সংবাদদাতা, বর্ধমান: বাংলাদেশী অনুপ্রবেশকারীকে টাকার বিনিময়ে আশ্রয়দান ও ভারতীয় জাল নথি তৈরী করে দেওয়ার অভিযোগে এক বাংলাদেশী সহ ৩ জনকে গ্রেফতার করলো বর্ধমান থানার পুলিশ। বর্ধমান শহর সংলগ্ন মালিরবাগান এলাকা থেকে স্বতঃপ্রণোদিত মামলা রুজু করে তাদের গ্রেফতার করল পুলিশ। এই ঘটনায় ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ধৃত বাংলাদেশী রাজু আহমেদ-এর বাড়ি বাংলাদেশের ময়মনসিংহ জেলার কুর্শাপুরে। সুদীপ কুমার দাস ওরফে বাপন-এর বাড়ি পশ্চিম বর্ধমানের আসানসোল দক্ষিণ থানার অন্তর্গত চাঁদপাড়ায় এবং সেখ মাজেদ রহমান-এর বাড়ি বর্ধমানের মালিরবাগানে। স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, মোটা টাকার বিনিময়ে বৈধ কাগজপত্র ছাড়ায় রাজু আহমেদ-কে বাংলাদেশ থেকে ভারতে ঢোকার ব্যবস্থা করে দেয় সুদীপ কুমার দাস। আর ভারতে প্রবেশ করার পর তাকে আশ্রয় দেয় সেখ মাজেদ রহমান। পুলিশের দাবী, অনুপ্রবেশকারীদের মোটা টাকার বিনিময়ে ভারতীয় নথিও তৈরী করে দিত সুদীপ ও মাজেদ। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, অবৈধভাবে বাংলাদেশী নাগরিকদের ভারতে প্রবেশে সাহায্যকারী দালালদের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রাখতো সুদীপ। সুদীপের কথা মতো অনুপ্রবেশকারীদের আশ্রয় দিত মাজেদ। পরে সময় সুযোগ মতো মোটা টাকার বিনিময়ে ভারতীয় নথি তৈরী করে দিত তারা। ধৃত রাজু আহমেদ, সুদীপ কুমার দাস ও সেখ মাজেদ রহমানের বিরুদ্ধে ভারতীয় ন্যায় সংহিতার ২৪৯ নং ধারা ও ফরেনারস্ অ্যাক্টের ১৪এও ১৪সি ধারায় মামলা রুজু করে তদন্তের স্বার্থে ৭ দিনের পুলিশী হেফাজতের আবেদন জানিয়ে মঙ্গলবার বর্ধমান আদালতে পেশ করা হয়। কোন পথে, কিভাবে এবং কাদের সহযোগিতায় অনুপ্রবেশ চলত, কিভাবেই বা কোনো কাগজপত্র ছাড়াই কাদের সহযোগিতায় অনুপ্রবেশকারীদের ভারতীয় নথি তৈরী করে দিত অভিযুক্তরা খতিয়ে দেখছে পুলিশ। এদিন আদালতের পথে যাবার সময় ধৃত রাজু আহমেদের দাবী, তিনি আওয়ামী লিগ দল করতেন। কিন্তু বিএনপি-র সঙ্গে কিছু সমস্যা ছিল তাই তিনি ভারতে চলে আসেন। অন্যদিকে, পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, সেখ মাজেদের বাড়ি ৬মাইলের চামারদিঘী এলাকায় হলেও বেশ কিছুদিন ধরেই মালিরবাগানের একেবারে শেষপ্রান্তে সে একটি বাড়ি তৈরী করে থাকত। এলাকার মানুষজন জানিয়েছেন, মাঝে মাঝেই তাঁরা মাজেদের বাড়িতে বিভিন্ন ধরণের লোকের আনাগোনা দেখতেন। তা নিয়ে তাকে প্রশ্ন করলেও বিভিন্ন কারণ দেখাতো মাজেদ। সে জানাতো কাজের জন্য ভিন রাজ্যে রাজমিস্ত্রী, জোগাড়েদের তিনি যোগান দেবার কাজ করেন। তাই তার বাড়িতে অনেক লোক আসে। স্থানীয় এক নেতা জানিয়েছেন, এর আগেও তাঁরা মাজেদের এই গতিবিধির বিষয় নিয়ে পুলিশকে জানিয়েছিলেন। অপরদিকে, ধৃত সুদীপ কুমার দাস সম্পর্কে পুলিশের প্রাথমিক ধারণা সেই বাংলাদেশ সীমান্তের দালালদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখার কাজ করত। সেখান থেকে বাংলাদেশীদের নিয়ে এসে মাজেদের ডেরায় তুলতো। তার বাড়ি আসানসোলে হলেও বেশির ভাগ সময়ই সে মাজেদের বাড়িতেই থাকতো। পুলিশের অনুমান, এই সুদীপ এবং মাজেদ মিলেই জাল নথী তৈরী করে বাংলাদেশীদের অন্যান্য রাজ্যে পাঠিয়ে দিত। স্থানীয়দের অনুমান, দীর্ঘদিন ধরেই এরা এই কাজ করতো। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গোটা বিষয়টিই আতস কাচের নিচে। কতদিন ধরে তারা এই কাজ করছিল, কতজনকে এখনও পর্যন্ত এভাবেই জাল নথী তৈরী করে দেওয়া হয়েছে ধৃতদের পুলিশী হেফাজতে নিয়ে জানার চেষ্টা চলছে। অন্যদিকে, এই ঘটনায় স্থানীয় গ্রাম পঞ্চায়েতের পক্ষ থেকে প্রতিটি গ্রামে গ্রামে এদিন থেকেই প্রচার চালানো শুরু হয়েছে। অপরিচিতদের বাড়ি ভাড়া না দেওয়া এবং অপরিচিতদের সম্পর্কে বিশদ তথ্য সম্পর্কে গ্রাম পঞ্চায়েত এবং পুলিশকে জানানোর অনুরোধ করা হচ্ছে।





