eaibanglai
Homeএই বাংলায়বার্ণপুরে দামোদরের উপর পাকা সেতুর দাবি দুই জেলার বাসিন্দাদের

বার্ণপুরে দামোদরের উপর পাকা সেতুর দাবি দুই জেলার বাসিন্দাদের

জ্যোতি প্রকাশ মুখার্জ্জী, আসানসোল, পশ্চিম বর্ধমানঃ- কত কাছে, অথচ কত দূরে! ওপাড়ে বাঁকুড়ার শালতোড়া, ছাতনা ও মেজিয়া এবং পুরুলিয়া সাঁতুড়ি ও নিতুরিয়া ব্লকের প্রায় তিন শতাধিক গ্রামের বাসিন্দাদের একাংশ পড়াশোনা, চিকিৎসা ও জীবিকার সন্ধানে ছুটে আসে আসানসোল শিল্পাঞ্চলে। এখানকার বিভিন্ন কলকারখানায় তারা অস্থায়ী শ্রমিকরূপে কাজ করে। এপাড়ের আসানসোল এলাকার বাসিন্দারা বাঁকুড়ার বিহারীনাথ ও শুশুনিয়া এবং পুরুলিয়ার সাঁতুড়ি ব্লকের বড়ন্তি পর্যটন কেন্দ্রের আকর্ষণে ছুটে যায় ওপাড়ে। এছাড়াও রয়েছে বাঁকুড়ার শুশুনিয়ার প্রস্তর শিল্প, বিভিন্ন খনিজ সম্পদ এবং সুলভ কৃষিজ ফসল যা তিন জেলার অর্থনৈতিক মানচিত্রকে আমূল বদলে দিতে পারে। সবমিলিয়ে সরকারের রাজস্বের বৃদ্ধি ঘটতে পারে। কিন্তু বাদ সেজেছে মাঝখান দিয়ে বয়ে চলা দামোদর নদ।

এমনিতে প্রায় সারাবছর দামোদরে জল থাকেনা। কিন্তু বর্ষাকালে অতিরিক্ত বৃষ্টি হলেই নদী ভয়ংকর রূপ ধারণ করে। বিভিন্ন জলাধার থেকে জল ছাড়া হলে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হয়ে ওঠে। স্রোতের আঘাতে দুই পাড়ের মধ্যে সংযোগকারী অস্থায়ী বাঁশ ও কাঠের সেতু প্রায়শই ভেঙে পড়ে। তখন ৫ কিমি. রাস্তাটা ঘুরপথে ৬০ কিমি. হয়ে ওঠে। সময় ও খরচ দুটোই বেড়ে যায়। অথবা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নৌকায় চেপে হাজার হাজার মানুষকে আসতে হয় আসানসোলে। চরম বিপাকে পড়ে সাধারণ মানুষ। সমস্যার স্থায়ী সমাধানের জন্য বার্ণপুরের নেহেরু পার্কের কাছে দামোদরের উপর একটি পাকা সেতুর প্রয়োজন। দাবি পূরণের জন্য দুই পাড়ের বাসিন্দাদের নিয়ে গড়ে উঠেছে ‘দামোদর বিহারীনাথ সেতু বন্ধন কমিটি’। শুরু হয় তীব্র আন্দোলন, অবস্থান। ২০০৮ সালের ১৮ ই মার্চ তৎকালীন কেন্দ্রীয় ইস্পাত মন্ত্রী রামবিলাস পাসোয়ান দামোদরের উপর প্রস্তাবিত ৭২০ মিটার কংক্রিটের সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। খরচ ধরা হয়েছিল ৫০ কোটি টাকা এবং সেটা নাকি মঞ্জুরও করা হয়েছিল। কিন্তু সেই সেতু আজও গড়ে ওঠেনি। মঞ্জুর করা অর্থের কী পরিণতি হয়েছিল সেটাও জানা যায়নি। যদিও অনেকের দাবি সামনে পঞ্চায়েত নির্বাচন থাকায় দুই পাড়ের বাম সাংসদরা নাকি কেন্দ্রীয় মন্ত্রীকে দিয়ে সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করিয়েছিলেন! যাইহোক পাকা সেতুর দাবিতে ইতিমধ্যে ‘দামোদর বিহারীনাথ সেতু বন্ধন কমিটি’ দুই পাড়ের বাসিন্দাদের গণস্বাক্ষর শুরু করেছেন। দুই পাড়ের জেলা প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিদের হাতে তুলে দিয়েছেন স্মারকলিপি। তাদের দাবি বিষয়টি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর কানেও তোলা হয়েছে। রাজ্যের মন্ত্রী মলয় ঘটক ও আসানসোলের বর্তমান সাংসদ শত্রুঘ্ন সিনহা বিষয়টি নিয়ে উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের কাছে তদ্বিরের আশ্বাস দিয়েছেন। এক্স হ্যাণ্ডেলে ট্যুইটের মাধ্যমে রাজ্যসরকারের তীব্র সমালোচনা করে নিজের দায়িত্ব এড়িয়ে গেছেন আসানসোল দক্ষিণের বিধায়িকা অগ্নিমিত্রা পাল। যদিও শোনা যাচ্ছে পাকা সেতু সংক্রান্ত বিষয়ে সম্প্রতি তার সঙ্গে রাজ্যের মন্ত্রী মলয় ঘটকের অর্থবহ আলোচনা হয়েছে। সম্প্রতি দুটি জলাধার থেকে বিপুল পরিমাণ জল ছেড়ে দেওয়ায় জলের স্রোতে অস্থায়ী সেতুটি ভেঙে গেছে। এরফলে চরম বিপাকে পড়েছেন বাঁকুড়া পাড়ের বাসিন্দারা। ওদের জীবিকার কথা ভেবে আতঙ্কিত হয়ে উঠেছেন বার্ণপুরের আদিবাসী দম্পতি। উভয় জেলার বাসিন্দাদের বক্তব্য, আমরা খেটে খাওয়া মানুষ রাজনীতি বুঝিনা। আমরা চাই দলমত নির্বিশেষে সমস্ত স্তরের জনপ্রতিনিধিরা যৌথভাবে এগিয়ে আসুক এবং পাকা সেতুর দাবিতে উভয় সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করুক। ঘাটাল নদী প্রকল্পের কাজ শুরু হলে কেন এখানে পাকা সেতু হবেনা? সেতু বন্ধন কমিটির পক্ষ থেকে চন্দন মিশ্র বললেন- আমরা ইতিমধ্যে পাকা সেতুর দাবিতে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছি। আশাকরি উভয় সরকার এলাকার মানুষের স্বার্থে পাকা সেতু তৈরির বিষয়ে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments