eaibanglai
Homeএই বাংলায়অনুব্রত ও তার এফেক্ট

অনুব্রত ও তার এফেক্ট

জ্যোতি প্রকাশ মুখার্জ্জী,কলকাতাঃ- ১১ ই আগষ্ট সকালে সিবিআইয়ের হাতে তৃণমূলের অন্যতম বর্ণময় ও দাপুটে নেতা অনুব্রত মণ্ডল প্রথমে আটক ও পরে গ্রেপ্তারের সঙ্গে সঙ্গে অবশেষে গত কয়েক মাসের টানটান উত্তেজনার আপাত সাময়িক সমাপ্তি। পরবর্তীকালে কি হবে সেটা বিচার প্রক্রিয়ার শেষে জানা যাবে।

তার জমিদার সুলভ আচরণ, মুখ:নিসৃত ‘বাণী’ কারও পচ্ছন্দ হোক বা না হোক তার দাপটে বীরভূম এবং পূর্ব বর্ধমানের আউসগ্রাম, মঙ্গলকোট ও কেতুগ্রামে তৃণমূল বিরোধী দলগুলো যে কার্যত দিশেহারা ছিল সেটা কেউই অস্বীকার করতে পারবেনা। ফলে অনুব্রত মণ্ডলের অনুপস্থিতিতে তৃণমূল বিরোধী বিজেপি, সিপিএম বা কংগ্রেস নতুন করে সংগঠন গড়ে তোলার চেষ্টা করবে, সেটা স্বাভাবিক। কিন্তু বর্তমানে এই দলগুলোর দুর্বলতা এতটাই প্রকট যে তারা সুযোগের সদ্ব্যবহার করতে পারবে বলে মনে হয়না। গত বিধানসভা ভোটের পর থেকেই দুই তৃতীয়াংশ আসন পেয়ে ক্ষমতায় আসা একটা দলের বিরুদ্ধে বিরোধী দলগুলোর আব্দার রাষ্ট্রপতি শাসন জারি করতে হবে। ভোট পরবর্তী হিংসায় আক্রান্ত দলীয় কর্মীদের পাশে দাঁড়ানোর পরিবর্তে তাদের এই দাবি কতটা হাস্যকর সেটার জন্য কোনো অনুমানের দরকার হয়না। সুতরাং বর্তমান পরিস্থিতিতে অনুব্রতের গড়ে তারা সুযোগ নিতে পারবে বলে মনে হয়না। তাছাড়া তৃণমূলের ভোট অনুব্রতকে দেখে হয়না এবং তার বিরুদ্ধে আপাতত কোনো অভিযোগ প্রমাণিত নয়। সবটাই তদন্তকারীর এজেন্সির ‘দাবি’।

অনুব্রতকে আটক করে গাড়িতে তোলার সময় বা দুর্গাপুর নিয়ে যাওয়ার দীর্ঘ পথে বারবার তার বিরুদ্ধে ‘গরু চোর’ ধ্বনি উঠেছে। এই ধ্বনি কতটা সংগঠিত রাজনৈতিক, কতটা সাধারণ মানুষের বা দলের বিক্ষুব্ধ অংশের ক্ষোভের প্রকাশ এবং সেটা ব্যক্তি অনুব্রত না তৃণমূল দলের বিরুদ্ধে সেটা অবশ্যই দ্যাখার বিষয়। রাজনৈতিক ক্ষোভ হলে খুব একটা এফেক্ট হবেনা। বর্তমানে বিরোধী দলগুলোর ক্ষোভ রাত পার হলেই সমাজ মাধ্যমে সীমাবদ্ধ হয়ে যাবে। আন্দোলন করার মত লোকবল তাদের নাই। গরু পাচারের জন্য সরাসরি জনগণের কোনো আর্থিক ক্ষতি হয়নি। ফলে জনগণ কতটা আগ্রহ দ্যাখাবে বলা কষ্ট।তাছাড়া অনুব্রত মণ্ডলের বিরুদ্ধে কথা বললেও এবার কার বিরুদ্ধে বলবে? মমতা?শাস্তির জন্য প্রমাণ দিতে হবে সিবিআইকে এবং শাস্তি দেবে আদালত। কিন্তু ব্যক্তি অনুব্রতের পরিবর্তে তৃণমূল দলের বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত ক্ষোভ হলে বিষয়টি নিয়ে তৃণমূল দলকে ভাবতেই হবে। আপাতত সাধারণ মানুষের আলোচনা অনুব্রত মণ্ডলকে নিয়েই সীমাবদ্ধ।

প্রাথমিক চাপ থাকলেও অনুব্রত মণ্ডল গ্রেপ্তারের ফলে দল হিসাবে তৃণমূলের সার্বিক ক্ষতির সম্ভাবনা কার্যত নাই। তবে বীরভূম এবং পূর্ব বর্ধমানের মঙ্গলকোট, আউসগ্রাম ও কেতুগ্রামে আংশিক ক্ষতি হতে পারে আবার নাও পারে। দিনের শেষে জয়লাভ করলেও অনুব্রত থাকা সত্ত্বেও বিগত বিধানসভা ভোটে মঙ্গলকোট, আউসগ্রাম ও কেতুগ্রামে তৃণমূলের ফলাফল কিন্তু খুব একটা ভাল হয়নি। অনেক এলাকায় পেছিয়ে ছিল। দায়িত্বপ্রাপ্ত কিছু নেতার খারাপ ‘ফেস ভ্যালু’-র জন্যই কিন্তু এইরকম হতাশাজনক ফলাফল। তার উপর দলের দুর্দিনের কর্মীদের পরিবর্তে অন্যদল বিশেষ করে সিপিএম থেকে আসা কর্মীদের সামনের সারিতে আনার ফলে দলের দুর্দিনের কর্মীদের একটা অভিমান ও চাপা ক্ষোভ থেকে গিয়েছিল। তারও একটা ফল ভোটে পড়েছিল।

সকালের কাগজে অনুব্রত মণ্ডলের খবর দেখে একদফা আলোচনা হবে। সেটা লাঞ্চের সময় শেষ হয়ে যাবে। তৃণমূল বিরোধীরা দু’দিন মিটিং মিছিল করবে। মমতাকে গ্রেপ্তারের দাবি তুলবে। কংগ্রেস ও সিপিএম সেটিং এর গল্প শোনাবে। তারপর চোরাবালিতে মুখ থুবড়ে পড়বে। সিপিএম বেশি কিছু বলতে গেলেই তাদের দলের ‘সম্পদ’-এর নাম সামনে চলে আসবে।ওদিকে ‘চাঞ্চল্যকর তথ্য’-এর কাহিনী পরিবেশন করবে একদল সংবাদ মাধ্যম।

অনুব্রত মণ্ডলের এলাকায় তৃণমূলের দুর্দিনের অথচ অবহেলিত কর্মীরা তাদের হারিয়ে যাওয়া সম্মান ফিরে পাওয়ার আশায় বুক বাঁধতে পারে। অন্যদিকে তার হাত বা পা ধরে যারা তৃণমূলের সামনের সারিতে এসেছে পদ হারানোর আশঙ্কায় তাদের অধিকাংশের মানসিক চাপ বাড়বেই।

তবে অনুব্রতের ঘটনা তৃণমূল সহ সব রাজনৈতিক দলগুলোকে একটা শিক্ষা দিয়ে গ্যালো- ক্ষমতা বা পদের অপব্যবহার করলে কপালে দুর্দশা আছে। তৃণমূলের যেসব নেতারা এখনো উদ্ধত আচরণ করছে সাবধান না হলে তাদের অবস্থা অনুব্রতের থেকেও খারাপ হতে পারে। জনগণ কিন্তু মুখ খুলতে শুরু করেছে।

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments