সংবাদদাতা,আসানসোলঃ- অজয় নদ, গঙ্গার অন্যতম প্রধান শাখা নদী ভাগীরথী বা হুগলির একটি উপনদী। যেটি বিহারের জামুই জেলা চাকাই ব্লকের বাটপার অঞ্চলের পাহাড় থেকে উৎপন্ন হয়ে ঝাড়খণ্ড ও পশ্চিমবঙ্গের মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত হয়ে হুগলি নিদীতে মিশেছে। এই নদের এক পাড়ে বীরভূম জেলা ও ঝাড়খণ্ড রাজ্য অন্য পাড়ে পশ্চিম বর্ধমান জেলা। যার ফলে পশ্চিম বর্ধমান, বীরভূম ও ঝাড়খণ্ডের এই নদ সংলগ্ন বাসিন্দারা সহজে যাতায়াতের জন্য এই নদকেই ব্যবহার করেন। নদী পারাপারের মাধ্যমেই চলে যাতায়াত। আর এই যাতায়াতের জন্য অজয় সংলগ্ন একাধিক জায়গায় ব্যবহার করা অস্থায়ী সেতু। এছাড়াও ডিঙি নৌকার মাধ্যমেও চলে পারাপার। কিন্তু বর্ষায় অজয় ফুলেফেঁপে ওঠায় একদিকে যেমন নৌকা পারাপার বন্ধ হয়ে যায় অন্যদিকে জলের তোড়ে ভেসে যায় অস্থায়ী সেতু। যার জেরে প্রতিবছর বর্ষার সময় চরম বিপাকে পড়তে হয় অজয় সংলগ্ন দুই পারের বাসিন্দাদের।
প্রসঙ্গত পশ্চিম বর্ধমান জেলায় রয়েছে দু’দুটি শিল্প শহর আসানসোল ও দুর্গাপুর। এছাড়াও অজয় সংলগ্ন এই জেলাতে রয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত কয়লা খনিগুলি। যে কারণে প্রতিদিন হাজারো লোক বীরভূম ও ঝাড়খণ্ড থেকে এই জেলায় কাজের সন্ধানে ও জীবিকার জন্যে আসেন। এছাড়াও বীরভূমের প্রান্তিক অঞ্চলের লোকেরা কলকাতা যাওয়ার জন্য আসানসোল দুর্গাপুর কিংবা রানিগঞ্জকেই বেছে নেন যাতায়াতের সুবিধার জন্য। এছাড়া বীরভূমের সদর শহর সিউড়ির খুব কাছেই রানিগঞ্জ দুর্গাপুর আসানসোল শহর। অজয় পেরিয়ে খুব সহজেই পৌঁছে যাওয়া যায় শিল্পাঞ্চলের এই শহরগুলোতে। আর পশ্চিম বর্ধমানের এই শিল্পশহর গুলিতে রয়েছে একাধিক মেডিক্যাল কলেজ, হাসপাতাল ও নার্সিংহোম। ফলে স্বাস্থ্য পরিষেবার জন্য এই এলাকার উপর নির্ভর করে থাকেন বীরভূম জেলার বহু মানুষ। আবার ব্যবসা বানিজ্য জীবিকার জন্যও প্রতিদিন বহু মানুষকে পারাপার করতে হয় অজয় নদ। এছাড়া পশ্চিম বর্ধমান জেলার বহু কৃষকের চাষের জমি রয়েছে নদের অপর প্রান্ত বীরভূমে। আবার বীরভূমের কৃষকরাও নদ পেরিয়ে শিল্প শহরের বাজার গুলিতে আসেন সবজি বিক্রি করতে। কিন্তু বর্ষায় পারাপার বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বিপাকে পড়তে হয় দুই পাড়ের এই সমস্ত হাজার হাজার মানুষকে।
পশ্চিম বর্ধমান জেলার আসানসোলের জামুড়িয়া বিধান সভার হিজলগড়া গ্রাম পঞ্চায়েতের দরবারডাঙা,চুরুলিয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের বীরকুল্টি ও চিঁচুড়িয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের সিদ্ধপুর বাগডিহা অঞ্চলে অজয় নদের ওপর প্রতি বছর অস্থায়ী সেতু নির্মাণ করা হয় সরকারি তরফে। যেমন জামুড়িয়া পঞ্চায়েত সমিতির পক্ষ থেকে দরবারডাঙা ঘাটের টেণ্ডার হয় এবং এই পথের যাত্রী ও যানবাহনের ট্যাক্সও আদায় করা হয়। অথচ স্থায়ী সেতুর দাবি আজও পূরণ হয়নি।
এলাকার বাসিন্দাদের দাবি যখনই নির্বাচন আসে স্থায়ী সেতু গড়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি নিয়ে হাজির হন রাজনৈতিক দলের নেতা নেত্রীরা। ভোট আসে ভোট যায়, নেতা-নেত্রীরাও আসে যান। আর চলতে থাকে যাওয়া আসা ও স্রোতে ভাসার পর্ব, কিন্তু সেতু আর পাকা হয় না।