটা সফল হল তখন আপনার জীবনের এমন কোনও মুহূর্ত আছে যা বারবার মনে পড়ছে?
কোলাজ সেনগুপ্ত: মনে করার মতন অনেক ঘটনা আছে। এই ছবিতেই প্রথম রনিদার সঙ্গে আলাপ। রজতাভ দত্ত। এই ছবিতে উনিও একটি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে অভিনয় করেছেন। এছাড়া শতাক্ষী নন্দী, আর.জে সায়ন গুরুত্বপূর্ণ কিছু চরিত্রে অভিনয় করেছে। যদিও আমার আর রনিদার গল্পের ট্র্যাক আলাদা। গোটা গল্পে একটাই দৃশ্য একসাথে সঙ্গে আছে।
একটা মজার ঘটনা মনে পড়ছে। রনিদার সঙ্গে শট দেওয়ার আগে উনার সঙ্গে বসে গল্প করছি, আর এইদিকে আমার বুকের মধ্যে দুরমুশ পেটা চলছে! শেষমেষ রনিদা কে আমি জিজ্ঞেসই করে ফেললাম, “আচ্ছা আমার কি একটু নার্ভাস লাগা উচিত? কারণ তোমার সঙ্গে সিন আছে।” শুনে উনি হেসে দিলেন।
সিনেমার খানিকটা অংশ শুট হয়েছে পুরুলিয়ায়। ডিসেম্বর মাসে। স্বভাবতই ওখানে প্রচন্ড ঠান্ডা। রাত যত বাড়ছে, পারদ তত কমছে। হাত পা জমে যাচ্ছে। আর আমি ভাবছি, ডায়লগ বলার সময় মুখ খুলবে তো নাকি ঠান্ডায় জমে যাবে?
৩। কাল্পনিক- কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে মনোনীত হতে পেরেছে, আপনার অভিনীত সিনেমা, আচ্ছা এই সিনেমায় এমন কী আছে-যা অন্য প্রজেক্টের থেকে একটু ভিন্ন বলে আপনার মনে হয়েছে?
কোলাজ সেনগুপ্ত: পুরো ছবিটা আমি এখনো দেখিনি। ডাবিং এর সময় খানিকটা দেখেছি, আর স্ক্রিপ্টটা পড়েছি। তাতে আমার মনে হয়েছে, এই ছবির অন্যতম সম্পদ হলো অর্কদার স্টোরি টেলিং। এই ছবির পরিচালক হলেন অর্ক মুখার্জি। প্রবাসী বাঙালি। যখন প্রথম অডিশন দিতে গিয়েছিলাম, আমার মনে হয়েছিল অডিশনটা ঠিকঠাক হলো না। বিশেষ কিছুই করতে পারলাম না। তারপরে সিলেকশন হয়। তার সাথে সাথে অর্কদাকে জিজ্ঞেস করি, “সৌমিত্রের চরিত্র সম্পর্কে আমাকে কিছু বল।” উনি একটাই কথা বললেন, “Soumitra is a character who does nothing! Just follows and keeps it natural.”
বেদবাক্যের মতন কথাটা মাথায় বসিয়ে নিয়েছিলাম। শুটিং হয়ে যাওয়ার পর, এডিট করার সময় ওর কথা নিজে থেকেই আমাকে মেসেজ করলেন। বললেন, “কোলাজ তোমার কাজ খুব ভালো হয়েছে। সৌমিত্রকে যেমন ভেবেছিলাম, তেমনি ফুটে উঠেছে।” এই কথাটা যে কত বড় একটা ইনস্পিরেশন সেটা আমি বলে বোঝাতে পারবো না। একজন অভিনেতা তার পরিচালকের থেকে এমন সার্টিফিকেশনই আশা করে। অনেক জায়গায় কাজ করার সময় দেখেছি, পরিচালক আর অভিনেতার মধ্যে সেই সম্পর্কটা তৈরি হয় না। তাতে আখেরে ছবির ক্ষতি হয়। কাল্পনিকের সবচাইতে বড় প্লাস পয়েন্ট হল পরিচালক ও অভিনেতাদের মধ্যে পারস্পরিক সমঝোতা ও সুসম্পর্ক। কাজ করতে খুব সুবিধা হয়েছে। এই সবকিছুই ছবিটার আঙ্গিকে একটা অন্য মাত্রা যোগ করেছে।
৪। প্রথম যখন খবরটা পেলেন তখন আপনার প্রতিক্রিয়া দু এক কথায়।
কোলাজ সেনগুপ্ত: খবরটা প্রথম আমাকে জানায় অর্কদা। একটু রাতের দিকেই মেসেজ করেছিল। মেসেজটা পড়ে আমার যা প্রতিক্রিয়া হয়েছিল সেটা দু এক কথায় বলাটা একটু কঠিন। আমি দীর্ঘদিন ধরে অপেক্ষা করেছিলাম এইরকম কোনও মুহূর্তের। অবশ্যই ভালো লেগেছে, আরও একটু সাহস পেয়েছি। অভিনয়ের কাজ করতে এসে বুঝেছি, এখানে আর যাই হোক, নিশ্চয়তা খুব একটা নেই। ভালো কাজ করে যেতে হবে তারমধ্যেই। একটা কাজ থেকে আরেকটা কাজে যাওয়ার পথের পাথেয় হয়ে থাকবে এই মুহূর্তগুলি। অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে।