সন্তোষ কুমার মণ্ডল,আসানসোলঃ– তৃণমূল জেলা সভাপতিকে নিয়ে ফেসবুক লাইফে বিতর্কিত মন্তব্য করে ২৪ ঘন্টার মধ্যেই মত বদল করলেন তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্য সম্পাদক ভি শিবদাশন দাশু। গত সোমবার নিজের ফেসবুক পেজ থেকে লাইভ করে নাম না করে তৃণমূল জেলা সভাপতি নরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীকে নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করেন তিনি। যা থেকে বোঝা যায় জেলা সভাপতির প্রতি তিনি রীতিমতো ক্ষুব্ধ। যা নিয়ে রীতিমতো শোরগোল পড়ে যায় শাসক দলের অন্দরেই। তৃণমূল কর্মীরা সোশাল মিডিয়ায় দাশুর বিরুদ্ধে বিরুপ মন্তব্য করতে শুরু করেন। দলের অন্দরের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব নিয়ে শুরু হয়ে যায় জল্পনা। যদিও পরে ফেসবুকের ওই বিতর্কিত লাইভ ডিলিট করে দেন তিনি।
সোমবার ফেসবুক লাইভে তাঁকে বলতে শোনা যায় , “পাণ্ডবেশ্বর বিধানসভায় ২০১৬-তে যখন জিতেন্দ্র তিওয়ারি তৃণমূল বিধায়ক হন, তখন জয়ে ১ লক্ষ ভোটের ব্যবধান ছিল ৷ কিন্তু, ২০২১ সালে বিধানসভা নির্বাচনে জয়ের ব্যবধান ৪০ হাজার পেরোয়নি তৃণমূল ৷ সেই বিধায়ক বড়-বড় কথা বলছেন এখন মিটিংয়ে ৷ তিনিই আবার জেলা সভাপতি ৷ জেলায় বিজেপিকে সব বিষয়ে হাইলাইট করে দিচ্ছেন উনি ৷ আমরা বুঝতে পারছি না, উনি কী চাইছেন ! আসলে এই সমস্ত নেতারা বিজেপির দালাল ৷ এদের এজেন্টরা তলায়-তলায় শুভেন্দু অধিকারীর সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে ৷ এরা যখন-তখন বিজেপিতে যোগ দিতে পারে ৷”
পরে মঙ্গলবার সাংবাদিক বৈঠকে তাঁর মুখেই শোনা গেল সেই নরেন্দ্রনাথেরই স্তুতি। তিনি বলেন, ” নরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী বয়স এবং রাজনৈতিক অভিজ্ঞতায় আমার চেয়ে ছোট। কিন্তু যেহেতু তিনি জেলা সভাপতি, তাই দল তাঁর নেতৃত্বেই চলবে। নরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী দলেরজেলা সভাপতি হওয়ার যোগ্য়। তাঁর সেই ক্ষমতা আছে। তিনি তৃণমূল স্তরেও অনেক রাজনীতি করেছেন। বামপন্থীরা যখন এখানে শাসন করত, তখন থেকেই তিনি দলের সাথে আছেন। বামপন্থীদের শাসনকালে যখন নরেন্দ্র নাথ চক্রবর্তীর উপর আক্রমণ করা হয়েছিল, তখন আমি খবর পেয়ে রাত দুটোতেও তাঁকে সাহায্য করতে যেতাম। কারণ নরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী তৃণমূলের একজন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ নেতা। তিনি দলের জন্য অনেক সংগ্রামও করেছেন। যখন আমি দলের জেলা সভাপতি ছিলাম , তখন নরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীকে ব্লক সভাপতি হিসেবে নিয়োগপত্র দিয়েছিলাম। তাই আমি কখনও এমন কিছু করবো না যাতে নরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর কোনও সমস্যা হয়। তবে তৃণমূলের একজন সিনিয়র নেতা হিসেবে, যদি আমি মনে করি যে কোথাও উন্নতির সুযোগ আছে বা কিছু ঠিক মতো হচ্ছে না, তাহলে অবশ্যই দল এবং দলের সভাপতির দৃষ্টি আকর্ষণ করার চেষ্টা করবো। তাই আমরা বক্তব্যকে দলের অভ্যন্তরীণ গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব হিসেবে বিবেচনা করা উচিত নয়।” পাল্টা সংবাদমাধ্যমের বিরুদ্ধেই নেতিবাচক প্রচারের অভিযোগ তোলেন তিনি ৷
পাশাপাশি তিনি দাবি করেন, জেলায় দল ঐক্যবদ্ধ এবং ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে জেলার ৯টি আসনই তৃণমূল কংগ্রেসের দখলে যাবে।
ফেসবুক লাইভ করা, পরে তা ডিলিট করা ও সাংবাদিক সম্মেলনে করা কি, দলের রাজ্য নেতৃত্বর চাপে? সাংবাদিকদের এই প্রশ্নের উত্তর অবশ্য দেননি তৃণমূলের রাজ্য সম্পাদক। বরং তিনি বলেন, “আমার মন্তব্য করা নিয়ে যদি, রাজ্য নেতৃত্ব জবাবদিহি চায়, তাহলে তাদেরকে দেবো।”





