eaibanglai
Homeএই বাংলায়গাছ কাটছে এডিডিএ, ঘুমোচ্ছে দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ

গাছ কাটছে এডিডিএ, ঘুমোচ্ছে দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ

সুইটি চন্দ্র, দুর্গাপুর: মাঝে মাঝে দিল্লির দূষণকেও ছাপিয়ে যাচ্ছে শিল্পশহর দুর্গাপুরের বিষ বাতাস, আর তারই মাঝে রাস্তা সম্প্রসারণের জন্য এবার সরকারি সংস্থার ব্যবস্থাপনাতেই ডজন ডজন প্রাচীন বৃক্ষ নিধনের মহাযজ্ঞ শুরু হয়েছে শহরের একাংশে, যা নিয়ে দিনকে দিন অসন্তোষ ছড়াচ্ছে শহরের বাসিন্দাদের মধ্যে। প্রশ্ন উঠছে যে শহরের বাতাসে এত বিষ সেখানেই এমন বেপরোয়া সবুজ নিধন কি খুবই জরুরী ছিল? বিষয়টি নিয়ে জেলা প্রশাসনের আসু হস্তক্ষেপ চেয়ে একাধিক গণসংগঠন ইতিমধ্যেই তাদের লিখিত প্রতিবাদলিপি মহকুমা শাসকের দপ্তরে জমা দিয়েছে। পাশাপাশি, শহরবাসী দু-একটি হালকা প্রতিবাদ মিছিলও করেছেন, তবে বিষয়টি নিয়ে তুফান উঠছে বেনাচিতি, সিটিসেন্টার থেকে বিধাননগর – সর্বত্রই। তবে, তাতেও অবস্থা বিশেষ বদলায়নি। “উন্নয়নের প্রয়োজনে হয়তো গাছ কাটা দরকার হয়ে পড়ে কখনো কখনো, কিন্তু, সরকারি আইন কানুন মোতাবেক গাছ কাটার দরুণ পরিবেশে যে নিদারুণ লোকসান হয়, তার ক্ষতিপূরণ স্বরূপ শহরে তার চেয়ে ঢের বেশি গাছ লাগিয়ে তবেই এসব করা উচিৎ। নাহলে ঝাঁ চকচকে রাস্তা করে কি লাভ? ওই রাস্তায় কি তবে মরা মানুষের মিছিল হাঁটবে?” – প্রশ্ন তুলেছেন পশ্চিম বর্ধমান জেলা কংগ্রেসের সভাপতি দেবেশ চক্রবর্তী। তবে কংগ্রেসের পক্ষ থেকে বিষয়টি নিয়ে এখনো কোনো প্রতিবাদ মিছিল এখানে হয়নি।

কংগ্রেস পথে না নামলেও, শহর জুড়ে বৃক্ষ নিধন নিয়ে হতাশ সিপিএম ইতিমধ্যেই কিন্ত ময়দানে নেমে পড়েছে। সিপিএম এর পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞান মঞ্চ এবিষয়ে অগ্রণী ভূমিকায়। ওদিকে, শহরের অগ্রণী হোটেলে ম্যানেজমেন্ট কলেজ ডি এস এম এস কিন্তু বসে নেই। শুক্রবারই কলেজের কর্তৃপক্ষ পরিবেশ বাঁচাতে একটি ১০ কিমি ম্যারাথনের আয়োজনের কথা জানিয়ে দৌড় প্রতিযোগীদের জন্য ২ লক্ষ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করেছেন। সংস্থার সচিব শিউলি মুখোপাধ্যায় বলেন, “শহরের পরিবেশটা বাঁচাতেই হবে, নইলে কেউই বাঁচবনা। সেই লক্ষ্যেই তো আমরা ‘পলিউশন ফ্রী, সলিউশন ট্রী’ নাম দিয়ে এবার এই ম্যারাথনের আয়োজন করেছি।” উল্লেখ্য, প্রতি বছর এই সংস্থাটি ১০০ টি করে গাছ দত্তক নেয়।

ওদিকে, পরিবেশ বাঁচানোর এইসব উদ্যম দেখে থেমে না থেকে রাজ্য সরকারি দুটি সংস্থা – আসানসোল দূর্গাপুর উন্নয়ন পর্ষদ এবং দুর্গাপুর নগর নিগম কিন্তু শহীদ ক্ষুদিরাম সরণীর সম্প্রসারণের কাজে তোড়জোড় শুরু করে দিয়েছে। ইতিমধ্যেই ক্ষুদিরাম স্মরণির ওপর পেট্রোল পাম্প লাগোয়া একটি প্রাচীন গাছ কেটে ফেলা হয়েছে। উপড়ে ফেলা হয়েছে আরও তিনটি প্রাচীন গাছ। পাশাপাশি ৩১.৩৭ কোটি টাকা দিয়ে সিটি সেন্টার বাস স্ট্যান্ড থেকে শহরের গান্ধী মোড় পর্যন্ত এই ক্ষুদিরাম স্মরণ এতে ডিভাইডার বসানোর জন্য দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে ১১ই জানুয়ারির মধ্যে। দেবেশ বাবুর কথায়, “ঠিক আছে। ডিভাইডার করা তো বিজ্ঞান সম্মত। কিন্তু রাস্তা চওড়া করার নামে এভাবে বেপরোয়া গাছ কাটা কি মেনে নেওয়া যায় নাকি? যেখানে যেখানে ওরা এভাবে গাছ কাটছেন, উপড়ে ফেলছেন, ঠিক সেইসব জায়গাতেই তো কয়েকটা হোটেল, রেস্টুরেন্ট চলছে সরকারি জায়গা জবরদখল করে। সেগুলো ওভাবেই তোয়াজ করে রেখে দেওয়া হচ্ছে কেন? কারো কারো পিঠ বাঁচাতে?”

পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞান মঞ্চের পাঁচটি শাখা – আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র রায় বিজ্ঞান কেন্দ্র, ডাক্তার কাদম্বিনী গাঙ্গুলী বিজ্ঞান কেন্দ্র, আচার্য সত্যেন্দ্রনাথ বোস বিজ্ঞান কেন্দ্র, ইস্পাত বিজ্ঞান কেন্দ্র, এবং এপিজে আব্দুল কালাম বিজ্ঞান কেন্দ্র একযোগে গত ৮ জানুয়ারি দূর্গাপুরের মহকুমা শাসকের কাছে লাগাতার গাছ কাটা নিয়ে প্রতিবাদ লিপি জমা দিয়েছে। বিজ্ঞান মঞ্চ বিষয়টি নিয়ে আলোচনাও করেছে রাজ্যের দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ কর্তৃপক্ষের সাথে। তবে, দূষণ নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের ভূমিকায় তারা প্রশ্নও তুলেছে। মঞ্চের একটি কেন্দ্রের সম্পাদক শ্রীকান্ত চট্টোপাধ্যায় বলেছেন, “এতো উদাসীন কেনো ওরা বুঝলামনা। কেউ কেউ কি ওদের ওপর চাপ সৃষ্টি করছে?”

এদিকে, জেলা সিপিএমের একটি সূত্র জানায় সরকারি দপ্তর পুরসভা এ বিষয়ে গাছাড়া মনোভাব নিলেও হাত গুটিয়ে আর বসে বসে তামাশা দেখবে না বামপন্থীরা। শনিবার বিষয়টি নিয়ে সরকারি হস্তক্ষেপের প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আসানসোল দুর্গাপুর উন্নয়ন পর্ষদের এক বরিষ্ঠ আধিকারিক বলেন, “এ ব্যাপারে যা কিছু বলার একমাত্র চেয়ারম্যানই বলবেন। আমাদের কিছু বলার নিষেধ।” কয়েকবার চেষ্টা করেও এদিন সংস্হার চেয়ারম্যান কবি দত্তর কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments