সঙ্গীতা চৌধুরীঃ- একবার একজন ভক্ত প্রশ্ন করেন,“সংসারে এতো আসক্তি। এই পরিবেশে মুক্তি দুরাশা মাত্র। খুব হতাশ হয়ে যাই।” স্বামী সোমেশ্বরানন্দ মহারাজ এর উত্তরে বলেন, “আসক্তি তো ভালবাসারই অন্য রূপ। তাই না? আপনি টাকা ভালবাসেন, আর টাকায় আসক্ত, পার্থক্য কি? কখনও চিন্তা করেছেন এ নিয়ে? আমি যদি ১০-টা টাকা চাই তবে আপনি সঙ্গে-সঙ্গে দেন। তাহলে আসক্তি কোথায়? ভাল করে লক্ষ্য করুন। আপনি অনায়াসেই টাকাটা দিচ্ছেন আমাকে। কেন? হয় আমাকে ভালবাসেন বলে, কিংবা ওই ১০ টাকায় আপনার আসক্তি নেই বলেই দান করছেন রাজার মতো। অর্থাৎ আসক্তিকে জয় করা যায় ভালবাসা দিয়ে, কিংবা রাজার মনোভাব দিয়ে।”
মহারাজ আরও বলেন,“ এবার আরেকটু গভীরে যান। কোনো বিষয়কে আমি দুইভাবে ব্যবহার করতে পারি মালিকের মতো (বিষয়টা চাকর)। বা চাকরের মতো (বিষয়টা মালিক)। দ্বিতীয়টাকে আসক্তি বলা হয়।” মহারাজের কথায়,“এখন চিন্তা করুন দুটির পার্থক্য নিয়ে। কোনটিতে আনন্দ বেশি? কোনটিতে আপনি বিকশিত বা প্রসারিত হন? মালিকের মনোভাব নিয়ে বিষয়কে ব্যবহার করা। আপনি ১০ টা টাকা দিতে ভয় পাচ্ছেন না কারণ প্রয়োজন হলে ওই পরিমাণ টাকা আপনি অনায়াসেই উপার্জন করে নিতে পারেন, এই বিশ্বাস রয়েছে আপনার। অর্থাৎ আত্মবিশ্বাস ও সাহস আছে মনে। আর এই দুটি না থাকলেই আঁকড়ে ধরেন বিষয়টিকে। তখন বিষয়টি আপনাকে ধরে রাখে। বৃদ্ধবয়সে টাকা আগলে থাকা কিছুটা যৌক্তিক কারণ উপার্জনের শক্তি কমে যায়। কিন্তু জীবনের অন্য পর্বগুলিতে এমন মনোভাব ক্ষতিকর। আত্মবিশ্বাসের অভাব। এজন্য নিজের আসক্তির বিষয়গুলিকে দেখুন। নিজের স্মার্টফোনকে ব্যবহার করছেন মালিক হয়ে না আসক্তিবশত? দ্বিতীয়টি হলে অভ্যাস করুন আজ বা কাল অন্তত ২-৩ ঘন্টা ব্যবহার না করতে। এই গ্রুপে এমন অনুশীলন করেছেন আপনি বহুবার। অর্থাৎ ইচ্ছা করলে আপনি আসক্তিকে জয় করতে পারেন। আরেকটু তলিয়ে দেখুন। আপনি আশ্রমে প্রতিমাসে চাঁদা দেন, দুঃস্থ ছাত্র বা লোককে সাহায্য করেন, রাস্তায় ভিক্ষা দেন, সাধুকে প্রণামী দেন, রেস্টুরেন্টে টিপস দেন, ঝিকে ১০-২০ টাকা। অর্থাৎ আপনি টাকার প্রতি ঘোর আসক্ত নন। কিন্তু কাল্পনিক ভয়ে নিজের এই অনাসক্তিকে প্রকাশ করেন কোনো-কোনো সময়। অন্য বিষয়গুলি নিয়েও একই কথা। আগে নাটক করতেন, ছবি আঁকতেন, ফুটবল খেলতেন, কিন্তু বিয়ের পর সব ছেড়ে দিয়েছেন। আসক্তির বিষয়গুলি থেকে সরে গেছেন।যে মেয়েকে এতো ভালবাসতেন তাকেই বিয়ে দিয়ে স্বামীর ঘরে পাঠিয়ে দিলেন। কষ্ট হয়েছিল কিন্তু আনন্দের সঙ্গেই সেই দুঃখ জয় করেছেন। ছেলে চাকরি পেয়ে বিদেশে গেলে তাকে হাসিমুখে বিদায় দিয়েছিলেন। এর অর্থ কি? জীবনে বারবারই আসক্তি জয় করেছেন আপনি। এই অনাসক্তির পরিচয় দিয়েছেন যখনই প্রয়োজন হয়েছে। আপনার স্বভাবে এই অমূল্য গুণ আছে। কাল্পনিক ভয় ছেড়ে উঠে দাঁড়ান। অন্তরের অসীম শক্তিকে অনুভব করুন।”





