সংবাদদাতা,আসানসোলঃ– লাগাতার ৬৩ দিন ধরে আন্দোলন চালানোর পর অবশেষে উপাচার্যের অপসারণের খবর আসতেই আবির খেলে মিষ্টি মুখ করে আনন্দ উচ্ছ্বাসে মাতলেন কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলনরত শিক্ষক ও আধিরাকির,শিক্ষাকর্মী কর্মী ও ছাত্র ছাত্রীদের একাংশ। প্রসঙ্গত গতকাল কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে অপসারণের নির্দেশ দেন রাজ্যপাল আনন্দ বোস। রাজ্যপালের সিদ্ধান্তে কার্যত খুশি বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনকারীরা। যদিও রাজ্যপালের এই সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে উচ্চ আদালতে যাওয়ার কথা জানিয়েছেন উপাচার্য সাধন চক্রবর্তী।
উল্লেখ্য গত প্রায় দু মাস ধরে শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীদের সঙ্গে উপাচার্যের সংঘাতের জেরে অচলাবস্থা চলছে বিশ্ববিদ্যালয়ে। গত ১৪ মার্চ থেকে উপাচার্যের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে ও তাঁর পদত্যাগের দাবিতে অনির্দিষ্ট কালের জন্য আন্দোলন শুরু করছিলেন শিক্ষক, শিক্ষাকর্মী, আধিকারিক এবং ছাত্রছাত্রীদের বড় অংশ। ঘটনার সূত্রপাত শিক্ষক ও অশিক্ষক কর্মচারী আধিকারিকদের ডিএ আন্দোলনের সময় কর্মবিরতি পালন করা নিয়ে। উপাচার্য সাধন চক্রবর্তী দাবি করেন রাজ্য সরকারের নির্দেশ অনুযায়ী আন্দোলনের সময় কর্মবিরতি পালন করা শিক্ষক ও অশিক্ষক কর্মচারীদের নোটিশ পাঠানোর জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার চন্দন কোনারের কাছ থেকে একাধিক বার হাজিরার খাতা চেয়েও তিনি পাননি। এরপরই বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রারকে বহিস্কার করেন উপাচার্য। তার পর থেকেই উপাচার্যের অপসারণ ও রেজিস্ট্রারকে পুনর্বহালের দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরেই আন্দোলন শুরু করেন শিক্ষক ও অশিক্ষক কর্মীদের একাংশ। তাদের সঙ্গে যোগ দেন ছাত্র ছাত্রীদেরও একাংশ। পরে অবশ্য হাই কোর্টের নির্দেশে রেজিস্ট্রার চন্দন কোনারকে তাঁর পদে বহাল করা হয়।
আন্দোলনকারীদের অভিযোগ উপাচার্য সাধন চক্রবর্তী নানা দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে নির্মাণ কাজের জন্য বহু মূল্যবান গাছ কেটে বিক্রি করা হলেও তার কোনও হিসাব নেই। বিশ্ববিদ্যালয়ের বহু শিক্ষক-শিক্ষিকা অনিয়মিত হওয়া সত্ত্বেও তাঁদের নিয়মিত বেতন দেওয়া হয়। তাঁদের মধ্যে অনেককে আবার কোনওদিন বিশ্ববিদ্যালয়ে দেখা যায়নি। পাশাপাশি উপাচার্যের বিরুদ্ধে প্রায় ২৬ লক্ষ টাকার আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ তোলেন আন্দোলনকারীরা। আন্দোলন চলাকালীন উপাচার্য সাধন চক্রবর্তী একাধিকবার আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আলোচনায় বসলেও সমাধান সূত্র মেলেনি। বরং উপাচার্যের অপসারণের দাবিতে অনড় থাকেন আন্দোলনকারীরা। এমনকি উপাচার্যকে বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢুকতেও বাধা দেন তারা। শেষমেষ আদালতের দ্বারস্থ হন উপাচার্য সাধন চক্রবর্তী এবং কলকাতা হাই কোর্টের নির্দেশে, পুলিশের সহযোগিতায় নিজের কার্যালয়ে ঢুকতে সমর্থ হন উপাচার্য। কিন্তু এত কিছুর পরও নিজের পদ বাঁচাতে পারলেন না সাধন চক্রবর্তী।
যদিও উপাচার্য এদিন বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের যে আইন রয়েছে, তা না মেনে একতরফা ভাবে এই নির্দেশ দিয়েছেন রাজ্যপাল। বলেছেন, আমি আমার দায়িত্ব পালন করতে পারছি না। কিন্তু এ কথা বলার কোনও ব্যাখ্যা দেননি।’ রাজ্যপালের এই সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে উচ্চ আদালতে যাবেন বলেও জানিয়েছেন তিনি। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের অচলাবস্থা এখনই কাটছে না বলেই মনে করছেন অনেকে।