বিশেষ সংবাদদাতা, আসানসোল:- চাকা ঘুরছে। ফের মলয় ঘটকেই ভরসা মমতার। প্রবীন মলয়কে বিভিন্ন সংকটকালে সময়ে অসময়ে অতীতেও ব্যবহার করেছেন তৃণমূল কংগ্রেস সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
রবিবারের সকালে, অসমে দলের সংগঠন বাড়ানোর দায়িত্বে মলয়কে বেছে নিয়ে মমতা নতুন করে প্রমাণ দিলেন – দলের কাছে মলয় এখনও ব্রাত্য তো ননই, বরং সংকটে সেই মলয়ই তার কাছে পারানের কড়ি।
নতুন দায়িত্ব পেয়ে মলয় এদিন বলেন, “আমি বরাবরই দলের একজন অনুগত সৈনিক। দল যখন যা দায়িত্ব দেবে, দলনেত্রীর নির্দেশে তা পালন করতে আমি বাধ্য। দলই আমার কাছে প্রধান বিষয়।” এদিকে, গত তিন বছরে জেলার রাজনীতিতে কার্যতঃ কোণঠাসা হয়ে পড়া মলয়ের পালে ফের নতুন হওয়া লাগায় উদ্বেগে আসানসোল দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চলে দলের নেতৃত্বের একাংশ। তাদের মতে, দলে ফের মলয়ের গুরুত্ব বাড়লে জেলার আরেক মন্ত্রী প্রদীপ মজুমদারের ঘনিষ্ঠজন থেকে দলের বর্তমান জেলা সভাপতি নরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর ঘনিষ্ঠরা সমস্যায় পড়তে পারেন। মলয়ের আরেক বিরোধী শিবির তাপস বন্দ্যোপাধ্যায়ের ডানা কয়েকমাস আগেই ছেঁটে ফেলে তাকে গ্যারেজ বন্দী করে রেখেছে দল। আসানসোল দুর্গাপুর উন্নয়ন সংস্থার চেয়ারম্যানের মতো গুরুত্বপূর্ণ পদ থেকে আচমকাই তাকে হঠিয়ে সেখানে ‘ কক্ষনো তৃণমুল না করতে চাওয়া’ বিতর্কিত হোটেল ব্যাবসায়ী কবি দত্তকে ওই আসনে বসিয়ে জেলার বিবদমান গোষ্ঠীগুলিকে শায়েস্তা করতে চায় টিএমসি। সেই থেকেই হার্ট অপারেশন করিয়ে আসা অনেকটাই গুটিয়ে জন নরেন্দ্রনাথ। দুদিন হলো মলয়ও সেই হার্ট অপারেশন করিয়েই ফিরেছেন। আর ফিরে আসার পর পরই পেলেন বাড়তি দায়িত্ব। এতে নরেন্দ্রনাথের মানসিক চাপ বাড়বে বৈ কমবে না। জেলা তৃণমূলের নরেন্দ্রনাথ ঘনিষ্ঠ একাংশ অবশ্য বলছেন, ওনাকে বাক্সবন্দী করে অসমে পাঠিয়ে দল আসলে তাকে শিল্পাঞ্চল থেকে নির্বাসনই দিলো।
গত লোকসভা নির্বাচনে আসামের চারটি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিল তৃণমূল কংগ্রেস – শিলচর, লখিমপুর, বরপেটা এবং কোকড়াঝাড়। কিন্তু, শোচনীয় পরাজয় হয় তৃণমূল কংগ্রেসের চার প্রার্থীরই। এরপর, গত ১ সেপ্টেম্বর নানা অভিযোগ তুলে অসম তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতির পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে দলই ছেড়ে দেন রিপুন বোরা।
উল্লেখ্য, গত একুশের বিধানসভা নির্বাচনের পর থেকেই ছোট রাজ্যগুলিতে ঘাসফুল ফোটাতে মরিয়া হয়ে ওঠে তৃণমূল কংগ্রেস। এই ছোট রাজ্যগুলির মধ্যে রয়েছে—অসম, ত্রিপুরা, গোয়া এবং মেঘালয়। মেঘালয়ে প্রধান বিরোধী দল তৃণমূল কংগ্রেস হতে পারলেও বাকি তিন রাজ্যে তেমন উল্লেখযোগ্য কোনো দাগই কাটতে পারেনি। তবে, দলের নেতৃত্বের মতে, সময় চলে গিয়েছে এমনটাতো আর নয়! এই আবহেই এবার অসম তৃণমূল কংগ্রেসের দায়িত্ব দেওয়া হল বাংলার আইনমন্ত্রী, আসানসোলের মলয় ঘটককে। রিপুণের ইস্তফার পর থেকে অসমে এখন দলের সভাপতির পদ ‘শূন্য’। সেখানে মলয় ঘটককে পাঠানো হচ্ছে দক্ষ সংগঠক হিসাবে। মলয় ঘটক যে দক্ষ সংগঠক সেটা বিরোধী দলগুলিও বিলক্ষণ জানে। তাই এই বাড়তি দায়িত্ব নিঃসন্দেহে বাংলার রাজ্যরাজনীতিতে বেশ তাৎপর্যপূর্ণ, সন্দেহ নেই।
রবিবার সকালের পর তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষ থেকে একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তি জারি করে মলয়ের নতুন দায়িত্বের কথা জানানো হয়েছে। ওই বিজ্ঞপ্তিতে লেখা রয়েছে, ‘মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অনুপ্রেরণায় এবং নির্দেশে আইনমন্ত্রী মলয় ঘটককে অসম রাজ্য তৃণমূল কংগ্রেসের দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে।’ তবে, তিনি অসমে দলের সভাপতির পদ পাচ্ছেন কিনা সেটা অবশ্য আদৌ পরিষ্কার নয়।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কংগ্রেস ছেড়ে বেরিয়ে যখন তৃণমূল কংগ্রেস গড়ে তোলেন তখন মলয় ঘটকও কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূল কংগ্রেসে আসেন। আর আসানসোল–দুর্গাপুরে দলের সংগঠন গড়ে তোলেন।
তাই অতীতের কথা মনে রেখে মলয় ঘটকের ওপরেই ফের ভরসা রাখলেন তৃণমূল সুপ্রিমো। লোকসভা নির্বাচনের প্রাক্কালে অসমের সংগঠনকে মজবুত করতে একাধিক পদক্ষেপ নিয়েছিল তৃণমূল কংগ্রেসের শীর্ষ নেতৃত্ব। প্রয়াত কংগ্রেস হেভিওয়েট সন্তোষমোহন দেবের মেয়ে সুস্মিতা দেবকে দু’দফায় রাজ্যসভাতেও পাঠিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এখনও তিনি বাংলা থেকে রাজ্যসভার সদস্য। সুস্মিতাই অসমকে শক্তিশালী করতে কলকাতা নিয়ে এসে ছিলেন রিপুন বোরাকে। তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় তাকে অসম তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি করেন। কিন্তু তারপরও কোনও উল্লেখযোগ্য ফল আসেনি। দলের একই দশা হয় পাশের রাজ্য ত্রিপুরাতেও।