নিজস্ব সংবাদদাতা,দুর্গাপুরঃ– থাইল্যান্ডে অনুষ্ঠিত কিকবক্সিং বিশ্বকাপে জোড়া স্বর্ণপদক পেয়ে দেশের নাম উজ্জ্বল করল দুর্গাপুরের ছোট্ট মেয়ে আরাধ্যা ধীবর। প্রসঙ্গত গত ফেব্রুয়ারি মাসেই নিউ দিল্লীতে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক কিকবক্সিং প্রতিযোগিতায় তিনটি স্বর্ণপদক পেয়ে সবাইকে চমকে দিয়েছিল (মাত্র ৯ বছরের) এই সোনার মেয়ে।
গত ৭ই এপ্রিল থেকে ১২ই এপ্রিল থাইল্যান্ডের রাজধানী শহর ব্যাংককে ইউথ সেন্টার (থাই জাপান) ইনডোর স্টেডিয়ামে কিকবক্সিং বিশ্বকাপ প্রতিযোগীতার আয়োজন করা হয়েছিল। বিশ্বকাপের উদ্বোধন করেন বিশ্ব কিকবক্সিং পরিচালন সংস্থা ওয়াকো (WAKO)র প্রেসিডেন্ট রয় বেকর। যেখানে মোট ৪০টি দেশের প্রায় ৯০০ খেলোয়াড় অংশগ্রহণ করেছিলেন। আয়োজক দেশ থাইল্যান্ড ছাড়াও মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, ইন্দোনেশিয়া, কোরিয়া,অস্ট্রেলিয়া ,ফ্রান্স,স্পেন, তুরস্ক, ডেনমার্ক, ইসরায়েল, প্যালেস্টাইন,আমেরিকা, কানাডা, পর্তুগাল, মরিশাস,মরক্কো, ইউক্রেন, উজবেকিস্তান, জার্মানি, আয়ারল্যান্ড, এস্টোনিয়া, ইরাক, ইরান, চিন, ভারত, পাকিস্তান,ইত্যাদি দেশের আন্তর্জাতিক স্তরের খেলোয়াড়রা এই প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেছিল। এই বিশ্বকাপে দেশের মোট ৩১ জন কিক বক্সার দেশের প্রতিনিধিত্ব করেন ও মোট ৩২টি ক্যাটাগরিতে ভাগ নেন। তারমধ্যে দুর্গাপুরের আরাধ্যাই একমাত্র চাইল্ড ক্যাটাগরিতে অংশগ্রহণ করে এবং ৩৬ ও +৩৬ বিভাগের পয়েন্ট ফাইট ইভেন্টে অংশ নিয়ে দু দুটি স্বর্ণ পদক জিতে নেয়।
পরিবার সূত্রে জানা গেছে স্কুল জীবনে প্রবেশ করেই কিকবক্সিং-এ হাতে খড়ি আরাধ্যার। প্রশিক্ষক ঈশ্বর মাঝির কাছে দেড় বছর ধরে এই খেলার তালিম নিযচ্ছে সে। বর্তমানে সে ওরেঞ্জ বেল্ট প্রাপক এবং স্কুল, জেলা, রাজ্য, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক স্তরে মোট ২০টি পদক প্রাপক। এবার তার সঙ্গে যুক্ত হলো আরও দুটি স্বর্ণপদক।
বিশ্বকাপের এই সাফল্যের জন্য কোচ ঈশ্বর মাঝি, নিজের স্কুল ও তার পাশে দাঁড়ানো স্বেচ্ছাসেবী ব্যক্তিদের কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানিয়েছে ছোট্ট আরাধ্যা। কারণ তার এই সাফল্যের পথ সহজ ছিল না। আর্থিক অনটনের মধ্যে থাকা আরাধ্যার পরিবারের পক্ষে আন্তর্জাতিক স্তরের খেলাধূলার সাজ সরঞ্জাম থেকে শুরু করে বিশ্বকাপে যোগ দেওয়ার রেজিস্ট্রেশন ফিস ও যাওয়া আসার খরচ বহন করা ছিল প্রায় অসম্ভব। এই পরিস্থিতিতে আরাধ্যার পাশে দাঁড়ায় তার স্কুল ও কয়েক জন সমাজসেবী।
আরাধ্যার মা কাকলী ধীবর জানানা, অনেক নেতা, মন্ত্রী ও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বরা আশ্বাস দিলেও শেষ পর্যন্ত সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়নি কেউ। ফলে বাধ্য হয়েই বেশির ভাগ অর্থ ঋণ করে ও মেয়ের ভবিষ্যৎ সঞ্চয় থেকে ব্যয় করা হয়। এছাড়াও প্রশিক্ষক ঈশ্বর মাঝির আন্তরিক প্রচেষ্টায় কয়েকজন স্বেচ্ছাসেবী এগিয়ে আসেন। পাশে দাঁড়ায় আরাধ্যার স্কুলও। তাই তাঁদের অবদান ভোলার নয়। তাঁদের জন্যেই আজ আরাধ্যা দেশের হয়ে স্বর্ণ পদক জয় করতে পেরেছে, যা দেশের গর্বের বিষয়। তবে আগামীদিনে আরাধ্যা আরও অনেক আন্তর্জাতিক স্তরের খেলায় অংশ নিতে চায় ও দেশের নাম উজ্জ্বল করতে চায়। সেক্ষেত্রে সরকার বা কোনো স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনকে সহায়তার আবেদন জানিয়েছেন তিনি।





