শাসকদলের মদতে মাফিয়াদের দৌরাত্ম, ভরাট পুকুর সংস্কার লাটে,পানাগড়ে জলশূণ্য করে মাটি পাচার প্রাচীন পুকুরের
সংবাদদাতা, দুর্গাপুর:- একেই বলে ‘গেঁও যোগী ভিক পায় না’। খরচের দোহায় দিয়ে নির্বিচারে ভরাট পুকুর সংস্কার উদ্যোগ নেয়। অথচ জলশূন্য করে প্রাচীন পুকুর কেটে অবাধে চলছে মাটি পাচার বলে অভিযোগ । তাও আবার আধুনিক যন্ত্র দিয়ে অবৈজ্ঞানিক উপায়ে চলছে মাটি খনন। পুকুরের গভিরতা অস্বাভাবিক করায় আতঙ্কে আশপাশের বাসিন্দারা। আর তাতেই প্রশ্ন উঠেছে। এমনই নজিরবীহিন ছবি ধরা পড়ল পানাগড়ে। এ সবই নাকি চলছে শাসক দলের মদত পুষ্ট একদল মাটি মাফিয়াদের সরাসরি হস্তক্ষেপে।
কাঁকসার পানাগড় মৌজার খাঁ পুকুর। যার ২৭৮১ দাগ নং এর প্রায় সাড়ে তিন একর পুকুরকে জলশূন্য করা হয়েছে। তারপর গত কয়েকদিন ধরে চলছে জেসিবি যন্ত্র দিয়ে মাটি খননের কাজ। প্রায় ৭-১০ ফুট বাড়তি গভির করা হচ্ছে। আর ওই মাটি ডাম্পারে করে পাচার হচ্ছে পানাগড় শিল্পতালুকে। অভিযোগ, শাসকদলের মদতে নাকি চলছে মোটা টাকার বিনিময়ে ওই মাটি বিক্রি। আর তাতেই উঠেছে প্রশ্ন। আশপাশের বাসিন্দারা জানান,” যেভাবে গভিরতা করা হচ্ছে, তাতে ছোট ছেলে মেয়েরা পড়ে গেলে ডুবে যাওয়ার শঙ্কা রয়েছে। তাছাড়া ওই মাটি পুকুরের পাড়ে দিয়ে মজবুত না করে, অন্যত্র পাচার করা হচ্ছে। ফলে আশপাশের ঘরবাড়ী, পাঁচিল দুর্বল হয়ে পড়বে। পুকুরের পাড়ে ভেঙে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। তাই পুকুরের নাবত্যা বাড়াতে হলে, নিয়ম মত পলি তুলে পুকুর পাড়ে দেওয়া হোক। তাতে পাড় ধসে যাওয়ার শঙ্কা থাকবে না।”
পুকুরের অংশিদারি নিত্যগোপাল শুকুল বলেন,” আমাদের অংশ আছে। অথচ আমি জানতেই পারলাম না, পুকুরের মাটি কেটে পাচার হচ্ছে।”
পানাগড় নাগরিক মঞ্চের পক্ষে প্রকাশ দাস বলেন,” গত ২০১৬ সাল থেকে গোটা কাঁকসা ব্লক জুড়ে কমবেশী ২০ টি পুকুর, দীঘি অবাধে ভরাট চলছে। অভিযোগের পর অভিযোগ জানিয়েছি। বিএলআরও থেকে খোদ মুখ্যমন্ত্রীর কাছেও অভিযোগ জানিয়েছি। কোন কাজই হয়নি। অথচ, ওইসব ভরাট পুকুর সংস্কারে কোন উদ্যোগ নেই ব্লক প্রশাসন থেকে জেলা প্রশাসনের। ভরাট পুকুর সংস্কারের আবেদন করলেই বলা হয় ফান্ড নেই। অথচ, মোটা টাকা লুঠতে জলপূর্ন পুকুরকে জল শূন্য করে নির্বিচারে চলছে মাটি পাচার।” তিনি আরও বলেন,” কোথায় সমতল করতে মাটি প্রয়োজন হলে ভরাট পুকুর সংস্কার করে সেখানের মাটি নেওয়া হোক। তাহলে জলাশয়গুলি পুর্বের অবস্থায় ফিরবে। জলসংরক্ষনের আধার বাড়বে।”
উল্লেখ্য, ১৯৫৫ সালের ভুমি রাজস্ব আইন অনুযায়ী, মাটি কাটার আগে নিয়ম মেনে নির্দিষ্ট রয়েলটি ও সেস দিয়ে অনুমতি নিতে হয় জেলা ভুমি রাজস্ব দফতরের। অভিযোগ, নিয়ম নীতিকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে চলছে সংস্কারের নামে মাটি বিক্রির রমরমা কারবার। এলাকাবাসীদের আরো অভিযোগ পুকুর ভরাট করে অবাধে হয়েছে জনবসতি থেকে বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান । কোথাও কোথাও তো পুকুর ভরাট করে হাসপাতালের মতন বড় বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান তৈরি হয়েছে। আর এ সবই নাকি রাজ্যের ভূমি রাজস্ব বিভাগের একশ্রেণীর দুর্নীতিগ্রস্ত আধিকারিকদের প্রত্যক্ষ মদতে চলছে বলে অভিযোগ।
স্থানীয় বিজেপি নেতা রমন শর্মা বলেন,” শাসকদলের মদতে চলছে মাটি বিক্রির রমরমা কারবার। তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি।” তৃণমূলের কাঁকসা ব্লক সভাপতি নবকুমার সামন্ত অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন,” বিষয়টি দেখেছি। গ্রামের ভিতর এত গভিরভাবে মাটি কাটা উচিত নয়। তাতে মাছ চাষ ঠিকমত হবে না। পুকুরপাড় দুর্বল হবে। মাটি কাটা বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে।” তবে কাঁকসা ভুমি রাজস্ব দফতর অবশ্য এবিষয়ে কোন মন্তব্য করেনি।