নিজস্ব সংবাদদাতা, বর্ধমানঃ- খোদ রাজ্য সরকারের অধীনস্থ সংস্থা তন্তুজ থেকে দেওয়া অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের কর্মী ও সহায়কদের শাড়ির গুণগত মান নিয়ে অভিযোগ তুললেন পূর্ব বর্ধমান জেলার অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী সহায়করা। মঙ্গলবার এই কর্মীরা বর্ধমানের অতিরিক্ত জেলাশাসক (উন্নয়ন) রজত নন্দা এবং আইসিডিএসের জেলা প্রকল্পাধিকারিক পাপিয়া হালদার চট্টোপাধ্যায়ের কাছে এব্যাপারে লিখিত অভিযোগও দায়ের করলেন। এই ঘটনায় ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। খোদ রাজ্য সরকারের অধীনস্থ সংস্থা থেকে রাজ্য সরকারের অধীন আইসিডিএসের বিভিন্ন প্রোজেক্টে কর্মরত অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী, সহায়কদের জন্য দেওয়া শাড়ি পড়ার অযোগ্য বলে দাবী করলেন অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীরা। এদিন অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী মাধবী সাহা জানিয়েছেন, বেশ কিছুদিন ধরেই এই সেণ্টার চালাতে কালঘাম ছুটছে তাঁদের। তিনি জানিয়েছেন, অঙ্গনওয়াড়ি শিশু ও মায়েদের জন্য যে খাবার বরাদ্দ করা হয়েছে তাতে ডিমের দাম বাজারে অনেক বেশি। খোলা বাজারে তাঁদের প্রতিটি ডিম কিনতে হচ্ছে ৬টাকা দরে, অথচ সরকার তাঁদের দিচ্ছে সাড়ে চারটাকা। এরই পাশাপাশি সরকার অঙ্গনওয়াড়ি সেণ্টারগুলিতে গ্যাসে রান্নার জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেবার কথা ঘোষণা করলেও এখনও তাঁদের জ্বালানি হিসাবে কেরোসিন, কাঠই ব্যবহার করতে হচ্ছে। তিনি জানিয়েছেন, এই জ্বালানির জন্য যে অর্থ বরাদ্দ করা হয় তাও প্রয়োজনের তুলনায় কম। জানা গেছে, বর্তমানে অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রগুলিতে ১ থেকে ৩০জন শিশুদের জন্য জ্বালানি খাতে সরকারী বরাদ্দ ১৮টাকা প্রতিদিন। ৩০ থেকে ৫০ পর্যন্ত ১৯ টাকা প্রতিদিন এবং ৫১ বা তার বেশি শিশুদের জন্য বরাদ্দ করা হয় ২১ টাকা। অন্যদিকে ডিমের জন্য বর্তমানে বরাদ্দ ৫টাকা। অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীরা জানিয়েছেন, সরকারী যে অর্থ বরাদ্দ করা হচ্ছে সেই টাকায় সেণ্টার চালানো প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ছে। এরই মাঝে রয়েছে সরকারী নির্দেশ। সরকারী নির্দেশানুসারে সপ্তাহে ৩ দিন ডিমের ঝোল ভাত দেওয়ার কথা। কিন্তু তাঁরা সেই নির্দেশ মানতে গিয়ে নাকানিচোবানি খাচ্ছেন। এদিন অতিরিক্ত জেলাশাসকের কাছে ডিম ও জ্বালানির খরচ পোষাতে না পেরে তাঁরা প্রতিদিন খিচুরি রান্না করারও অনুমতি চেয়েছেন। এদিকে, এরই পাশাপাশি এদিন অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীরা সোচ্চার হয়েছেন সরকারীভাবে তাঁদের যে শাড়ি দেওয়া হয়েছে এবং যা পরা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে তা নিয়েই। জানা গেছে, অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের সহায়ক ও কর্মীদের জন্য সম্প্রতি ২টি করে শাড়ি বরাদ্দ করা হয়েছে। পূর্ব বর্ধমান জেলায় বর্তমানে ২৪টি প্রোজেক্টের অধীন ৬৮৫৩টি সেণ্টার রয়েছে। তার মধ্যে চালু রয়েছে ৬৮১২টি সেণ্টার। এর মধ্যে সহায়ক রয়েছে ৬১৬১ জন এবং অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী রয়েছেন ৫৫৪৯জন। সম্প্রতি সরকারীভাবে এঁদের জন্য গোটা জেলায় দুটি করে শাড়ি বরাদ্দ করা হয়েছে। কিন্তু এর মধ্যে অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীদের ৩৯টি এবং অঙ্গনওয়াড়ি সহায়িকার জন্য ৩৬টি শাড়ি খারাপ বের হওয়ায় তা বদলেও দেওয়া হয়। এদিন অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীরা জানিয়েছেন, প্রায় সাড়়ে চার বছর আগে তাঁদের শেষ শাড়ি দেওয়া হয়েছিল। দীর্ঘদিন পর সম্প্রতি তাঁদের শাড়ি দেওয়া হলেও এই শাড়ির গুণগত মান অত্যন্ত নিম্নমানের। একবার কাচার পর পড়ার অযোগ্য হয়ে যাচ্ছে। রং উঠে যাচ্ছে। এই শাড়ি পড়ে তাঁদের পক্ষে কাজ করাই অসম্ভব হয়ে উঠেছে। এদিকে, এই বিষয় সম্পর্কে অতিরিক্ত জেলাশাসক (উন্নয়ন) রজত নন্দা জানিয়েছেন, তিনি অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীদের কাছ থেকে অভিযোগ পেয়েছেন। এটি সংশ্লিষ্ট দপ্তরে জানিয়ে দেওয়া হচ্ছে। অপরদিকে, আইসিডিএসের জেলা প্রকল্পাধিকারিক পাপিয়া হালদার চট্টোপাধ্যায় জানিয়েছেন, তিনিও শুনেছেন শাড়ির এই বিষয়টি। তিনি গোটা বিষয়টি উর্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠিয়ে দিচ্ছেন।