বিশেষ প্রতিনিধি,দুর্গাপুরঃ ছাব্বিশ বছরেও অতনু চট্টোপাধ্যায় খোঁজ পেলেন না, আর নাকি ছাব্বিশ হপ্তা গড়ানোর আগেই সুকেশ চন্দ্র বসুর হদিশ পেয়ে গেলেন এডিডিএ এর কেরানী অতনু চক্রবর্তী।এ যেন নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসুর হদিশ পেতে , ‘গুমনামী বাবা’র খোঁজ মিলল। শুধু এডিডিএ ভবন নয়, কেজি কেজি হোজমোলা গিলেও এই রহস্য হজম করতে পারছেননা আপামর সিটিসেন্টারবাসী। চোখ কপালে উঠেছে আসানসোল-দুর্গাপূর উন্নয়ন সংস্থার আধিকারিকদের একাংশেরও।কিন্তু কেন ? এত বিস্ময়ের আছে টাই বা কি ? বিস্ময়ের ঘোর কাটা অত সহজ নয়। কারণ, আড়াই দশকধরে কার্যতঃ নিখোঁজ থাকা সুকেশের হদিশ না মেলায়, সিটিসেন্টারের আলাউড্ডীন খান বীথির বাড়িটির বিষয়ে ‘লীগাল হেয়ার’ বা আইনি উত্তরাধীকারীর দাবি করে এডিডিএ দপ্তরে একবার একটি আবেদনও জমা পড়েছিল।সাধারণ নিয়মে লিগ্যাল হেয়ার এর আবেদন জমা পড়ে তখনই, যখন বাড়ী বা সম্পত্তির মালিক প্রয়াত হন। তাহলে? কি দাঁড়ালো বিষয়টা ? “আমাদের অনুসন্ধানে এখন অব্দি যা জানতে পেরেছি, সুকেশবাবু আর ইহলোকেই নেই। তাই তার জমি বাড়ী হড়প করার জন্য বেশ কিছু মানুষ ঊঠে পড়ে লেগেছেন। আমাদের অনুসন্ধানে এও ঊঠে এসেছে, যে, সুকেশের কোনও উত্তরাধীকারীই নেই” বললেন সুব্রত মল্লিক। ইনি দিল্লীর ‘অল ঈণ্ডিয়া অ্যান্টি করাপসন অরগানাইজেশন’ র অপরাধ বিষয়ক অতিরিক্ত প্রবন্ধক। এডিডিএ-এর জমি বাড়ী লুঠ সংক্রান্ত বেশ কিছু অভিযোগ দিল্লীর ওই সংস্থায় জমা পড়ার পর,সংস্থার নির্দেশে সুব্রতবাবুই দুর্গাপুরে গোটা তদন্ত পরিচালনার কাজে নেমে পড়েছেন। রয়েছেন তার তিন সহযোগীও। সুব্রতবাবু জানালেন, “এডিডিএ এর বিষয়ে বড়রকমের অভিযোগ আমরা পেয়েছি। যার মধ্যে সংস্থারই কর্মী অতনু চক্রবর্তীর বিষয়টি আমাদের নজর কাড়ে। এ যেন যাকে বলে- রক্ষকই ভক্ষক। যে বহুমূল্য বাড়ীটির আসল মালিকেরই কোনো হদিশ নেই, সেটি অনায়াসে আড্ডা মারফৎ রাজ্য সরকারের হাতে আসতে পারত। তা-না করে, সরকারি রাজস্ব গোল্লায় পাঠিয়ে, বাঁকা পথে ঘরটি যাকে বলে জবরদখল করলেন অতনু।” তাঁর আরো অভিযোগ, “আড্ডার অধিকারীকের একাংশ হাতে নাতে চোর না ধরে, চোর পালাতে দিয়ে নিজেদের বুদ্ধি বাড়াছেন। কেন?” আড্ডার কেরানী অতনু চক্রবর্তীকে তাঁর সংস্থা সিটিসেন্টারের নন কোম্পাণী এলাকার জমি বাড়ী সংক্রান্ত নথি সামলানোর দায়িত্ব দিল। হাতে যাকে বলে চাঁদ পেয়ে গেলেন অতনু। তাঁর কাছেই সুকেশ বসুর বাড়ীটি হস্তান্তরের উদ্দেশে লিগ্যাল হেয়ার এর কাগজপত্র জমা হয় এক জমি বাড়ীর দালাল মারফৎ। গোটা বিষয়টি হজম করে, পুরো বাড়ীটাই হজম করার ফন্দী আঁটার সেই শুরু। ওই জমির দালাল বললেন, “অতনু স্যার আমাকে ডেকে শাষিয়ে দিলেন একদিন। বললেন, এ ব্যাপারে থেকে সরে যাও তুমি।” ব্যাস। তারপরই ‘কাকের বাসায় কোকিলে’র মতো সুকেশের ঘরে বাসাবাঁধা অজিত চ্যাটারজীর কাছে শুরু হল অতনুর জোরদার যাতায়াত।মাত্র দুমাসেই পঁচিশ লক্ষ টাকায় ষাট লক্ষের বাড়ী কিনে, নিজের দপ্তরে বসে ঝটপট ফাইল চালানো শুরু করেদিলেন অতনু। এরই মধ্যে আড্ডার মুখ্য কার্যনির্বাহী আধিকারিকের কাছে বিষয়টি নিয়ে নালিশ জানালো দিল্লীর ওই সংস্থা। গত ১৮ মার্চ.২০১৯। চাঞ্চল্যকর ওই অভিযোগ পেয়েও কার্যত ঘুমিয়েই রইলেন আড্ডার মুখ্য কার্যনির্বাহী আধিকারিক অরুণ প্রসাদ। ফলে, পশ্চিম বর্ধমানের জেলাশাসক শশাঙ্ক শেঠীর কাছে, দিল্লীর ওই সংস্থা “অরুণ কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছেন না” বলে নালিশ জানালো ২২ এপ্রিল। বিশেষ একটি সূত্র জানাচ্ছে, জেলাশাসক এডিডিএ এর কাছে অতনু সংক্রান্ত বিষয়টি নিয়ে একটি চিঠি পাঠালেও, আড্ডা তার কোনো জবাব দেয়নি। সম্ভবতঃ রাজনৈতিক চাপেই বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা হয়। অতনু শাসক তৃণমূল কংগ্রেসের কর্মচারী ইউনিয়নের সদস্য। বেশ হাঁকডাক আছে তার । শুধু তৃণমূলই নয়, বাম আমলে নথি জাল করার দায়ে হাতেনাতে ধরা পড়েন অতনু । তখন তার ঢাল হিসেবে এগিয়ে আসেন তৎকালীন বিধায়ক বিপ্রেন্দু চক্রবর্তী (ভজন) । একথা জানা গেছে আড্ডা এবং সিপিআইএম সূত্রেই। সাথে সাথে এটিও জানা গেছে ফাইল লোপাট বা ফাইলের ভেতরকার নথি বদলে দেওয়া, হাবিশ করে দেওয়ার কাজে আড্ডা সংস্থার যে গুটিকয়েক কর্মী সিদ্ধহস্ত অতনু তাদের মধ্যে চ্যাম্পিয়ন।” …।(চলবে)